শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়তে গেলে যা যা দরকার হবে

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই হাজার হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের যে সব দেশে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী যেতে আগ্রহী থাকেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং জার্মানি।

ওই সব দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত নভেম্বর থেকে শুরু করে জানুয়ারির মধ্যেই বেশিরভাগ বিদেশি শিক্ষার্থী আবেদন করে থাকেন।

বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়তে যাওয়ার আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। তবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণ কিছু নিয়ম বিশ্বের প্রায় সব দেশে একই রকমের।

সেক্ষেত্রে প্রথমেই আপনি আসলে কোন দেশে যেতে চান তা নির্ধারণ করতে হবে। তারপর সে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্স, শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ, জীবন-যাপনের ব্যয়সহ নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

এসব তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে সাধারণ আরো কিছু বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, না হলে আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন যথাসময়ে এবং সুষ্ঠুভাবে হতে সমস্যা তৈরি হবে।

শিক্ষার্থী

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,এইচএসসি পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের অনেকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথা ভাবেন

আপনি যে সময় পড়াশুনা শুরু করতে চান, তার অন্তত এক থেকে দেড় বছর আগে এসব বিষয়ে অনুসন্ধান চালাতে হবে।

তবে বিশ্বের যেখানেই পড়াশুনা করতে যান কেন আপনার অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে।

সেই সাথে বাংলাদেশে অর্জিত শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সার্টিফিকেট, ভাষাগত দক্ষতা এবং আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণপত্র থাকতে হবে।

যুক্তরাজ্য

যুক্তরাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে শিক্ষার্থী হিসেবে পড়তে যেতে হলে আপনার বয়স অবশ্যই ১৬ বছরের বেশি হতে হবে।

তার মানে এইচএসসি বা সমমান পাশের পর আপনি স্নাতক পড়তে যুক্তরাজ্যে যেতে পারেন। এছাড়া পোস্ট-গ্রাজুয়েট, মাস্টার্স, বিভিন্ন ধরণের সার্টিফিকেট কোর্স বা ডিপ্লোমা পড়তেও যেতে পারেন।

শিক্ষার্থী হিসেবে ভিসার আবেদন করতে হলে আপনার অবশ্যই স্বীকৃত কোনও একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনও একটি কোর্সের অফার থাকতে হবে।

কনফার্মেশন অব অ্যাক্সেপট্যান্স ফর স্টাডিজ বা সংক্ষেপে সিএএস আপনাকে ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। এছাড়া এই লেটারে একটি রেফারেন্স নম্বর থাকবে যেটি আপনাকে আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে আসা অফার অবশ্যই শর্তহীন হতে হবে। অফার লেটারে যদি কোন শর্ত থাকে তাহলে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

আপনি যে কোর্সে পড়তে যাচ্ছেন সেটির খরচ এবং যুক্তরাজ্যে আপনার জীবন-ধারণের খরচ যোগানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে হবে। এর পরিমাণ কত হবে সেটি নির্ভর করবে আপনি কোন বিষয়ে পড়াশুনা করতে যাচ্ছেন এবং কোর্সটির দৈর্ঘ্য কত তার উপর।

যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি র‍্যাংকিংয়ে সেরা হয়েছে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি র‍্যাংকিংয়ে সেরা হয়েছে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়

আপনার অন্তত এক শিক্ষা বছর বা নয় মাসের পড়াশুনা ও যুক্তরাজ্যে থাকা-খাওয়ার ব্যয় বহনের অর্থ থাকতে হবে। তবে আপনার কত খরচ পড়বে সেটি আপনার অফার লেটার বা কনফার্মেশন অব অ্যাক্সেপট্যান্স এর মধ্যে উল্লেখ করা থাকবে।

পড়তে যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি জানার প্রমাণপত্র থাকতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি ইংরেজি পড়তে, লিখতে, বলতে এবং বুঝতে পারেন। এর জন্য নির্ধারিত কিছু টেস্ট বা পরীক্ষা রয়েছে।

যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আইইএলটিএস। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে এসব টেস্টে অংশ নিতে পারবেন আপনি।

এছাড়া আপনাকে কিছু নথি অবশ্যই দেখাতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, পাসপোর্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো সিএএস বা অফার লেটার, পড়াশুনা ও জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের প্রমাণপত্র, যক্ষ্মা পরীক্ষার সার্টিফিকেট, আপনার পড়াশুনার অর্থায়ন ইত্যাদি।

এছাড়াও আপনার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ভিসা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ আপনার কাছে অন্যান্য নথিও চাইতে পারেন।

