শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের পাসপোর্টে ১৪২ দেশ ভ্রমণ

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

পড়াশোনা আর চাকরির সুবাদে ২০১২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তাঁকে নিউজিল্যান্ডে থাকতে হয়েছে। ২০০৯ সালের মে মাসে শুরু করেছিলেন বিশ্বভ্রমণ, হিমালয়ের দেশ নেপাল থেকে। সম্প্রতি ১৪২তম দেশ হিসেবে ওমান ঘুরে এসেছেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়েই। তিনি কাজী আসমা আজমেরী।

শুরুটা ছিল জেদের
আমি ভ্রমণ শুরু করেছিলাম একধরনের জেদ থেকে। কেন মেয়েরা ভ্রমণ করতে পারবে না? ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বাংলাদেশে যে ভেদাভেদ, সেটি পাশ কাটানোর জন্যই আমি ভ্রমণ শুরু করি। আমার এক বন্ধু অনেক দেশ ঘুরেছিলেন। তাঁর মা একদিন বললেন, কোনো মেয়েই সে কাজ করতে পারবে না। আমার মধ্যে জেদ চেপে বসল, কেন মেয়েরা পারবে না? কেন মেয়েদের এভাবে দেখা হয়? সারা বিশ্বে মেয়েদের কীভাবে দেখা হয়, সেটি জানার আগ্রহ জন্মে আমার। সেই থেকে শুরু। ২০০৯ সালে যখন ভ্রমণ শুরু করি, তখন আমার টার্গেট ছিল ৫০টি দেশ ঘোরা। কিন্তু গত ১৪ বছরে সে সংখ্যাটা পৌঁছেছে ১৪২টিতে!

কারাগারের স্মৃতি
২০১০ সালে আমি বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সাইপ্রাস ও ভিয়েতনামে যাই। রিটার্ন টিকিট না থাকায় এবং অন্যান্য কারণে সাইপ্রাস ও ভিয়েতনামে জেলে যেতে হয়। নিজেকে খুব অপমানিত মনে হয়। তখন কিশোরী ছিলাম, কান্নাকাটিও করি ঘটনার আকস্মিকতায়। অল্প সময় তারা আমাকে জেলে রাখে। কিন্তু সে ঘটনা আমার জেদটা বাড়িয়ে দেয় আরও। আমি প্রতিজ্ঞা করি, এই বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়েই বিশ্বভ্রমণ করব। সবাইকে জানাতে চেয়েছি, বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়েও বিশ্বভ্রমণ করা যায়। ১৪২টি দেশ ঘুরতে আমার ১৪ বছর লেগেছে। কিন্তু প্রতিটি দেশ আমি বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়েই ভ্রমণ করেছি।

অনভিপ্রেত ঘটনা 
একবার আমার ফ্লাইট ছিল দুবাই থেকে বাহরাইন, এরপর বাহরাইন থেকে ঢাকা। হঠাৎ দুবাই সরকার বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করে দেয় কোনো কারণে। আমি তখন ওমানে আটকে যাই। ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত যেতে হয়। রাতের বেলা এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রাত ১০টায় আমি ইমিগ্রেশনে পৌঁছাই। সে দেশের কর্তৃপক্ষ খুব ‘কনফিউজড’ ছিল। একজনের কাছে গেলে বলে আরেকজনের কাছে যান। রাত সাড়ে চারটায় তাঁরা আমাকে ফেরত দেন। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে এ রকম যুদ্ধ সব সময় আমাকে করতে হয়। কিন্তু পাসপোর্ট আমি বদলাইনি এবং বদলাব না।

তরুণদের জন্য 
বাংলাদেশের নারী পর্যটকদের অবস্থা এখন অনেক ভালো। যেসব নারী চাকরি করছেন, তাঁরা ভ্রমণ করছেন। আমাদের এখন অনেক গ্রুপ আছে নারী পর্যটকদের জন্য। আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাঁদের সঙ্গে অনেকেই ভ্রমণ করছেন। কিন্তু ১৭ কোটির তুলনায় সে সংখ্যা খুবই সামান্য। জনসংখ্যার তুলনায় সেটি ১ শতাংশও নয়। তবে এটা বলতেই হয়, এ দেশের মেয়েরা চাকরি কম করেও বেশ ভালোই ভ্রমণ করছেন। সে তুলনায় তরুণেরা খুবই ভালো করছেন। তরুণ ছেলেমেয়েরা ইউটিউবার হচ্ছেন, ৬৪ জেলা ভ্রমণ করছেন, দেশের বাইরেও যাচ্ছেন, হোস্টেলগুলোতে কম খরচে থাকছেন। এগুলো খুবই ইতিবাচক দিক।

আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের বলব, আপনারা ভ্রমণ করুন, জানুন। অন্তত একটি দেশ ঘুরলেই যে অভিজ্ঞতা হবে, তা কর্মক্ষেত্রে অনেক কাজে দেবে। আর যেসব নারীর বাইরের দেশে ভ্রমণের সুযোগ নেই, তাঁরা অন্তত দেশের ভেতরে ভ্রমণ করুন।

আমাদের দেশের প্রত্যেক মেয়ের বিয়ের আগে অন্তত একবার একা একা কোথাও ভ্রমণে বেরিয়ে পড়া উচিত। তাহলে তারা নিজেকে চিনতে পারবে, কী চায় জানতে পারবে। পাহাড় না সাগর—কোনটা তার পছন্দ, তা-ও জানতে পারবে। আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে, নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

এখন যা করছি 
আমি ৯০তম দেশ হিসেবে ফিলিপাইন ভ্রমণ করেছিলাম। সেখানকার একদল ছেলেমেয়ের সঙ্গে  কথা হয়। তাঁরা আমার ভ্রমণের কাহিনি শোনেন এবং বিষয়টি তাঁদের ভালো লাগে। এর পর থেকে আমি কিশোরীদের নিয়ে কাজ করছি। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সেশনে কথা বলি। ৯ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মোটিভেট করার চেষ্টা করি আমার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দিয়ে। সহনশীল করে তোলার চেষ্টা করি নিজের দেশের বাইরের সংস্কৃতিগুলোর বিষয়ে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com