শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ অপরাহ্ন

বাংলাদেশেও গড়ে উঠেছে অবকাশকালীন রুম, ফ্ল্যাট বা বাসা শেয়ারিং

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০২৪

মার্কিন কোম্পানি এয়ারবিএনবি’র হোস্ট হয়ে বাংলাদেশেও গড়ে উঠেছে অবকাশকালীন রুম, ফ্ল্যাট বা বাসা শেয়ারিং। এতে করে বাসার আদলে পারিবারিক পরিবেশে অল্প টাকায় অবকাশ যাপন করছেন দেশি-বিদেশিরা। এ বাসার বুকিং পদ্ধতি ব্যাংকের মাধ্যমে হওয়ায় এবং বিদেশ থেকে টাকা আসায় লাভবান হচ্ছে সরকারও। পাশের দেশ ভারতে এ খাত ট্যাক্স ফ্রি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে নেই এ সুবিধা। এছাড়া নানা সমস্যায় জর্জরিত এ সম্ভাবনাময় খাত।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট, বান্দরবানসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় ৫০০ জনের মতো হোস্ট তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। রয়েছে ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত গ্রামেও থাকার ব্যবস্থা। সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী প্রতি রাতের জন্য ১ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে রুম বা ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। বিদেশিরা ছাড়া প্রবাসী ও ঢাকার বাইরের লোক সাময়িকভাবে এসব রুম বা ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। রাইড শেয়ারিংয়ের মতো বিশ্বব্যাপী এর জনপ্রিয়তা থাকলেও বাংলাদেশের বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট মালিকরা এখনো এতে অভ্যস্ত নন। তাই এভাবে চুক্তিতে আসতে চান না তারা।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানসিক কারণে বাংলাদেশে এ সুবিধা রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের জন্য বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের প্রথম ধাক্কাটা আসে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলায় পর। এরপর করোনা মহামারি দেখা দেওয়ায় অনেকেই এ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে দেশীয় পর্যটক কিংবা ভ্রমণকারীদের জন্য এখনো এর চাহিদা অনেক।

ট্রাভেল এক্সপার্টের স্বত্বাধিকারী আলমগীর বলেন, এয়ারবিএনবির বাংলাদেশে কোনো অফিস নেই। তারা এদের হোস্টদের মাধ্যমে ব্যবসা করে। এটি আমেরিকাভিত্তিক জনপ্রিয় সংস্থা। তাই সেই মানদণ্ড বজায় রাখতে হয়। অনেক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হোটেল বুকিং দিলে পরে দেখা যায় সেটা তারা ক্যান্সেল করে দিয়েছে। কিন্তু এয়ারবিএনবির মাধ্যমে বুকিং দেওয়ার পর তা ক্যানসেল করলে হোস্টদের ১ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা দিতে হয়।

রাজধানীর গুলশান নিকেতনে এয়ারবিএনবি’র হোস্ট পূজা রোজারিও বলেন, আসল ভ্রমণকারীই যাতে বুকিং দিতে পারে এজন্য আমাদের অনেক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। এর জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক পর্যটক আছেন যারা হোটেলে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। আবার হোটেলে খরচ বেশি বলে অনেকে থাকতে চান না। অনেকে যে দেশে যান সেই দেশের ফ্যামিলির সঙ্গে থাকেন, সেই দেশের ট্রাডিশনাল খাবার, পোশাক ও পরিবেশ সম্পর্কে জানার জন্য এয়ারবিএনবির মাধ্যমে ভাড়া নেন। আর এ ক্ষেত্রে বুকিংয়ের টাকাটা ব্যাংকের মাধ্যমে আসে। তাই সরকারকে এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশে এটি ট্যাক্স ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে।

