সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। সিলেট শহর থেকে রাতারগুলের দূরত্ব প্রায় ২৩ কিলোমিটার।
দেখার কী আছে: দেশের বৃহত্তম জলাবন। রাতারগুল ছয় থেকে সাত মাস পানির নিচে থাকে।
যাতায়াত: সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকা থেকে অটোরিকশায় রাতারগুলে যেতে জনপ্রতি ৫০ টাকা ভাড়া অথবা অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে গেলে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা লাগবে। প্রাইভেট কার নিয়ে গেলে আসা-যাওয়ার ভাড়া পড়বে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।
খাবার: রাতারগুলের তিনটি ঘাটেই হালকা খাবার পাওয়া যায়। যার দাম ১০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। চৌরঙ্গী ঘাটে রাতারগুল হলিডে রিসোর্টে আলাদা রেস্তোরাঁয় খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বারবিকিউ, ভাত, ভর্তা, মুরগি, গরু, খাসি। জনপ্রতি ৩০০ টাকার মধ্যে খাওয়া যাবে।
থাকার জায়গা: তিনটি ঘাটের মধ্যে চৌরঙ্গী ঘাটে রয়েছে রাতারগুল হলিডে হোম রিসোর্ট। যেখানে পর্যটকেরা রাত্রিযাপন ও খাওয়াদাওয়া করতে পারবেন। সেখানে একটি কক্ষ কিংবা পুরো ভিলা ভাড়া নেওয়া যাবে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে। একটি কক্ষে একা অথবা পুরো ভিলায় ১৪ জন থাকা যাবে।
স্থান: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। শহর থেকে অটোরিকশায় অথবা ব্যক্তিগত যানবাহনেও যাওয়া যায়।
দেখার কী আছে: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত, পাথরের মধ্যে পানির প্রবাহ, পাহাড়ের গায়ে সাদা মেঘের খেলা, ছোট-বড় পাথর। গ্রামীণ পরিবেশ, নৌকাভ্রমণ তো আছেই।
যাতায়াত: নগরের আম্বরখানা এলাকায় অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে জনপ্রতি ১৬০ টাকা ভাড়ায় হাদারপাড় এবং সেখান থেকে নৌকায় করে বিছনাকান্দি যেতে হয়। সারা দিনের জন্য সিনএজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নেওয়া যাবে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। হাদারপাড় থেকে নৌকায় বিছনাকান্দি আসা-যাওয়াসহ খরচ পড়বে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা।
খাবারদাবার: খাবারের কিছু রেস্তোরাঁ আছে। যেগুলোয় মাছ, মাংস, ডাল পাওয়া যায়। অথবা হালকা খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে। হালকা খাবার সেরে নেওয়া যাবে ১০০ টাকার মধ্যে। ভাত, মাছ, মাংস খেতে জনপ্রতি খরচ পড়বে ২০০ টাকার মতো।
স্থান: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় লালাখাল অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ৩৭ কিলোমিটার।
দেখার কী আছে: লালাখালে দেখা মিলে নীল পানির। যার জন্য লালাখালকে ‘নীল নদ’ও বলে থাকেন অনেকে। ঘন সবুজ বন, নদী, চা-বাগানের দেখা মিলবে।
যাতায়াত: লালাখালে যাওয়া যাবে প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা ও বাসে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনায় নগরের ধোপাদিঘীর পাড় এলাকার স্ট্যান্ড থেকে সারিঘাট। অথবা বাসে নগরের সোবহানীঘাট এলাকা থেকে সিলেট টু জাফলংগামী বাসে সারিঘাট।
ভাড়া: সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ৫০ টাকা করে এবং লেগুনা ও বাসে ৪০ টাকা করে যাওয়া যাবে সারিঘাট।
খাবার-দাবার: লালাখাল ঘাটের পাশেই রয়েছে নাজিমগড় ওয়াইল্ড রিসোর্ট ও রিসোর্টের রেস্তোরাঁ। রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া সেরে নিতে পারবেন। ভাতসহ অন্যান্য খাবার খাওয়া যাবে জনপ্রতি ১০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকার মধ্যে। সারিঘাট বাজারেও খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। সেখানে ভাত, ডাল, মাছ, মাংস খাওয়া যাবে জনপ্রতি ৫০০ টাকার মধ্যে।
