মেঘনা মোহনায় বঙ্গোপসাগরের মাঝ বরাবর সন্দ্বীপ। চট্টগ্রামের এই দ্বীপের অনেক কিছু নদীগর্ভে হারিয়ে গেলেও এখনো বেশ সমৃদ্ধির পসরা সাজিয়েছে এটি। গুপ্তছড়া ঘাটে এলে চোখে পড়বে বিশাল দুটি জেটি, যা রাতের বেলা আলোকস্তম্ভের আলোয় ঝলমল করে।
জেটির পাশে ম্যানগ্রোভের দৃষ্টিনন্দন বেষ্টনী, দৃষ্টি জুড়ে সবুজ আর সবুজ। চোখে পড়বে ইসলাম সাহেবের বিশাল খামার বাড়ি, পশ্চিমে ব্লক বেড়িবাঁধের নান্দনিকতা। উত্তরে দেখা যাবে ২০০ বছরের পুরানো গোলাম খালেক চৌধুরী জমিদার বাড়ি। বিশাল সবুজ চর, যেখানে দেখা মিলবে ভেড়া ও মহিষের পাল সঙ্গে পাখি। মনে হবে পাখিরাও যেন জেলেদের সঙ্গে পালা দিয়ে মাছ শিকার করে। চর জুড়ে দলবেঁধে পাখিদের ওড়াউড়ি সঙ্গে সবুজের সমারোহ। দ্বীপের দক্ষিণে আছে শুকনো দিঘি, ৮০ বছরের পুরনো পুলিন গুহের জমিদার বাড়ি। রয়েছে বড় বড় মাঠ। সাঁতার কাটা যাবে দ্বীপের স্বচ্ছ পানির পুকুরে।
রাতে তাঁবু টাঙিয়ে থাকার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান পশ্চিমে হরিশপুর আর রহমতপুর এলাকা। সারি সারি নারকেলগাছ দিয়ে আচ্ছাদিত মেঘনা নদীর পাড়, যেখানে দারুণ সুন্দর সৈকত। বেড়িবাঁধ থেকে নামলে চোখে পড়বে মায়াবী আকাশ। কানে ভেসে আসবে সমুদ্রের গর্জন। সৈকতে যাওয়ার আগে সারি সারি নারিকেলগাছের মাঝে ঘাসের বিছানা আর ঝিরিঝিরি বাতাস। সবুজের মাঝে ছোট ছোট খাদ। সাগরের জলে পা ভেজানো দর্শনার্থীদের কোলাহল। দলবল নিয়ে কেউ ফুটবল খেলছে, কেউ গা ভেজাচ্ছে, অনেকেই আবার ব্যস্ত ছবি তুলতে।
পর্যটকদের তাঁবুতে রান্নার আয়োজন, কেউবা গাছের সঙ্গে টাঙানো হ্যামকে দোল খাচ্ছে। দেখা যাবে নৌকা ও ট্রলার তৈরির দৃশ্য। পড়ন্ত বিকালে সূর্যাস্ত আর রাতে পূর্ণিমা দেখা। সৈকতের এক পাশেই বয়ে গেছে খাল। সেই খালে নৌকা নিয়ে গোধূলিবেলায় ভাটার অপেক্ষায় মাঝি। সমুদ্রের জলে সূর্যের রক্তিম আভা। জল আর আকাশ মিলেছে সোনালি রঙের ক্যানভাসে।
দ্বীপ হলেও সমস্ত খাবার পাওয়া যায় এখানে—সামুদ্রিক মাছ, মাংস থেকে শুরু করে গরু-মহিষের দুধ, দই। শীতের মৌসুমে সবচেয়ে সুস্বাদু খেজুরের রসের পায়েস। এছাড়া দ্বীপের বিখ্যাত বিনয় সাহার মিষ্টি তো আছেই, যেটার খ্যাতি দেশ-বিদেশ সর্বত্র।
নিঝুম দ্বীপের মতো হরিণের অভয়ারণ্য করা যেতে পারে এখানে। ১৯৭৮ সালে বন বিভাগ নিঝুম দ্বীপে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে, পরবর্তী সময়ে যার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কয়েক হাজারে। সন্দ্বীপের পূর্ব পাশে যে ঘন কেওরা বন আছে, শীতের সময় এখানে লাখ লাখ অতিথি পাখি এসে আশ্রয় নেয়। এ গহীন বনে কয়েকটি হরিণের ছানা ও বানরের বাচ্চা ছেড়ে দিলে কয়েক বছরে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যে পরিণত হবে।