আপনি যে বিষয়েই পড়তে যান না কেন, কোর্স শুরু হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। সাধারণত তিন সপ্তাহের মধ্যে আপনি আপনার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন।

আপনি যুক্তরাজ্যে কতদিন থাকতে পারবেন তা নির্ভর করবে আপনি কী ধরণের কোর্স করেছেন এবং তার দৈর্ঘ্য কতদিন তার উপর।

আপনার বয়স যদি ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি হয় এবং আপনার কোর্সটি যদি স্নাতক পর্যায়ের হয় তাহলে আপনি সাধারণত পাঁচ বছর থাকার সুযোগ পাবেন। আর তা না হলে সাধারণত দুই বছর থাকার সুযোগ পাবেন।

আপনি আপনার স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানদেরও আপনার সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

তবে আপনার কোর্স যদি ২০২৪ সালের পহেলা জানুয়ারির পর শুরু হয় তাহলে আপনার সঙ্গীকে নিতে হলে আপনাকে অবশ্যই পিএইচডি বা কোন গবেষণা বিষয়ক উচ্চ ডিগ্রির শিক্ষার্থী হতে হবে।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করতে যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে একটি কলেজ বা ইউনিভার্সিটি ও সাবজেক্ট খুঁজে বের করতে হবে যেটা আপনার জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

যুক্তরাষ্ট্রে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন তালিকা নেই। তাই বলা হয় যে, আপনার শিক্ষাগত, আর্থিক এবং ব্যক্তিগত সামর্থ্য ও প্রয়োজনের সাথে যেটি সবচেয়ে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেটিই আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোর্স খুঁজে বের করার এই কাজটি আপনাকে শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার এক বছর বা ১৮ মাস আগেই শুরু করতে হবে।

এক্ষেত্রে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে আপনি কোন স্টেটে (মার্কিন অঙ্গরাজ্যে) থাকতে চান, কোন কলেজ বা ইউনিভার্সিটি আপনার সাথে সবচেয়ে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ, আপনার আর্থিক সহযোগিতা দরকার কি না, ভর্তি ও বৃত্তি আবেদনের শেষ তারিখ কবে ইত্যাদি।

ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সার্টিফিকেট দরকার হবে। সেগুলো ইংরেজি ভাষায় হয়ে না থাকলে সেটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে নোটারী করতে হবে।

ইংরেজি ভাষার দক্ষতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে। অ্যাকাডেমিক ও অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট ও রেকমেনডেশন লেটার দরকার হবে।

সেই সাথে আপনার আগ্রহ, লক্ষ্য ইত্যাদি বিষয়ে একটি রচনা বা ব্যক্তিগত বিবৃতি লিখতে হবে এবং সেগুলো ভিসা আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ ভিন্ন। প্রতিযোগিতা বেশি হলেও এখানে বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই আপনার আর্থিক পরিকল্পনা যত দ্রুত সম্ভব শুরু করুন।

মনে রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন ও বৃত্তির আবেদন এক সাথেই শুরু হয়।

ভর্তি ও আর্থিক নিশ্চয়তার পরের ধাপ হচ্ছে ভিসার জন্য আবেদন। তবে ভিসা আবেদন করতে হলে অবশ্যই আপনার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফার লেটার থাকতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা আবেদনের জন্য আপনার বিভিন্ন রেকমেনডেশন লেটার, এসে (essay) লেখা এবং বিভিন্ন ধরণের অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট পৌঁছানোর বিষয় রয়েছে। তাই এটি সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে করতে হবে।

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া

কানাডা

কানাডায় পড়তে যেতে হলে কী ধরণের বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোর্স অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে কিছু সাধারণ নিয়ম রয়েছে যা মোটামুটি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রযোজ্য।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোঁজার বিষয়ে এডুকানাডা নামে কানাডার সরকারি ওয়েবসাইট, বা আপনি যে প্রদেশে পড়াশুনা করতে আগ্রহী সেই প্রদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং কানাডা ব্যুরো ফর ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন এর ওয়েবসাইটে গিয়ে খোঁজ নিতে পারেন।

সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা ও বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়ার পর আপনাকে পছন্দের বিষয়ে আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স শুরুর অন্তত এক বছর আগে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপনি আবেদন করতে চান, তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা ওই নির্ধারিত বিষয় সম্পর্কে, আবেদনের ফি, টিউশন ফি, স্বাস্থ্য বীমা, বাড়ি ভাড়া এবং কানাডায় বসবাসের খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাবে।

কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপনাকে নিতে আগ্রহী হলে তারা একটি লেটার অব অ্যাক্সেপটেন্স পাঠাবে। যেটি আপনার স্টাডি পারমিট আবেদনের সময় দরকার হবে।

