শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ অপরাহ্ন

বারবার ব্যর্থ হয়ে এখন ফ্রিল্যান্সার আমজাদ হোসেনের মাসিক আয় দুই লাখ টাকা

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

ময়মনসিংহের ছেলে কাজী আমজাদ হোসেন। বাবা সাবেক সেনা কর্মকর্তা কাজী আবদুল গনী। ২০১১ সালে অগ্রজপ্রতিম স্থানীয় একজনের কাছে ডিজিটাল বিপণনের প্রাথমিক কিছু বিষয় শিখেছিলেন। আজ তাঁর নিজের গড়া প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় হাজারের বেশি। তাঁদের অধিকাংশকেই তিনি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন বিনা মূল্যে। নিজে মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করেন। পাশাপাশি ঢাকার আজিমপুরের তরুণদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে দক্ষ করে তোলার চেষ্টা করেন। আমজাদের মাসিক আয় এখন দুই লাখ টাকা।

শুরুর দিকে আমজাদ হোসেনের পথচলা মোটেও সুখকর ছিল না। ডিজিটাল বিপণনের প্রাথমিক যে কাজগুলো শিখেছিলেন, সেগুলো ফ্রিল্যান্সিং করে টিকে থাকার মতো ছিল না। তাই আমজাদ হোসেন ২০১৩ সালে ঢাকায় চলে আসেন। আরও ভালোভাবে কাজ শেখার জন্য ফার্মগেটের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠান তেমন কিছু শেখায়নি। একরকম আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর অবস্থা হয়েছিল ঘর পোড়া গরুর মতো। বাংলাদেশের আর কোথাও কাজ শিখতে পারবেন, ভাবতে পারছিলেন না। কাজ শিখলেও কোনো লাভ হবে না—এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল। আত্মবিশ্বাসও প্রায় তলানিতে ঠেকে গিয়েছিল।

পরে আমজাদ হোসেন ঠিক করেন, এভাবে আর নয়। ফ্রিল্যান্সিং-সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি না হয়ে একাই যা করার করবেন। ইংরেজি ভাষা শেখার জন্য ভর্তি হন আজিমপুরের একটি প্রতিষ্ঠানে। তাঁর ধারণা হয়, ইংরেজিতে কথা বলতে না পারলে তিনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন না।

ইংরেজি ভাষা শেখার কোর্স সম্পন্ন করে ২০১৩ সালে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সারদের কাজ দেওয়া–নেওয়ার ওয়েবসাইট (মার্কেটপ্লেস) আপওয়ার্কে নিজের অ্যাকাউন্ট খোলেন। কাজ পাওয়ার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয় আমজাদ হোসেনকে। পাশাপাশি ইউটিউব ও গুগল ঘেঁটে কয়েকটি প্রকল্প সম্পন্ন করেন এবং দক্ষতা বাড়াতে থাকেন।
২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ একদিন ছোট একটি কাজ পেয়ে যান। ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে কাজ শুরু করেন। আমজাদ হোসেনের ফ্রিল্যান্সিং পেশার শুরু মূলত তখন থেকেই। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা ও ডিজিটাল বিপণনে দক্ষতা বাড়ানোর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। এরপর টানা দুই বছর মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন।

আমজাদ হোসেন
আমজাদ হোসেনখালেদ সরকার

২০১৫ সালে আমজাদ হোসেন ওয়েব ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। কোর্স শেষে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে জার্মানির বার্লিন বাইটস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ‘ঘরে বসে’ চাকরি শুরু করেন তিনি।

২০১৭ সালে এসে আমজাদ হোসেন আবার যাত্রাপথ পাল্টান। প্রতিষ্ঠা করেন অ্যান আইটি একাডেমি নামে একটি ডিজিটাল বিপণন ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি। একই সঙ্গে পড়াশোনাও চালিয়ে যান। ২০১৮ সালে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকায় এসে বারবার ব্যর্থ হওয়া আমজাদ হোসেনের মাসিক আয় এখন দুই লাখ টাকা। নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন আরও ২৫ জন তরুণ ফ্রিল্যান্সার।

আমজাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অ্যান আইটি একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি ছেলেমেয়ে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সার ও ডিজিটাল উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। দেশের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখতে পারছি, এটিই আমার জন্য গর্বের বিষয়।’

আমজাদ আরও বলেন, ‘আমাকে অনেকে আজিমপুরের ফ্রিল্যান্সার মাস্টার বলেন। কারণ, আজিমপুরের ছেলেমেয়েদের দক্ষ করে তুলছি। অনেকের শেখার আগ্রহ ছিল; কিন্তু টাকা ছিল না, তাঁদের বিনা মূল্যে শিখিয়েছি। আবার অনেকে নামমাত্র টাকা দিয়েও শিখেছেন। অনেকে ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তা হয়েছেন। নিজেদের পরিবারে সহযোগিতা করছেন। সামনে আমি সারা বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে চাই। অনলাইনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করছি।’

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com