থাকার জায়গা: লালাখাল ঘাটের পাশে নাজিমগড় ওয়াইল্ড রিসোর্ট। সেখানে কক্ষের ভাড়া আকার ভেদে ১১ থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে।
আরও দেখা যাবে: লালাখালের পাশে জাফলং, মায়াবী ঝরনা ও তামাবিল স্থল বন্দর অবস্থিত।
স্থান: জাফলং সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ৫৭ কিলোমিটার।
দেখার কী আছে: জাফলং জিরো পয়েন্ট। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। পিয়াইন ও ডাউকি নদ ও মায়াবী ঝরনা।
যাতায়াত: সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার জন্য সোবহানীঘাট এলাকা থেকে গেটলক বাসে জনপ্রতি ১৫০ টাকা করে অথবা সাধারণ বাসে ১১০ টাকা ভাড়া, লেগুনায় যাওয়া যাবে ১০০ টাকায়। জাফলং পৌঁছে জিরো পয়েন্টে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো যাবে ঘণ্টাপ্রতি ৩০০ টাকায়। জাফলং জিরো পয়েন্টে থেকে পাশেই ‘মায়াবী ঝরনা’ নৌকায় সেখানে আসা–যাওয়ার ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা।
থাকার জায়গা: জাফলং বিজিবি ক্যাম্প ও মামার দোকান এলাকায় একাধিক আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট আছে। যেগুলো আকারভেদে দুই থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া।
খাওয়ার ব্যবস্থা: জাফলংয়ের বিজিবি ক্যাম্প ও মামার দোকান এলাকায় ভাত, মাছ ও মাংস খাওয়া যাবে ৫০০ টাকার মধ্যে।
স্থান: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সাদাপাথরের অবস্থান। সিলেট শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ৪৩ কিলোমিটার।
যাতায়াত: সাদাপাথর যাওয়ার জন্য প্রথমে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকায় অটোরিকশা স্ট্যান্ড অথবা মজুমদারি এলাকার বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হবে।
ভাড়া: বিআরটিসি বাসে ভাড়া ৬০ টাকা ও সাদাপাথর পরিবহন নামের বাসের ভাড়া ৭০ টাকা। অটোরিকশায় যাওয়া যাবে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়ায়।
থাকার ব্যবস্থা: সাদাপাথরে থাকার জন্য আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি রয়েছে রিসোর্ট। সাদাপাথর রিসোর্টে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে ভাড়া সাড়ে তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে।
খাবার: ভাত, রুটি, ভর্তা, মাছ, হাঁস, মুরগি ও গরুর মাংস দিয়ে খাওয়া যাবে ২০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
স্থান: বাইশ টিলা সিলেট সদর উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। শহর থেকে অটোরিকশায় করেই বাইশ টিলা এলাকায় যাওয়া যায়।
ভাড়া: শহর থেকে অটোরিকশার ভাড়া পড়বে ৩০০ টাকার মতো।
দেখার কী আছে: যাওয়ার পথে সিলেট বিমানবন্দর, বেশ কয়েকটি টিলা, হাওর-বিল, বর্ষা মৌসুমে বাউয়ার কান্দি, উফতার হাওর, বাকগুল হাওর পানিতে পরিপূর্ণ থাকে।
খাবারদাবার: বাইশ টিলা এলাকায় হালকা খাবারের কিছু দোকান রয়েছে। তবে পাশে বিমানবন্দর এলাকায় ফুড কোর্ট রয়েছে, যাতে দেশীয় খাবার পাওয়া যাবে। হালকা থেকে ভারী খাবারের দাম পড়বে ৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। পাশাপাশি বিমানবন্দর এলাকায় গ্র্যান্ড সিলেট রিসোর্ট রয়েছে।
থাকার জায়গা: বাইশ টিলা এলাকায় থাকার ব্যবস্থা নেই। তবে পাশে বিমানবন্দর এলাকায় বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। সেগুলোয় কক্ষের আকারভেদে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া পড়বে।
কোথায় অবস্থিত: ঢাকার দোহার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী একটি স্থান। ঢাকা শহর থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার।
দেখার আছে কী: ঘাটের পূর্ব পাশে বিশাল চর এলাকা, যা দর্শনার্থীদের সাগরপাড়ের বেলাভূমির কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। সামনে আছে বিশাল পদ্মা নদী, যা দেখলে মনে হবে সাগরপাড়ে বসে আছি। ইচ্ছা করলে নৌকা ও স্পিডবোটে করে পদ্মা নদী ঘুরে বেড়ানো যাবে।
