শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে কৃষি, গ্রাম–শহরের যোগাযোগ

  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১

কৃষি খাতের সাফল্য এবং গ্রাম ও শহরের মধ্য যোগাযোগ সচল থাকায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে করোনায় সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকায় এবং সরকার তাতে বিনিয়োগ বাড়ানোয় শ্রমজীবী মানুষ আশঙ্কার চেয়ে কম দারিদ্র্যের মুখে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি সংস্থা ইফপ্রির বিশ্ব খাদ্যনীতি প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে গত মার্চ পর্যন্ত সময়ের তথ্য স্থান পেয়েছে।

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল রাতে এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনার আয়োজন করা হয়। তাতে ইফপ্রির কর্মকর্তারাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যনীতি বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেন। তাঁরা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র ও অভুক্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলো। তবে এ পরিস্থিতির মধ্যেও বিশ্বের যে কটি দেশের ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ঠিক রাখতে নগদ অর্থসহায়তা দিতে হবে। গ্রামের সঙ্গে শহরের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক লেনদেন সচল রাখতে হবে। তাহলে করোনার ধাক্কা সামলানো সহজ হবে। পাশাপাশি জনগণকে দ্রুত টিকা ও করোনা চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে। তা না করলে বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হবে।

প্রতিবেদন বলছে, লকডাউনের (২০২০) সময়ে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের খাদ্য গ্রহণ ২৫ শতাংশ কমে আসে। ৪৭ শতাংশ মানুষের আয় কমে যাওয়ায় তারা খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়। কিন্তু লকডাউন উঠে যাওয়ার পর পরিস্থিতির সবচেয়ে দ্রুত উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের আর্থিক পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হয়। মূলত প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ায় এবং কৃষি উৎপাদন ভালো হওয়ায় বাংলাদেশ এই উন্নতি করতে পেরেছে। বাংলাদেশ নগদ সহায়তা দেওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি দ্রুত চাঙা হয়েছে।

এ সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের জিডিপি সবচেয়ে বেশি ছিল। আর জিডিপির দিক থেকে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল ভারতের। দেশটির জিডিপি গত বছর ঋণাত্মক ছিল—মাইনাস ৭ দশমিক ২ শতাংশ। পাকিস্তানের জিডিপিও ছিল ঋণাত্মক।

আলোচনায় ইফপ্রি–দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান শহিদুর রশীদ বলেন, করোনার মধ্যে বাংলাদেশ একাধিকবার বন্যার মুখে পড়েছে। দুটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে। কিন্তু এর মধ্যেও দেশটির প্রধান কৃষিপণ্যগুলোর উৎপাদন খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কৃষি অর্থনীতির এই সাফল্যের কারণে বাংলাদেশে করোনায় যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল ততটা হয়নি।

ইফপ্রির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে অনেক আগে থেকে শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ও কৃষিসহায়ক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। করোনার সময় বাংলাদেশ সরকার কৃষি উপকরণ পরিবহন এবং সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো লকডাউনের সময় এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। তা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

বাংলাদেশের শহরের দারিদ্র্য পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকাসহ বেশির ভাগ বড় শহরে দরিদ্র মানুষের প্রধান জীবিকা অনানুষ্ঠানিক খাতের ওপর নির্ভরশীল। তাদের বড় অংশ মূলত বস্তিতে বসবাস করে। করোনার কারণে এই অনানুষ্ঠানিক খাত ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে শহরের দরিদ্র মানুষের আয় কমে যায়। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের এক–তৃতীয়াংশ মানুষ খাবার কেনা বাবদ পারিবারিক ব্যয় ২৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, বাংলাদেশ অন্য দেশের মতো কঠোর লকডাউন দেয়নি। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের উৎপাদনও অব্যাহত ছিল। গ্রাম ও শহরের মধ্যে যোগাযোগ থাকলে অর্থনৈতিক ধাক্কা সহজে মোকাবিলা করা যায়। তবে দারিদ্র্য বিমোচনে এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশকে আগামী এক দশক জিডিপি ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার টিকা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অনেক পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান সব নাগরিককে টিকা দিতে না পারলে পূর্ণোদ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরতে পারবে না।

ইফতেখার মাহমুদ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com