সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭ অপরাহ্ন

বাংলাদেশিদের ইউরোপে আশ্রয় কঠিন হতে পারে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই অভিন্ন শরণার্থী নীতি কার্যকর হলে অনেক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন ব্লকের বহির্সীমানায়ই নাকচ হতে পারে৷

বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকা ইউরোপের যৌথ মাইগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাসাইলাম প্যাক্ট অবশেষে আলোর মুখ দেখছে। ৮ জুন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, লুক্সেমবার্গে অনুষ্ঠিত ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যে পৌঁছেছে ব্লকের ২৭টি দেশ।

এতদিন ইটালিসহ বেশ কয়েকটি দেশের অনড় অবস্থানের কারণে সেটি আটকে ছিল। অবশেষে গতকালের বৈঠকে রোমের সবুজ সংকেতে সে বাঁধা দূর হয়েছে।

এবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আইন অনুমোদন করে সেই বোঝাপড়া কার্যকর করতে হবে৷ আগামী বছর ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগেই সেই আইন পাস করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷

বর্তমান ইইউ প্রেসিডেন্সির দায়িত্বে আছে সুইডেন। ঐতিহাসিক এই ঐক্যমতের পত দেশটির অভিবাসন মন্ত্রী মারিয়া মালমার স্টেনারগার্ড বলেন, “আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে এই দিনটি আসবে।”

ইইউর অন্য দেশগুলোর মন্ত্রীরাও চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। ব্লকের ২১টি দেশ পূর্ণভাবে এই অভিবাসন নীতিকে সমর্থন জানিয়েছে। যা ঐতিহাসিক বলে মনে করছেন সুইডেনসহ সংশ্লিষ্টদেশগুলো।

তবে ইইউর অভিন্ন এই নীতি কার্যকর হলে বিপদে পড়তে পারেন বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, মরক্কো, টিউনিশিয়া, সেনেগাল ও পাকিস্তানের মতো বেশ কিছু দেশের আশ্রয়প্রার্থীদের।

কারণ নতুন নিয়মে আশ্রয় আবেদনগুলো ইইউর বহিঃসীমান্তে নাকচ হতে পারে। আবার যারা যেকোন ভাবে মূল ভূখণ্ডে ঢুকতে পারবেন, তাদেরও অন্য দেশে স্থানান্তরিত করা যাবে৷

ইইউ-র অভিন্ন শরণার্থী নীতির রূপরেখার মূলমন্ত্র হলো, শরণার্থীদের প্রশ্নে সব সদস্য দেশ পরস্পরের সহায়তা করতে বাধ্য৷ সেই কাজ দুইভাবে করা যাবে৷ গ্রিস ও ইটালির মতো দেশে শরণার্থীর ঢল নামলে পোল্যান্ড বা সুইডেনের মতো অন্য সদস্য দেশগুলো তাদের মধ্যে কিছু মানুষকে আশ্রয় দিতে পারে৷ ফলে শরণার্থীদের আরও সুষম বণ্টন সম্ভব হবে৷ শরণার্থী গ্রহণ করতে না চাইলে কোনো দেশ আর্থিক সহায়তার মাধ্যমেও সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে৷ শরণার্থীপ্রতি ২০,০০০ ইউরো ইইউ তহবিলে জমা করে দায়িত্ব পালন করতে পারে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির মত দেশ ৷

ইইউ দেশগুলির মধ্যে বোঝাপড়ার আরেকটি অংশ চরম বিতর্কের কারণ হয়ে উঠেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহির্সীমানায় শরণার্থীদের আশ্রয়ের আবেদন দ্রুত বিবেচনা করে সেখান থেকেই ‘কম সম্ভাবনার’ আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে৷ অর্থাৎ যে সব শরণার্থী ‘নিরাপদ’ হিসেবে বিবেচিত দেশ থেকে আসছেন, অন্য কোনো ন্যায্য কারণ না থাকলে তাঁদের ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে৷

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান সভাপতি দেশ সুইডেন এই দুটি মৌলিক প্রস্তাবের মাধ্যমে ঐকমত্য সম্ভব করতে পেরেছে৷ বেলজিয়ামের শরণার্থীদের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী নিকোল ডে মোর একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী মরক্কো, আলজেরিয়া, টিউনিশিয়া, সেনেগাল, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশের নাগরিকদের আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতির সম্ভাবনা কম৷

ইউরোপকে অভেদ্য দুর্গ হিসেবে প্রস্তুত করার এমন উদ্যোগের সমালোচনা করছে অনেক সংগঠন ও রাজনৈতিক দল৷ অক্সফ্যাম জানিয়েছে, ইইউ-র আশ্রয় প্রণালীর গভীর দুর্বলতা না কাটিয়ে শরণার্থীদের আগমনের পথে বাধা সৃষ্টি করার সংকেত দিচ্ছে এই রাষ্ট্রজোট৷

জার্মানির জোট সরকারের শরিক সবুজ দলের মধ্যেও এই বিষয়টিকে নিয়ে গভীর অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে৷ দলের নেতা ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক অবশ্য ইইউ দেশগুলির মধ্যে বোঝাপড়ার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, এমন আপোশ মীমাংসা মোটেই সহজ ছিল না৷ জার্মানির ফেডারেল সরকার একাই সিদ্ধান্ত নিতে পারলে বোঝাপড়া একেবারেই ভিন্ন হতো৷

বেয়ারবক আরো বলেন, জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার ইউরোপীয় বহির্সীমানায় শরণার্থীদের আটক করে তাদের আবেদন বিবেচনার প্রস্তাবে সায় না দিলে অন্য সদস্য দেশগুলি শরণার্থীদের সুষম বণ্টনের প্রস্তাব মেনে নিতো না৷

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com