সপ্তাহ খানেক আগে ফেসবুকে একটা বইয়ের লিষ্ট দেখেছিলাম। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবাবা এই গ্রীস্মে কী কী বই পড়বেন তার লিষ্ট। বারাক ওবামা বলে কথা! তিনি কী কী বই পড়বেন তাতো খুবই গুরুত্বপুর্ন বিষয়। আমি ওনার একজন গুনগ্রাহী। ফ্যান! বোঝেনই তো। একজন মানুষ যখন বিখ্যাত হয়ে যায় তখন তিনি সুঁচু করার জন্য কোন ব্রান্ডের বদনা ব্যবহার করেন ফ্যানরা তার দিকেও নজর রাখেন। যদিও বারাক ওবামা সুঁচু করার জন্য বদনা ব্যবহার করেন না টিসু পেপার ব্যাহার করেন তা আমার জানা নাই। ধারনা করি তিনি টিসু পেপার ব্যবহার করেন। কারন হাগু করার পর আমরা বাঙ্গালীরাই মনে হয় পানি ব্যবহার করি। কারন বিষয়টা যতটানা ধর্মীয় তার চেয়ে বেশী হল কালচারাল। যাক আসল কথায় আসি।
বারাক ওবাবামার বইয়ের লিষ্টের দিকে একটু নজর দিলাম। সেখানে দশটা বইয়ের নাম ও নামের সাথে বইয়ের লেখকের নাম দেয়া আছে। বইগুলোর বেশীরভাগ মনে হল একদুই বছরের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তো দেখতে দেখতে একটা বইয়ের লেখকের নামের প্রতি চোখ আটকে গেল। লেখকের নাম রুমান আলম। বইয়ের নাম “লিভ দ্য ওয়ার্ল্ড বিহাইন্ড”। আগে কখনো এ লেখকের নাম আমি শুনি নাই। অন্য নয়জনর নাম যে শুনেছি তাও না। কারন সাহিত্যের বই-পুস্তক আমার তেমন একটা পড়া হয়না। অন্য বইও যে খুব পড়ি সে দাবীও করছিনা। যাইহোক, লেখকের প্রতি একটু জানার আগ্রহ জাগল। মনে হল লেখক বাংলাদেশী হবে হয়ত। আমি গুগল করে দেখলাম। বই ও লেখক সম্পর্কে কিছু জানা যায় কীনা? হ্যাঁ, ধারণা সত্য। বইটি ইতো:মধ্যে বেশ নাম কামিয়েছে। অনেকে রিভিউ লিখেছেন। নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান, নিউইর্য়কার এসব নামীদামী পত্রিকায় রিভিউগুলো ছাপাও হয়েছে। লেখক রুমান আলম এর আগে আরো দুটি উপন্যাস লিখেছেন। “রিচ এন্ড প্রিটি” ও “দ্যাট কাইন্ড অব মাদার”। তা ছাড়াও তিনি ওয়াল ষ্ট্রিট জার্নাল, নিউ ইয়র্ক টাইমস, নিউ ইয়র্কার এ নিয়মিত লেখেন। তথ্য সংগ্রহ করে মনে হল, লেখকের বায়োডাটা বেশ ষ্ট্রং। তার ওপর তিনি বাংলাদেশী আমেরিকান। ওনার বাবামা সত্তর এর দশকে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় আসেন। বাবা ইন্জিনিয়ার আর মা ডাক্তার। লেখকের ব্যাকগ্রাউন্ডটা আরো বেশী করে টানল। একজন ইমিগ্রান্ট একটা উপন্যাস লিখেছেন হয়ত সেটার পয়েন্ট অব ভিউ একটু ভিন্ন হবে। তাছাড়াও এতবড় একজন বিদ্বান মানুষ তাও আবার দেশী। তার বইটা তো পড়তেই হয়। আমাজনে কিন্ডলে ১৮ ডলার দিয়ে কিনে ফেললাম।
