১। বাংলাদেশ অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিলো প্রায় ৪ হাজার বছর পূর্বে। ধারণা করা হয় দ্রাবিড় ও তিব্বতীয়-বর্মী জনগোষ্ঠী এখানে সেসময় বসতি স্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে এই অঞ্চলটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয় এবং স্থানীয় ও বিদেশী শাসকদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে।
বাংলায় ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটে পঞ্চদশ শতকের শেষভাগ থেকে। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে নেয়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ধর্ম গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বাংলা প্রদেশটিকে ভাগ করা হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশভুক্ত হয়; অন্যদিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অংশভুক্ত হয়। তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গের নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান করা হয়।
এরপরে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে একটি জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। মিত্রবাহিনী প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা’র কাছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজী ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পন করেন। অর্থাৎ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে।
২। এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বসবাস। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের ৯২ তম দেশ। এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ।
৩। দেশটির সরকারী ভাষা হচ্ছে বাংলা। তবে আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে ইংরেজির ব্যবহারও লক্ষণীয়।
৪। বাংলাদেশের প্রধান ধর্ম ইসলাম। এ দেশের প্রায় ৮৬% শতাংশ মানুষের ধর্ম ইসলাম।
৫। বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর এবং রাজধানী হচ্ছে ঢাকা। প্রশাসনিকভাবে এটি দেশটির ঢাকা বিভাগের প্রধান শহর। ভৌগোলিকভাবে এটি বাংলাদেশের মধ্যভাগে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে একটি সমতল এলাকাতে অবস্থিত।
ঢাকা হচ্ছে একটি মেগাসিটি। ঢাকা মহানগরী এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ। জনসংখ্যার বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর (দিল্লি, করাচি ও মুম্বইয়ের পরেই) এবং সমগ্র বিশ্বের নবম বৃহত্তম শহর। ঢাকা “মসজিদের শহর” হিসাবে পরিচিত।
৬। বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ। আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে ৬টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে যথাঃ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ২৫° সেলসিয়াস।
৭। চীনের পর, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় বৃহত্তম রেডিমেট গার্মেন্টস নির্মাতা দেশ। পরবর্তী ৫ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোশাক প্রস্তুতকারক হয়ে উঠবে। তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে নূন্যতম মজুরি পৃথিবীর সর্বনিম্ন।
৮। ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশ।
৯। পৃথিবীর যে ৫৮ টি দেশে এখনো মৃত্যুদণ্ড বহাল আছে তার মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ।
১০। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন ও দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত।
১১। পৃথিবীর যে দেশগুলো কখনোই অলিম্পিক মেডেল পায়নি তাদের মাঝে সবচাইতে বেশি জনসংখ্যার দেশ হলো বাংলাদেশ।
১২। এই দেশে ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর বিশ্ব হাত ধোয়া দিবসে ৫২ হাজার ৯৭০ জন মানুষ একসঙ্গে হাত ধুয়ে বিশ্ব রেকর্ড করে।
১৩। বাংলা ভাষা বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাগুলির মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে।
১৪। বাংলাদেশ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পাট উৎপাদনকারী দেশ।
১৫। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা ও বিমসটেক-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়া দেশটি জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব শুল্ক সংস্থা, কমনওয়েলথ অফ নেশনস, উন্নয়নশীল ৮টি দেশ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন, ওআইসি ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংঘের সক্রিয় সদস্য।
১৬। বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা সমুদ্র সমতল হতে মাত্র ১০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। সমুদ্র সমতল মাত্র ১ মিটার বৃদ্ধি পেলেই এদেশের ১০% এলাকা নিমজ্জিত হবে বলে ধারণা করা হয়।
১৭। আমরা বাঙ্গালীরাই পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র জাতি যারা নিজ মাতৃভাষার জন্য প্রান দিয়েছি।
১৮। কাগজে কলমে কাবাডি এই দেশের জাতীয় খেলা হলেও বর্তমানে ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা।
১৯। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। তবে জাতিসংঘের শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী এটি একটি স্বল্পোন্নত দেশ।
২০। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মুদ্রা হচ্ছে টাকা।
২১। দেশটির মোট জিডিপি প্রায় ৩১৪.৬৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ২০০০ মার্কিন ডলার।
২২। বাংলাদেশের ডায়ালিং কোড হচ্ছে +৮৮০।