শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৭ অপরাহ্ন
Uncategorized

বাংলাদেশের ঈদ ঐতিহ্য

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০২১

উৎসব পার্বণের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জুড়ি মেলা বেশ কষ্টকর। ঈদ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসবের একটি বললে মোটেই অত্যুক্তি হবেনা। ঈদুল ফিতর মানেই দেশের প্রায় সব বাড়িতে মিস্টিমুখ করা আর আত্মীয়-পরিজনের সাথে দেখা করার সু্যোগ। সেই সাথে অঞ্চলভিত্তিক আলাদা রীতিনীতি তো আছেই। কিন্তু চলমান কোভিড-১৯ সংকটে সেই আয়োজনে ভাটা পড়তে চলেছে। বেঁচে থাকাটাই যেন এবারের ঈদে মুখ্য। হুমায়ুন আহমেদের মত, ‘স্বাধীন দেশের মাটি, দবদবায়া হাঁটি’র অনুভূতি পেতে এবছরটা আপনাকে কাটাতে হবে ঘরে বসেই।

শোলাকিয়া ঈদগাঁ ময়দানে ঈদের জাম’আত। ছবি : দ্য ডেইলি স্টার
তবে ঘরে বসে থাকা এই অবস্থায় চাইলে দেশের ঈদ ঐতিহ্যের বেশ কিছু দিক জেনে আসতে পারেন বেশ সহজে। দেখে নিন এই দেশের ঈদের চলমান ও হারিয়ে যাওয়া কিছু ঐতিহ্য।

বাংলাদেশের ঈদ ঐতিহ্য – শোলাকিয়ার ঈদ জাম’আত

বাংলার কিংবদন্তি ঈশা খাঁর শাসনকালে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে আধ্যাত্মিক সাধক ও ধর্ম প্রচারক সৈয়দ আহম্মদ কিশোরগঞ্জ জেলার রাজবাড়ীয়া এলাকায় আসেন। ১৮২৭ সালে তিনি সর্বপ্রথম এই এলাকায় একটি মসজিদ স্থাপন করেন। ১৮২৮ সালের শেষভাগে জঙ্গলবাড়ি ও হয়বতনগর এলাকার জমিদারের সহায়তায় সৈয়দ আহাম্মদ তার জমিতে ঈদগাহ মাঠের তৈরি করেন। সেই থেকেই শুরু হয় শোলাকিয়ার ঈদ জাম’আতের। এই জাম’আতের আগতদের জন্য চালু আছে মুসাফিরখানা। সেই সাথে জাম’আত কেন্দ্রিক বাজার এবং মেলা তো আছেই।

দেশের বৃহত্তম ঈদ জামা’আত অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : ইউএনবি
১৯৫০ সালে ঈশা খাঁ’র ৬ষ্ঠ বংশধর এবং শেষ জমিদার দেওয়ান মোঃ মান্নান দাদ খান তার মায়ের আসিয়াত মোতাবেক শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি ওয়াকফ করেন। সে দলিলের সূত্র থেকে জানা যায়, আরও দুইশো বছর আগে অর্থাৎ ১৭৫০ সালে এই ঈদগাহে দুটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮২৮ সাল থেকে প্রতিবছর পহেলা শাওয়াল ও ১০ই জিলহজ্জ যথাক্রমে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার বিশাল ঈদ জামাতের আয়োজন হয়ে আসছে। শোলাকিয়ার ঈদ জামাত এই উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ঈদ জামাত হিসেবে পরিচিত। এখানে কাতারপ্রতি ৫০০ জন হিসেবে ২৬৫ কাতারে নামায আদায় হয়। দীর্ঘ দিনের রীতি অনুযায়ী, শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত শুরু হওয়ার ৫ মিনিট, ৩ মিনিট ও ১ মিনিট পূর্বে যথাক্রমে ৩টি, ২টি ও  ১টি গুলির আওয়াজ করা হয় শটগানের মাধ্যমে।
ঈদ আমাদের দেশে এক আনন্দের উৎসব, এবারের ঈদে সেই আনন্দে শূন্যতা সৃষ্টি হলেও সামনে আবার এমন দিনে ফিরে আসবে বলেই আশা করা যায়। ছবি : ইউএনবি
বাংলাদেশের ঈদ ঐতিহ্য  – চকবাজারের ঈদ মেলা
বাংলাদেশের ঈদের আসল জমকালো রূপ দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই পুরাতন ঢাকায় থাকতে হবে। এছাড়া সত্যিকার অর্থে ঈদের জাঁকজমক দেশের অন্য কোথাও পাওয়া বেশ মুশকিল বলা চলে। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন তাঁর ‘ঢাকা সমগ্র’ বইয়ের প্রথম খণ্ডে আশরাফউজ্জামানকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘ঈদের মেলা হ’ত চকবাজার এবং রমনা ময়দানে। বাঁশের তৈরি খঞ্চা ডালা আসত নানা রকমের। কাঠের খেলনা, ময়দা এবং ছানার খাবারের দোকান বসতো সুন্দর করে সাজিয়ে। কাবলীর নাচ হ’ত বিকেলবেলা।