পূজা রোজারিও বলেন, আমি তিন রুমের বাসা ভাড়া নিয়েছিলাম। এর মধ্যে দুইটি রুম বিদেশিদের থাকার মতো ডেকোরেশন করে ভাড়া দিতাম। এ ব্যাপারে বাড়িওয়ালার সঙ্গে চুক্তিপত্র সই করতে হয়েছে। শুরুর পর মহামারির আগে চার মাস ব্যবসা খুব ভালো ছিল। সবসময় বুকড ছিল। কিন্তু করোনার সময় বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তবে এখন অনেকেই এ ধরনেই ব্যবসা শুরু করেছে। তারা কম টাকায় ভাড়ায় দিচ্ছে। ফলে সার্ভিসও খারাপ দিতে হচ্ছে। তাই এতে ভালোমানের হোস্টদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার মতো।

ধানমন্ডি ও মহাখালীর সুপার হোস্ট রাহাত সালেকিন ২০০৮ সাল থেকে এ ব্যবসায় জড়িত। তিনি বলেন, শুধু দেশের পরিচিত কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে নয়, গ্রামেও এরকম অনেকে আছেন। যেমন আমার পরিচিত এক আপা নরসিংদীতে ব্যবসা করছেন। তিনি সুইডেনে থাকেন। সেখান থেকেই সবকিছু দেখাশুনা করেন। কিন্তু হলি আর্টিসানে হামলার পর বাংলাদেশ ভ্রমণে রেড এলার্ট জারি হলে ব্যবসায় ধস নামে। এরপর করোনা মহামারি।

এ খাতের অপার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরির জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ অনেকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউ আগ্রহ দেখায়নি। এমনকি বিব্রতকর পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা দরকার। কারণ শুধু বিদেশিরা না, অনেক প্রবাসী দেশে এসে ঢাকায় থাকতে চান। কিন্তু আত্মীয়ের বাসায় থাকতে চান না বা আত্মীয় নেই। তিনিও হোটেলে বেশি ভাড়া না দিয়ে এসব বাসা বা রুমে থাকতে পারেন।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু পুলিশের কাছে গেলে বরং সমস্যাটি আইনিভাবে সমাধান না করে বাসাভাড়া কেন দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে হ্যারাসমেন্ট করেন।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের কলাতলী বিচ, হোটেল দেলোয়ার প্যারাডাইজ-২, হোটেল একুশে নীড় (মূলত দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট), হোয়াইট অর্চিডসহ অনেকে হোটেল, রুম ও অ্যাপার্টমেন্ট আছে।

হোয়াইট অর্চিডের হোস্ট মো. নাজমুস বলেন, এ ব্যাপারে সরকারের নজর দেওয়া দরকার। কেউ যদি ঢাকায় কিংবা কোনো নগরীতে চিকিৎসা, চাকরির ইন্টারভিউ ও ভর্তির জন্য যায়। বিশেষ করে নারীরা হোটেলে থাকতে চান না। এদের কাছে বিএনবি খুবই জনপ্রিয়।

কিন্তু এ বিষয়গুলো সরকার জানে না বলে দাবি করেছেন উদ্যোক্তারা। তাদের দাবি, গ্রামের নারীরাও বাসা-বাড়ির রুমভাড়া দিয়ে এ কাজ করতে পারেন। এ খাতে নারীদের সম্পৃক্ততা এবং পর্যটকদের আগ্রহ বাড়াতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে, অনেকে না জেনেই ফ্যামিলির সঙ্গে কিংবা ফাঁকা ফ্ল্যাটে কম টাকায় উঠে ফাইভ স্টার হোটেলের সুযোগ-সুবিধা চায়- এটা উদ্যোক্তাদের কাছে বিব্রতকর বলেও জানান একজন হোস্ট।

এয়ারবিএনবি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। এদের কোনো হোটেল, মোটেল বা ফ্ল্যাট নেই। বরং এসব তারা লিজ নেয়। অনলাইন ফ্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান এজেন্টের মাধ্যমে এগুলো তারা ভাড়া দিয়ে থাকে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com