কানাডার অভিবাসন সংক্রান্ত সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, যে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হলে আপনাকে অবশ্যই সব ধরণের অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট বা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সব ধরণের সার্টিফিকেট থাকতে হবে।

শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনেক প্রতিষ্ঠান

এগুলো ইংরেজিতে না থাকলে অনুবাদ করে নোটারী করিয়ে নিতে হবে। কানাডায় ইংরেজি ও ফরাসি – দুই ভাষাতেই পড়াশুনা করা সম্ভব। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সার্টিফিকেট থাকতে হবে। এক্ষেত্রে আইইএলটিএস ও টয়েফেল গ্রহণযোগ্য।

সাথে দরকার হবে স্টেটমেন্ট অব পারপাস, যা সংক্ষেপে এসওপি নামে পরিচিত অর্থাৎ কেন আপনি কানাডায় পড়তে যেতে চাইছেন, যে বিষয়ে পড়াশুনা করতে চাচ্ছেন সেটিতে কেন পড়তে চান, আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ইত্যাদি বিষয় সংক্রান্ত একটি লেখা।

আর এসব কিছুর সাথে দরকার হবে রেকমেনডেশন লেটার যেটা আপনার সরাসরি শিক্ষক বা কো-অর্ডিনেটর দিয়ে থাকেন।

আর্থিক বিষয়ে কানাডাতে ব্যাচেলর বা স্নাতক পড়তে বার্ষিক আনুমানিক ১৫ হাজার পাউন্ড থেকে শুরু করে ৫০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত খরচ হতে পারে। মাস্টার্স ও পিএইচডির ক্ষেত্রে এই খরচ আলাদা হয়ে থাকে।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কানাডায় বৃত্তির কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এগুলো অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ। তাই আগে থেকেই আপনার জন্য কোন বৃত্তি সামঞ্জস্যপূর্ণ সেটি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে আবেদন করতে পারেন।

কানাডায় পড়তে যাওয়ার জন্য স্টাডি পারমিট দরকার হবে। এর জন্য আবেদন করতে হলে কোনও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফার লেটার বা লেটার অব অ্যাক্সেপটেন্স দরকার হবে। থাকতে হবে বৈধ পাসপোর্ট।

এসবের সাথে দিতে হবে একটি লেটার অব এক্সপ্লেনেশন বা পারসোনাল স্টেটমেন্ট। সহজ কথায় বলতে গেলে আপনি কেন কানাডায় পড়াশুনা করতে চান, পড়াশুনা শেষে আপনি কী করবেন ইত্যাদি সম্পর্কিত তথ্য দিতে হয় এই লেটারে।

আর সর্বশেষ আপনি যে কানাডাতে আপনার পড়াশুনা ও জীবনযাপন করার মতো পর্যাপ্ত অর্থ আছে তার প্রমাণপত্র স্টাডি পারমিটের আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

একই সাথে আপনার সাথে যদি আপনার স্ত্রী বা স্বামী ও সন্তানরা যেতে চায় তাহলে তাদের খরচ বহন করার মতো অর্থ থাকারও প্রমাণপত্র দরকার হবে।

ডলার

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,বিদেশে পড়তে যেতে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হয়

অস্ট্রেলিয়া

অন্যান্য দেশের মতোই অস্ট্রেলিয়াতে আপনি কোথায় পড়তে চান, কোন বিশ্ববিদ্যালয় আপনার জন্য উপযুক্ত হবে তা আগে ঠিক করতে হবে। বিভিন্ন কোর্সে বা বিষয়ে পড়ার জন্য আলাদা শর্ত থাকে।

তবে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার সার্টিফিকেট অবশ্যই থাকতে হবে। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে স্নাতক পর্যায়ে একটি ডিগ্রি থাকতে হবে।

আপনি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করতে চান তাদের সাথে যোগাযোগ করলে ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও খরচ তারাই সরবরাহ করবে। সব নিয়ম মেনে আবেদন করা হলে সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

আপনি ভর্তির জন্য যোগ্য বিবেচিত হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আপনাকে একটি লেটার অব অফার এবং একটি অ্যাক্সেপটেন্স ফর্ম দেয়া হবে।

এর পরবর্তী ধাপ হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করা।

অস্ট্রেলিয়াতে শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদনের জন্য আপনার অবশ্যই বৈধ কনফার্মেশন অব এনরোলমেন্ট বা ভর্তির নিশ্চয়তা সম্বলিত নথি থাকতে হবে।

আপনার কোর্স শুরু হওয়ার অন্তত আট সপ্তাহ আগে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। অবশ্যই অনলাইনে ভিসা আবেদন করতে হবে।

আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সার্টিফিকেট দরকার হবে। সেগুলো ইংরেজি না হলে অনুবাদ করে নোটারী করে নিতে হবে। আবেদনপত্রের সাথে অনুবাদ করা অনুলিপির সাথে আসল সার্টিফিকেটের অনুলিপিও দিতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের পহেলা অক্টোবর থেকে শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদনের সময় যে পরিমাণ তহবিল দেখাতে হয় তা বাড়বে। ২০২৩ সালের পহেলা জুলাই থেকে স্টুডেন্ট ভিসা যাদের আছে তারা ১৫ দিনে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করতে পারবে।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে

জার্মানি

জার্মানিতে পড়তে যেতে হলে জার্মান ভাষা শেখাটা জরুরি নয়। জার্মানির অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষার কোর্স রয়েছে।

সরকারি ওয়েবসাইটের হিসাব বলছে, শুধু ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় এমন অন্তত ২৮০টি ব্যাচেলর কোর্স রয়েছে। আর ডিএএডি এর ডাটাবেইজে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে ১৪০০রও বেশি।

প্রথমে আপনাকে ঠিক করতে হবে যে আপনি আসলে কোন বিষয়ে পড়াশুনা করতে চান। সেটি ঠিক হয়ে গেলে আপনাকে আপনার পছন্দ করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

ওই কর্তৃপক্ষ আপনার এর আগের পড়াশুনার সার্টিফিকেট গ্রহণ করে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

যদি আপনার সার্টিফিকেট ওই বিশ্ববিদ্যালয় গ্রহণ না করে তাহলে আপনাকে এক বছরের একটি প্রিপারেটরি কোর্স করতে হবে।

তবে এটি পুরোপুরি নির্ভর করবে আপনার এর আগের পড়াশুনা এবং যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান তাদের নিয়মকানুনের উপর।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির নিয়ম আলাদা হলেও কিছু সাধারণ নিয়ম রয়েছে।

জার্মানিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করতে হলে যা যা থাকতে হবে তা হলো- সঠিকভাবে পূরণ করা আবেদনপত্র, সব ধরণের শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, সেগুলোর অনুবাদ করা অনুলিপি, পাসপোর্টের অনুলিপি ও পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র।

জার্মান অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিস (DAAD) হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা যেটি বিদেশী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি তত্ত্বাবধান করে থাকে।

DAAD স্কলারশিপ ডাটাবেইজ থেকে বৃত্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানা সম্ভব।

জার্মানিতে শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থাও তুলনামূলক সস্তা।

বিদেশে ডর্ম

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যান

জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশুনার ক্ষেত্রে কোন টিউশন ফি না থাকলেও এবং জীবন-যাপন তুলনামূলক সস্তা হলেও, কর্তৃপক্ষ দেখতে চায় যে, আপনার পড়াশুনার খরচ চালানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থ আছে কিনা।

এর জন্য এক বছর পড়াশুনা ও বসবাসের খরচ চালানোর মতো আর্থিক সচ্ছলতার কিছু নথি দেখাতে হয়।

সবশেষ ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, একজন বিদেশি শিক্ষার্থীকে এক বছরের খরচ হিসেবে ১১ হাজারের বেশি ইউরো থাকার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।

এক্ষেত্রে আপনি কোনও শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে থাকলে তার নথি, আপনার বাবা-মায়ের আয়ের হিসাব ও সম্পদ, জার্মানির কোন একটি ব্যাংকে ব্লকড অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রাখা, ব্যাংক গ্যারান্টি দেখাতে হবে।

এছাড়া জার্মানিতে বসবাসরত কেউ চাইলে আপনার পুরো পড়াশুনার খরচের অর্থায়নের নিশ্চয়তা দিতে পারে।

ব্লকড অ্যাকাউন্ট হচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ধরণের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের খরচ একটি ব্যাংকে জমা রাখেন।

জার্মানিতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তারা সেই অ্যাকাউন্টের অর্থ ব্যবহার করতে পারবেন না। এমনকি জার্মানিতে পৌঁছানোর পরও তিনি ওই অ্যাকাউন্টের উপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ পাবেন না।

ব্লকড অ্যাকাউন্ট প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান আপনাকে ব্যাংকে একটি সাধারণ হিসাব খুলে দেবেন এবং প্রতি মাসে সেই ব্যাংক হিসাবে অর্থ পাঠিয়ে দেবে।

এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জার্মান কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে যে সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে রয়েছে। তবে, অর্থায়নের নথি শিক্ষার্থী ও দেশ ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com