 

 

চকবাজারের ঈদ মেলা। ছবি : প্রথম আলো
ঢাকার যে ঐতিহ্য এখানে বলা হচ্ছে তার পুরোটাই মোগল সময়ের। মোগল আমলে রীতিমতো জমকালো আয়োজনের সাথে পালিত হতো একেকটি ঈদ। সেই পুরাতন ঈদ মিছিল বা বুড়িগঙ্গা নদীতে চলা নৌকা বাইচ না থাকলেও টিকে আছে চকবাজারের ঈদ মেলা। ঈদের ফাঁকা ঢাকায় চকবাজার গেলে আপনার চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য। শতবছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই মেলা এখনও সমান আগ্রহ জাগায় ঢাকার বাসিন্দাদের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাবা-মায়েরা সন্তানদের চিনিয়ে দিচ্ছেন ঢাকার এক গৌরবময় ইতিহাসের সাথে।
ছবি : ঢাকা ট্রিবিউন
হারিয়ে যাওয়া চুড়িওয়ালীরা
ঈদ উপলক্ষে ইসলামপুর থেকে কাপড় কিনে তাদের বাড়িতে তৈরি করা হতো মেয়েদের সালোয়ার-কামিজ, দোপাট্টা ইত্যাদি। বাড়ির নিজস্ব সেলাই মেশিনে যা পূর্ণতা পেতো। বাজার থেকে শাড়ি কিনে এনে শাড়ির ওপর এমব্রয়ডারি, পুঁতির কাজ, বর্ডার দিয়ে শাড়িকে আকর্ষণীয় করা হতো। গত শতকেরও অনেকটা সময় পর্যন্ত ঈদে ঢাকাবাসী নারীদের ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল ‘চানরাতে’ চুড়িওয়ালীদের কাছ থেকে চুড়ি কেনা এবং তাদের হাতে চুড়ি পরা। বাঁশের টুকরি মাথায় করে বাড়ি বাড়ি যেতেন চুড়িওয়ালীরা। ঐতিহ্যবাহী চুড়িহাট্টা পল্লী জোগান দিত এ চুড়ি। আর ২৭ রমজান থেকে অন্দরমহলে মেহেদি রাঙানো শুরু হয়ে যেত। বিশেষ করে ‘চানরাতে’ মেহেদি উত্সব চলত পুরো শহরে। ‘আমরা ঢাকাবাসী’ সংগঠন এখনও মেহেদির নকশার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।
ছবি : ফ্লিকার
দক্ষিণ চট্টগ্রামের অগ্রিম ঈদ

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পুরো বাংলাদেশের একদিন আগেই ঈদ পালন করে থাকেন। যদিও এমন প্রথা দেশের আরো অনেক স্থানেই রয়েছে তবে বয়স বিবেচনায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের মির্জাখীল দরবার শরীফের তুলনা নেই। মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা প্রতিবছর রমযান মাস, ঈদ এবং কোরবানি করে থাকেন সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে। দরবার শরীফ সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াইশ বছরের পুরাতন এক ঐতিহ্য এটি। এবছর যদিও দরবার শরীফে পুরাতন সেই বড় জাম’আত অনুষ্ঠিত হবে না। তবে পুরাতন প্রথা ঠিকই বজায় থাকবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীদের মাঝে। এছাড়া, দেশের অন্যান্য সব প্রান্তেই রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। কুমিল্লা নরসিংদী অঞ্চলের মিঠুরী নামের মিষ্টান্ন বা সিলেটের নুনগড়া, বাচ্চাদের বাজি ফোটানোর মত আনন্দ উৎসব তো রয়েছেই। তবে সবকিছু শিকেয় তোলা রইল আসন্ন ঈদের জন্য। হয়ত কোন একদিন সুস্থ পৃথিবীতে আবার বসবে ঈদ আনন্দের হাট।

জুবায়ের আহম্মেদ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

Like Us On Facebook

Facebook Pagelike Widget
© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com