যাবেন কীভাবে: ঢাকার গুলিস্তানের হজরত গোলাপ শাহ (র.)–এর মাজারসংলগ্ন সড়কে ‘দ্রুত’ ও ‘যমুনা’ পরিবহন সরাসরি মৈনটঘাটে যায়। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগে।
ভাড়া: জনপ্রতি ১১০ টাকা। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যাতায়াত করে। এ ছাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা ভাড়ায় মৈনটঘাট থেকে প্রতিদিন অসংখ্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও বছিলা এলাকায় যাতায়াত করে থাকে।
কী খাবেন: মিনি কক্সবাজারখ্যাত মৈনটঘাটে ১০টির বেশি খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে। এগুলো মূলত ভাতের হোটেল। পদ্মা নদীর বিভিন্ন প্রজাতির তাজা মাছ পাওয়া যায়।
খাবারের দামদর: ইলিশ মাছ প্রতি টুকরা ১২০ থেকে ১৫০ টাকা (কিছু কমবেশি হতে পারে)। মৈনটঘাট পৌঁছানোর আগে কার্তিকপুর বাজারে বেশ কিছু নামকরা মিষ্টির দোকান আছে। এখানকার জলশিরা মিষ্টি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা। ভালো মানের দই প্রতি কেজির দাম পড়বে ১৮০-২০০ টাকা।
কোথায় থাকবেন: মৈনটঘাট এলাকাটি মূলত পদ্মা নদীর পাড়ে হওয়ায় বিভিন্ন সময় প্রবল ভাঙনের কবলে পড়ে। তাই এখানে রাতে থাকার জন্য কোনো হোটেল নেই। এখান থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নবাবগঞ্জে ভালো মানের হোটেল আছে; জনপ্রতি ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা (প্রতি রাত)।
কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান: ঢাকা থেকে নবাবগঞ্জ হয়ে সড়কপথে যাওয়ার সময় দেখতে পাবেন আগলা পূর্ব পাড়া এলাকায় অবস্থিত মহাকবি কায়কোবাদের জন্মস্থান। নবাবগঞ্জ সদর এলাকার কাছাকাছি জমিদারবাড়ি, জমিদার কোকিল প্যারির দালান, পাশে রয়েছে বিখ্যাত খেলারাম দাতার কুঠির। দোহারে রয়েছে লক্ষ্মীপ্রসাদ এলাকায় পোদ্দারবাড়ি মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর।
নিরাপত্তা: নৌ পুলিশ এখানে দায়িত্ব পালন করে। মুঠোফোন নম্বর ০১৩২০-১৬৪১২০।
ভ্রমণ সতর্কতা: এটি সমুদ্রসৈকত নয়, পদ্মা নদীর পাড়ে পানি কমবেশি হতে পারে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পাড়ে গোসল করতে নামতে হবে এবং সাঁতার জানা না থাকলে পানিতে না নামাই ভালো।
কোথায় অবস্থিত: বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক, সীতাকুণ্ড পৌর সদর। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে।
দেখার আছে কী: ইকোপার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এক পাহাড়ে কাছাকাছি দূরত্বে দুটি ঝরনা। গাছগাছালির সবুজ সৌন্দর্য গলিয়ে যেতে যেতে সুনসান নীরবতায় ঝিঁঝিপোকার ডাক ও নানা জাতের পাখির কলরব শোনা যায়। অজগর, শজারু, বনবিড়াল, বনমোরগ ও হনুমানের দেখাও মেলে।
যাবেন কীভাবে: ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের গেট অথবা ট্রেনে সীতাকুণ্ড স্টেশন কিংবা কুমিরা স্টেশন কিংবা চট্টগ্রাম স্টেশনে নেমে যাওয়া যায়। চট্টগ্রামের এ কে খান মোড় কিংবা অলংকার মোড় থেকে ঢাকামুখী লোকাল বাস, উত্তরা বাস, চয়েস বাস, ৮ ও ১৭ নম্বর মিনিবাসে করে ইকোপার্ক গেটে আসা যায়।
ভাড়া: চট্টগ্রাম থেকে ইকোপার্ক গেট পর্যন্ত জনপ্রতি সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ভাড়া। অটোকিশায় ইকোপার্কের মূল ফটক পর্যন্ত যাওয়া যায়। আবার ঝরনার ওপর স্টেশন পর্যন্ত যাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে দরদাম করে যেতে হবে। রিজার্ভ অটোরিকশা ৫০০ টাকা পর্যন্ত নেয়।
কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান: সুপ্তধারা ঝরনা, সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথধাম, গুলিয়াখালী সৈকত, বাঁশবাড়িয়া সৈকত, কুমিরা ৭০০ মিটারের জেটি। আরও আছে সীতাকুণ্ডের সহস্রধারা ঝরনা-২, ঝরঝরি ঝরনা, আশপাশের উপজেলায়ও আরও কিছু ঝরনা আছে।
প্রথম আলো