শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন

বাতিল বিমানের অংশের নানা ব্যবহার

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষার তাগিদে নানা বস্তু পুনর্ব্যবহারের উদ্যোগ চলছে। বাতিল করা বিমানের রিসাইক্লিংও শুরু হয়েছে। শুধু যন্ত্রাংশই নয়, গোটা কেবিনে রদবদল করে অন্যভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন আয়ারল্যান্ডের দুই ব্যক্তি।

আয়ারল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে প্রবল ঝোড়ো বাতাস বিরল নয়। মুহূর্তের মধ্যেই রোদ সরিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। সেখানে ঢেউ দেখতে হলে গরম জামাকাপড় সাথে রাখতে হবে। বাতিল এক বিমানের অংশের মধ্যেও আশ্রয় নেয়ার সুযোগ রয়েছে। স্যান্ডহাউস হোটেলের ম্যানেজার পল ডাইভার বলেন, ‘অতিথিরা খুব পছন্দ করে। এটির ওপর আরাম করে বসে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে তারা মানুষের সার্ফিং, সাঁতার কাটা দেখতে ভালোবাসে।’

আয়ারল্যান্ডের ডনিগালের স্যান্ডহাউস হোটেলে গত বছর থেকে দু-দুটি পরিত্যক্ত বিমানের কেবিন শোভা পাচ্ছে। পল ডাইভার বলেন, ‘সমুদ্রের ধারে সব কিছুতেই মর্চে পড়ে যায়। জানালা, দরজা, শোবার ঘর- কিছুই রেহাই পায় না। এখন পর্যন্ত এগুলো ভালোই কাজে লাগছে। রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন নেই, মর্চেও ধরছে না। ভালোই বিনিয়োগ করা হয়েছে।’

সারাবিশ্বেই তথাকথিত বিমানের লকবরখানা ছড়িয়ে রয়েছে। যেমন স্পেনের তেরুয়েল এ কারণে বিখ্যাত। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংগঠনের হিসেব অনুযায়ী সেখানে বছরে প্রায় ৭০০ বাতিল বিমান পাঠানো হয়। ওই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে যত সম্ভব যন্ত্রাংশ পুনর্ব্যবহারের গুরুত্ব বাড়ছে।

তথাকথিত এয়ারোপড্স নামের কনসেপ্টের পেছনে শেন টর্নটন ও কেভিন রেগান রয়েছেন। দু’বছর আগে তাদের মাথায় এ আইডিয়া এসেছিল। ইতোমধ্যে তারা ৩০টিরও বেশি বিমানের অংশ বাগানের ঘর, মোবাইল অফিস ও ছুটি কাটানোর জায়গায় রূপান্তরিত করেছেন। আকার-আয়তন ও সরঞ্জাম অনুযায়ী কোনো এয়ারোপডের মূল্য ২০ থেকে ৪৫ হাজার ইউরো হতে পারে।

কেভিন রেগান বলেন, ‘আমরা শেষ ফ্লাইটে সেগুলো কিনে নেই। আমরা ফিউসিলেজ কিনে নিয়েছি। ল্যান্ডিংয়ের পরেই একটা অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। বিমানের বাকি সব কিছু রিসাইকেল করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে নতুন করে ব্যবহারের যোগ্য করা হয়। তার মধ্যে কয়েকটি আবার বিমানে কাজে লাগানো হয়। আমরা বিমানের প্রায় ৮০ শতাংশ ব্যবহার করছি।’

দেয়াল ও মেঝের ইনসুলেশন আরো মজবুত করতে হয়, বিমানের বডির মধ্যে নতুন করে কেবেল বসাতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী বাথরুম ও রান্নাঘর যোগ করা হয়। দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ছোট একটা বাড়ি তৈরি হয়ে যায়।

কেভিন রেগান মনে করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল বাড়িঘরের চল থাকলেও সেখানে ছোট বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। মানুষ এখন বুঝছে যে আগের মতো আর বিশাল ভবন তৈরি করা যাবে না। এমন বাড়িঘর গরম রাখাও সম্ভব নয়।’

স্যান্ডহাউস হোটেলের ম্যানেজার পল ডাইভার বলেন, ‘এখানে বিশাল কাঠামো গড়ার পরিকল্পনার অনুমতি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই এগুলো আদর্শ সমাধানসূত্র। শীতকালে বা সবচেয়ে বড় ঝড়ের মাঝেও এখানে কিছুই শোনা যায় না, টের পাওয়া যায় না।’

পড যত ছোট হবে, সেটি সহজে পরিবহন করা যাবে ও বিভিন্ন জায়গায় কাজে লাগানোর সুবিধা থাকবে। যেমন বাণিজ্য মেলায় পণ্য প্রদর্শনের জন্য এমন সমাধানসূত্র অনেক কোম্পানির জন্য আকর্ষণীয়। কোম্পানির দুই প্রতিষ্ঠাতা ব্যবসায় পেশাদারিত্ব আনতে চান। সম্প্রতি তারা এক স্থপতিকে নিয়োগ করেছেন।

এয়ারোপড্স কোম্পানির কেভিন রেগান বলেন, ‘করপোরেট বাজারে অনেক আগ্রহ লক্ষ্য করছি। আমাদের সব নতুন ডিজাইনের জন্য একজনকে নিয়োগ করেছি। করপোরেট, অফিস বা বাণিজ্যমেলার জন্য এমন ডিজাইন করা হচ্ছে।’

আয়ারল্যান্ডের এই দুই মানুষ ইউরোপ মহাদেশেও ব্যবসা বিস্তার করার স্বপ্ন দেখছেন। কারণ সেখানেও ঘর গরম রাখার ব্যয় অত্যন্ত বেশি এবং অনেক জায়গায় রুক্ষ সমুদ্রও আছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com