১। প্রায় ৫,০০০ বছর আগেও বাহরাইন একটি বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। সবসময়ই দেশটি শক্তিশালী প্রতিবেশীদের অধীনস্থ ছিল। ১৭শ শতকে এটি ইরানের দখলে আসে। ১৭৮৩ সালে মধ্য সৌদী আরবের আল-খলিফা পরিবার নিজেদেরকে বাহরাইনের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং তখন থেকে তারাই দেশটিকে শাসন করে আসছে। ১৯শ শতকের কিছু সন্ধিচুক্তির ফলে যুক্তরাজ্য দেশটির প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব পায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত বাহরাইনে ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এদের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। যা আজও অব্যাহত।
২। ৭৭৮.৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ১৭৪ তম দেশ। মালদ্বীপ ও সিঙ্গাপুরের পরে এটি এশিয়ার তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ।
৩। আরবি ভাষা বাহরাইনের সরকারি ভাষা। তবে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য এবং পর্যটন শিল্পে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪। দেশটির প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। একইসাথে খ্রিস্টান ধর্মের ১৫ শতাংশ এবং হিন্দু ধর্মের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষের বাস এদেশে।
৫। মানামা বাহরাইনের রাজধানী ও প্রধান শহর। শহরটি দেশটির সবচেয়ে বড় দ্বীপ বাহরাইনে অবস্থিত। এটি দেশটির সর্বাপেক্ষা জনবহুল শহর, এখানে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের বাস।
ইসলামিক ইতিহাসে ১৩৪৫ সালের দিকে প্রথম মানামার উল্লেখ পাওয়া যায়। পর্তুগিজরা ১৫২১ সালে এটি দখল করে এবং পরে পারসিকরা এটি ১৬০২ সালে জয় করে। ১৭৮৩ সাল হতে অল্প কিছু সময় ছাড়া শহরটি আল-খলিফাহ্ রাজবংশ এর অধিকারে রয়েছে। মানামাকে ১৯৫৮ সালে একটি মুক্ত বন্দর হিসাবে ঘোষণা করা হয় এবং ১৯৭১ সালে এটি বাহরাইনের রাজধানী হিসাবে ঘোষিত হয়।
৬। সাংবিধানিকভাবে রাজতান্ত্রিক এই দেশে নির্বাচিত পরিষদ রয়েছে। তবে ইদানিং সুন্নিপ্রধান সরকারের কাছ থেকে আরো ক্ষমতা দাবি করতে শুরু করেছে সংখ্যাগুরু শিয়ারা। অর্থাৎ শিয়া-সুন্নি বিরোধও রয়েছে দেশটিতে। ২০১১ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে সরকার তা শক্ত হাতে দমন করে।
৭। দেশটিতে বাদশাহই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতেও বাদশাহর কাছের লোকজনকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
৮। বাহরাইনের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি সেখানেই জন্ম-নেওয়া। এছাড়া বাহরাইনে শিয়া মুসলিমদের সংখ্যা সুন্নী মুসলিমদের প্রায় দ্বিগুণ। তবে সংখ্যালঘু সুন্নীরাই বাহরাইনের সরকার নিয়ন্ত্রণ করেন।
৯। বাহরাইন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শহরের তথা দেশের প্রধান ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
১০। প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য, বাহরাইন এবং সৌদি আরবের মধ্যে ১৯৮১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কিং ফাহাদ কজওয়ে নির্মাণ শুরু করার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১১। ২০০৪ সালে বাহরাইন সবচেয়ে দীর্ঘ পতাকা তৈরি করে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তুলেছিল। পতাকাটির দৈর্ঘ্য ছিল ১৬৯.৫ মিটার এবং প্রস্থ ৯৭.১ মিটার।
১২। এই দেশেই বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম একটি মসজিদ অবস্থিত। আল-ফাতেহ মসজিদ, যা ৫০০ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে বিসৃত। একইসাথে মসজিদটি ২০০৬ সালে বাহরাইনের জাতীয় গ্রন্থাগারেও পরিণত হয়। এখানে প্রায় ৭০০০ এরও বেশি বই রয়েছে।
১৩। দেশটির শুধুমাত্র ১% ভূমি চাষযোগ্য হওয়ায় তারা প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেরা উৎপাদনে অক্ষম। এক্ষেত্রে তারা আমদানির উপর নির্ভর করে।
১৪। দেশটিতে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করা বাধ্যতামূলক। দেশটির স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য পড়ালেখা একদম ফ্রি।
১৫। বাহরাইনের অর্থনীতি প্রধানত পেট্টোলিয়াম উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও রিফাইনিং এর উপর নির্ভরশীল। এই খাত ৬০% রপ্তানিতে ও ৩০% জিডিপিতে অবদান রাখে। এদেশের শ্রমবাজারের ৫ ভাগের ৩ ভাগ দখল করে আছে বিদেশি শ্রমিকেরা। যোগাযোগব্যবস্থা ভাল হওয়ায় পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এখানে সদরদপ্তর স্থাপন করেছে। পর্যটন খাতও অনেক উন্নতি সাধন করেছে। এই খাতটি জিডিপিতে প্রায় ৯% অবদান রাখছে।
১৬। বাহরাইনের সরকারী মুদ্রা বাহরাইনি দিনার। ১ বাহরাইনি দিনার সমান প্রায় বাংলাদেশী টাকা।
১৭। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ২৭ হাজার মার্কিন ডলার।
১৮। বাহরাইনের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৯৭৩।