শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবসমূহ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ, ২০২৩

যেকোনো উৎসব মানুষের আনন্দ প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। নানা বর্ণ এবং বৈচিত্রে পরিপূর্ণ আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষেরা বাস করে। মুসলিম-প্রধান বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব সবাই মিলেমিশে উদযাপন করে। এদেশে ঈদকে দেখা হয়ে থাকে সবচেয়ে বড় সামাজিক ধর্মীয়  উৎসব হিসেবে। ঈদের সময় ঘরে ঘরে আনন্দের বার্তা যেন চলে আসে। শুধুমাত্র ঈদে নয় ধর্মীয়ভাবে আরও অনেক উৎসবে মেতে ওঠে বাংলাদেশের মুসলমানেরা। আমরা আজকে সেসব উৎসব সম্পর্কে জানব।

মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে কাঙ্খিত ঈদুল ফিতরের দিন। ঈদের শাব্দিক বাংলা অর্থ বারবার ফিরে আসা। বর্তমানে প্রধান দুটো ধর্মীয় উৎসবকে অত্যন্ত গুরুত্ব এবং যথাযথ মর্যাদার সহিত পালন করা হয়ে থাকে। ঈদুল ফিতরকে বা রোজার ঈদকে বলা হয় রোজা ভাঙ্গার দিন। এই দিন রোজা রাখা একদম নিষিদ্ধ, রোজা ভাঙ্গা বাধ্যতামূলক। এসময় মুসলমানেরা নিজেকে নিয়ে বিভোর থাকে না বরং এর পরিবর্তে গরীব আত্মীয়স্বজনের খোঁজ খবর নেয়। শুধু তাই নয়, নিজের পরিবারের পাশাপাশি তাদের জন্য কেনাকাটা করেন। ঈদের সময় মা-বাবা, ভাই-বোনসহ আত্মীয়স্বজনের সাথে ঈদ করার জন্য গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান অনেকেই। সকল মান-অভিমান, ঝগড়া-বিবাদ ভুলে গিয়ে ঈদের নামাজের পর মুসল্লীরা একে অন্যকে আলিঙ্গন করেন।

কিন্তু ঔপনিবেশিক আমলে তা সম্ভব ছিল না। ধর্মীয় অজ্ঞতা এবং যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে মুসলিমরা ঈদ সেভাবে পালন করতে পারত না। মুঘল যুগে ধনাঢ্য মুসলমানদের মধ্যেই ঈদের আনন্দ সীমাবদ্ধ ছিল। সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোনো প্রকার আনন্দ তখন ছিল না ঈদ উপলক্ষে। কিন্তু বর্তমানে এর সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। ঈদে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা হতো। যেমন : পোলাও, কোরমা, পিঠা, সেমাই, জর্দা, নকশি পিঠা, মিষ্টান্ন এবং আরও অনেক কিছু। ঊনিশ শতকের ঈদের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ঈদ উপলক্ষে বিশাল মিছিল। বিশ শতকের তিরিশ-চল্লিশ দশকের দিকে ঢাকার রমনা এবং আরমানিটোলাসহ বেশ কিছু জায়গায় খটক নাচ অনুষ্ঠিত হতো। এই শতকেই মুসলিম স্বতন্ত্র আন্দোলন শুরু হলে ঈদ উৎসবের গুরুত্ব নতুনভাবে তৈরি হয়। তখন মানুষের অজ্ঞতা ধীরে ধীরে কাটতে থাকে এবং শুধুমাত্র ধনীদের মধ্যেই নয় সাধারণ মানুষের মধ্যেও ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে যায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রের তৈরি হয়। মুসলমানদের সংখ্যা গরিষ্ঠতার কারণে ঈদের আমেজ তখন নতুন করে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

মূলত ঈদুল আজহা বাংলায় মানুষদের কাছে কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত। হযরত ইবরাহীম (আ.) তার প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেই অনুসরণে আজও মুসলমানেরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রতিবছর কোরবানি দিয়ে থাকেন। মহান রাব্বুল আল-আমিনের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে পশু জবেহ করা। ইসলামে সবার ওপর কোরবানি বাধ্যতামূলক নয়।

তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে, যাদের নির্দিষ্ট হিসাব পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে। জিলহজ মাসের ১০ তারিখে বিশ্বজুড়ে সকল মুসল্লীরা কোরবানি ঈদ শুরু করে। অর্থাৎ হজ্বের পরদিন মুসলমানেরা মেতে ওঠে ঈদ উৎসবের আনন্দে। এই আনন্দ উৎসব চলে প্রায় চার দিন পর্যন্ত। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় কোরবানির হাঁট বসে। হাঁটে গরুর গলায় কাগজের মালা পড়ানো হয়, খাসি ও গরুর পাশাপাশি উট, দুম্বা সীমিত আকারে কোরবানির হাঁটে নিয়ে আসা হয় বিক্রির উদ্দেশ্যে। দুই ঈদের দিন মুসুল্লিরা নতুন কাপড় পরিধান করে। পরিবার-পরিজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়।

হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের কারবালার যুদ্ধে এজিদের হাতে সপরিবারে শাহাদাত বরণ করেন। শিয়া সম্প্রদায় এই দিনটাকে যথাযথ মর্যাদায় পালন করে থাকে। হিজরী বছরের প্রথম মাস ‘মহরমে’র প্রথম দশ দিন মহরম উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। আশুরার দিনে অর্থাৎ দশম দিনে ইমাম হোসেনের তাজিয়া নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। এই শোভাযাত্রায় লাঠি খেলা, ছুড়ি খেলা হয়ে থাকে। শিয়া পুরুষরা নিজেদের গাঁয়ে বিভিন্নভাবে আঘাত করে থাকেন ইমাম হোসেনের যন্ত্রণা কিছুটা উপলব্ধি করার জন্য। এমনকি তারা জ্বলন্ত কয়লার উপরে হেঁটে যান। তবে, কুরআন মাজিদে কিংবা হাদিস শরীফে এই ধরনের উৎসব পালন করতে বলা হয়নি, নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবুও শিয়া বংশধররা বংশপরম্পরায় মহরম উৎসব এভাবে পালন করে থাকেন।
 হিজরী বছরের তৃতীয় মাসের ১২ তম দিনে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম-এর জন্ম এবং শাহাদাত বার্ষিকী। এই দিনে বিশেষ দোয়া প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। মুসলমানেরা যথাযথ মর্যাদার মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকেন। মহানবী ইন্তেকালের পূর্বে ১২ দিন পর্যন্ত অসুস্থ ছিলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এই ১২ দিন ব্যাপী কোরআন পাঠ এবং ধর্মীয় আলোচনা করা হয়ে থাকে।

শবে বরাত : হিজরি শাবান মাসের ১৪ এবং ১৫ তারিখের মাঝামাঝি সময়ে শবে বরাত পালন করা হয়ে থাকে। এই দিনটিতে মুসলমানরা অত্যন্ত গুরুত্বের সহকারে পালন করে থাকেন। আল্লাহর উদ্দেশ্যে নফল নামাজ এবং ইবাদত  করে থাকেন। এই দিনটিতে আল্লাহ বান্দাদের বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। হাদিস অনুসারে এই দিনটিকে দোয়া কবুল এবং ক্ষমা প্রার্থনার জন্য বিশেষভাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রতিরাতের শেষ অংশে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে আসেন বান্দাদের ডাক শোনার জন্য। বাংলাদেশ শবে বরাত উদযাপনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা হয়, যেমন : রুটি-হালুয়া, সুজি, লুচি, মিষ্টান্ন। বিকালে এবং সন্ধ্যায় পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে এই খাবার ভাগাভাগি করে নেয়া হয়। দরিদ্রদের মাঝেও খাবার বিতরণ করা হয়৷ এছাড়া বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে শবে বরাত উপলক্ষে বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com