বাংলাদেশে কয়েকটি সংস্থা বর্ষাকালে পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ধসের পূর্বাভাস দেয়ার জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে একটি মডেলের পরীক্ষা করছে।
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ধসের ঘটনা নিয়মিত ঘটছে।
২০২১ সালেই কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হয়। এরা সবাই ছিল শিশু।
২০০৭ সালে ভয়াবহ পাহাড়ধসে চট্টগ্রামে ১২৭ জন মানুষ মারা যায়।
এরপর থেকে প্রতি বছর পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছেই।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে পাহাড়ধসে ১৬০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
পাহাড় ধসের কারণ হিসেবে অধিক বৃষ্টিপাতকে দায়ী করা হয়, তবে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা হতে পারে এমন কোন পূর্বাভাসের ব্যবস্থা দেশে নেই।
গবেষকরা বলছেন পরবর্তীতে দেশের যেসব স্থানে পাহাড়ি এলাকা রয়েছে যেমন চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, সিলেট এসব এলাকায় তাদের কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কয়েকটি দাতা সংস্থার সহায়তায় এর কারিগরি সব কাজ করছে ফোরওয়ার্ন বাংলাদেশ নামের সংস্থা।
ফোরওয়ার্ন বাংলাদেশ নামের সংস্থাটি বলছে বাংলাদেশের কিছু পাহাড়ি জায়গা এমনিতেই ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
পাহাড় কাটা তার মধ্যে একটা।
সংস্থাটি বলছে যারা দীর্ঘদিন পাহাড়ে থাকেন ,তারা জানেন কোন স্থানগুলো নিরাপদ, কিন্তু ঝুঁকি তৈরি হলে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চান না।
সংস্থাটির কর্মকর্তা আশরাফুল হক বলেন, কমিউনিটির সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ টা করা হচ্ছে যাতে করে তারাই ঝুঁকিটা নিরূপণ করতে পারে।
তিনি বলেন ” আমরা একটা পূর্নাঙ্গ গবেষণা করা হয়েছে বান্দরবান , রাঙ্গামাটিতে। সায়েন্টিফিক স্ট্যাডি করেছি-ভূতাত্ত্বিক জরিপ, মাটির গড়ন, গঠন,এবং মাটির সক্ষমতা , মাটিটা ভূতাত্ত্বিক বা উৎপত্তির সময় কত, নতুন বা পুরাতন মাটি এগুলো বিবেচনা করা হয়েছ”।
তিনি বলেন, পাহাড়ে কোন অংশের কতটা ঢালের মধ্যে আছে, সূর্যের আলো কোন পাশে পরে কোন পাশে পরে না এমন ১৬টা বিষয়টা বিবেচনা করা হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় বৃষ্টিপাতজনিত কারণে ভূমিধস হয়।
তারা বলছেন এই ১৬টা বিষয় এবং বৃষ্টি দুইটাকে এক করে দেখা গেছে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে ভূমিধসের একটা সম্পর্ক আছে।
মি হক বলেন “নিদিষ্ট পরিমাণ বৃষ্টি হলে ভূমিধস হলে সেই এলাকায় কি পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে সেটা দেখেছি”।
২০২০ থেকে প্রথম মডেলটার কাজ শুরু করা হয়।
ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিস এবং কারিতাস বাংলাদেশ এর বাস্তবায়নে কাজ করছে।
তবে জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে সরকারের অনুমোদন লাগবে।
সেটার জন্য তারা সরকারের দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেছেন।
তবে এখন তারা যেভাবে কাজ করছেন সেটা ব্যাখ্যা করেছেন নাফিস ফুয়াদ।
তিনি বলেন আবহাওয়া অধিদপ্তর যে পূর্বাভাস দেয় সেটার একটা জেলার বৃষ্টির ১০ দিনের পূর্বাভাস দেয়।
কিন্তু একটা জেলার সব স্থানে একই মাত্রায় বৃষ্টি হয় না।
তিনি বলেন “ধরেন অধিদপ্তর বললো বান্দরবানে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হবে কিন্তু কোন কোন উপজেলায় একেবারেই বৃষ্টি হল না। সেক্ষেত্রে আমরা একেবারে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছি। আমরা বালতির পানি সংরক্ষণ করতে বলি। বর্ষাকালে প্রতিদিন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ২৪ ঘণ্টায় কত পানি হল সেটা আমরা দেখি”।
তিনি বলেন সেখান থেকে তারা দেখেছেন অধিদপ্তর যেটা বলেছে তারা সঙ্গে ফারাক থেকে যাচ্ছে।
এখন বান্দরবানে বৃষ্টি মাপার যন্ত্র রেইনগজ ছয়টা ,দুইটা রাঙ্গামাটিতে বসানো হয়েছে।
এর ফলে আরো সঠিকভাবে বৃষ্টি মাপা যাচ্ছে বলে তিনি বলেন।
তিনি বলেন আরো সঠিক পূর্বাভাসের জন্য দুটি আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পূর্বাভাসের সাহায্য নেয়া হচ্ছে।
এই কাজে ৬টা লোকেশনের একটা করে গ্রুপ করা হয়েছে।
প্রতি গ্রুপে আট থেকে দশজন রয়েছে যারা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা রয়েছে।
যদি তারা দেখেন একদিনে ১০০মিলি বৃষ্টি হয়েছে তাহলে তারা জানে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হবে।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES
৬০-৭০ হলে সতর্ক হতে হবে যেকোন সময় যেকোন কিছু হতে পারে।
সংস্থাগুলো বলছে গত দুই বছরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে পরিষ্কার সচেতনতা তৈরি হয়েছে।
এখন তারা আগে থেকে জানে , প্রস্তুতি নিতে থাকে, বিপদ বুঝলে সরে পরে। তারা এটাও জানার চেষ্টা করে কে কোথায় আশ্রয় নেবে।
নাফিস ফুয়াদ বলছেন “একবছরে বান্দরবানের সাড়ে তিন হাজার মানুষকে এই মডেলের আওতায় আনা গেছে। জানমাল সামলানো সম্ভব এটা তারা বুঝতে পারছে এবং কমিউনিটি লেভেলে সচেতনতা তৈরি হয়েছে”।
বিবিসি বাংলা