উৎসব পার্বণের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জুড়ি মেলা বেশ কষ্টকর। ঈদ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উৎসবের একটি বললে মোটেই অত্যুক্তি হবেনা। ঈদুল ফিতর মানেই দেশের প্রায় সব বাড়িতে মিস্টিমুখ করা আর আত্মীয়-পরিজনের সাথে দেখা করার সু্যোগ। সেই সাথে অঞ্চলভিত্তিক আলাদা রীতিনীতি তো আছেই। কিন্তু চলমান কোভিড-১৯ সংকটে সেই আয়োজনে ভাটা পড়তে চলেছে। বেঁচে থাকাটাই যেন এবারের ঈদে মুখ্য। হুমায়ুন আহমেদের মত, ‘স্বাধীন দেশের মাটি, দবদবায়া হাঁটি’র অনুভূতি পেতে এবছরটা আপনাকে কাটাতে হবে ঘরে বসেই।
বাংলাদেশের ঈদ ঐতিহ্য – শোলাকিয়ার ঈদ জাম’আত
বাংলার কিংবদন্তি ঈশা খাঁর শাসনকালে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে আধ্যাত্মিক সাধক ও ধর্ম প্রচারক সৈয়দ আহম্মদ কিশোরগঞ্জ জেলার রাজবাড়ীয়া এলাকায় আসেন। ১৮২৭ সালে তিনি সর্বপ্রথম এই এলাকায় একটি মসজিদ স্থাপন করেন। ১৮২৮ সালের শেষভাগে জঙ্গলবাড়ি ও হয়বতনগর এলাকার জমিদারের সহায়তায় সৈয়দ আহাম্মদ তার জমিতে ঈদগাহ মাঠের তৈরি করেন। সেই থেকেই শুরু হয় শোলাকিয়ার ঈদ জাম’আতের। এই জাম’আতের আগতদের জন্য চালু আছে মুসাফিরখানা। সেই সাথে জাম’আত কেন্দ্রিক বাজার এবং মেলা তো আছেই।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পুরো বাংলাদেশের একদিন আগেই ঈদ পালন করে থাকেন। যদিও এমন প্রথা দেশের আরো অনেক স্থানেই রয়েছে তবে বয়স বিবেচনায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের মির্জাখীল দরবার শরীফের তুলনা নেই। মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা প্রতিবছর রমযান মাস, ঈদ এবং কোরবানি করে থাকেন সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে। দরবার শরীফ সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াইশ বছরের পুরাতন এক ঐতিহ্য এটি। এবছর যদিও দরবার শরীফে পুরাতন সেই বড় জাম’আত অনুষ্ঠিত হবে না। তবে পুরাতন প্রথা ঠিকই বজায় থাকবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীদের মাঝে। এছাড়া, দেশের অন্যান্য সব প্রান্তেই রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য। কুমিল্লা নরসিংদী অঞ্চলের মিঠুরী নামের মিষ্টান্ন বা সিলেটের নুনগড়া, বাচ্চাদের বাজি ফোটানোর মত আনন্দ উৎসব তো রয়েছেই। তবে সবকিছু শিকেয় তোলা রইল আসন্ন ঈদের জন্য। হয়ত কোন একদিন সুস্থ পৃথিবীতে আবার বসবে ঈদ আনন্দের হাট।