পড়তে লাগলাম। গতকাল পড়া শেষ করলাম। অনেক কঠিন কঠিন ইংরজি শব্দ ব্যবহারও করেছেন। তারপরেও কষ্ট করে পড়লাম। একটু থ্রিলার জাতীয় উপন্যাস। যদিও তিনি চমৎকার মেসেজ দিয়েছেন গল্পের মধ্যে। গল্পটা এরকম: একটি হোয়াইট পরিবার লং আইল্যান্ডে ভ্যাকেশন কাটাতে যায়। তাদের সাথে থাকে তাদের টিনএজড ছেলে ও মেয়ে। এয়ারবিএনবি এর মাধ্যমে একটা নিরিবিলি বাড়ি ভাড়া নেন এক সপ্তাহের জন্য। দুদিন সেখানে কাটানোর পর রাতে একটি ঘটনা ঘটে। বাড়ির মালিক যারা দুজনই আফ্রিকান আমেরিকান হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ে।
তখন থেকে ক্লাইমেক্স শুরু হয়। আমান্দা হোয়াইট মহিলা বিশ্বাসই করতে চান না যে, একজন ব্লাক কাপলের এরকম একটি সুন্দর সিমসাম বাড়ি থাকতে পারে। নিউইর্য়ক শহরে ব্লাক আউট হয়েছে, সেজন্য তারা নিজেদের ফ্লাটে যেতে পারেন নি। চলে এসেছেন লং আইল্যান্ডের বাড়িতে। সেখানে নিজের বাড়িতে থাকতে। নিজের বাড়িতে তারা অতিথি কারন এটি ভাড়া দেয়া হয়েছে এক সপ্তাহের জন্য। তারপর ঘটতে থাকে নানান ঘটনা। ভ্যাকেশনে থাকা সাদা দম্পতির ছেলের দাঁত পড়ে যেতে থাকে, কন্যা হারিয়ে যায়। মহা বিপদ। কালো মানুষ দুটি তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। যদিও আমান্দা কালো মানুষদের পছন্দ করেনা। এভাবে গল্প চলতে থাকে।
আমেরিকায় ক্লাইমেট চেন্জ এর প্রভাব, প্রযুক্তির ওপর অতিনির্ভরতা, মানুষের তৈরী দুর্যোগের ভয়াবহতা, রেসিজম এগুলো তার উপন্যাসের মুল উপজীব্য। গল্পটা ভালো কিন্তুু খুব বেশী ডিটেইলড্। ২৪৪পৃষ্টার বই আসলে দেড়শো পুষ্টার হলেই ভালো হত। ছোট বিষয়ের ওপর বর্ননার অতিরন্জন মাঝে মাঝে বিরক্তির উদ্রেকও করেছে।
তবে গতানুগতিক লেখার বাইরে এসে রুমান আলম উপন্যাসটি লিখেছেন। লেখার ষ্টাইলটা ভিন্ন ও আকর্ষনীয় মনে হয়েছে। লেখককে ধন্যবাদ সুন্দর একটি বিষয় চমৎকারভাবে উপস্থাপনের জন্য। তার এ উপন্যাসের ওপর নেটফ্লিক্স মুভি নির্মান করবে। হলিউডের দুজন বিখ্যাত অভিনেত্রী ও অভিনেতা সিলেক্টও হয়ে গেছে। ওনার উপন্যাসের সিনেমা খুব শিঘ্রই আমরা দেখতে পাবো। আরো একটি কথা,বাংলাদেশীদের কাছে উনি তেমন একটা জনপ্রিয় নন মনে হল। যদিও উনি নিউইয়র্কেই বসবাস করেন। ওনার লৈঙ্গিক পরিচয় একটু ভিন্ন রকমের। উনি গে। স্বামী ও দুটি সন্তান আছে।
আমার মনে হয়, ওনার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের বাইরে গিয়ে ওনাকে বিচার করতে হবে। একজন মানুষের মেধা, প্রজ্ঞা ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধই আসল কথা। শুভ কামনা রইল রুমান আলম এর প্রতি।
গোলাম মোস্তফা আকন্দ
টরন্টো, কানাডা