আমানতের সংকটে ধসে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিবি) কিনে নিয়েছে আরেক মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংকশেয়ারস। এর ফলে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের আমানতকারীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংকের আমানতকারী হবেন।
যদিও চলতি মাসের শুরুতে এসভিবি’র বিপর্যয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা সম্পর্কে শঙ্কার উদ্রেক এবং বিশ্বজুড়ে ব্যাংকের শেয়ারগুলোতে তীব্র পতনের সৃষ্টি করেছিল। সোমবার (২৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এর আগে ব্যাংকিংখাতে বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যে বিপর্যয়ের মুখে পড়া সুইজারল্যান্ডের অন্যতম বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইস ব্যাংক কিনে নিয়েছিল বৃহত্তম সুইস ব্যাংক ইউবিএস। মূলত আর্থিকখাত নিয়ে উদ্বেগের জেরে সুইজারল্যান্ড সরকারের মধ্যস্থতায় ক্রেডিট সুইস কিনে নেয় সুইস এই ব্যাংকিং জায়ান্ট।
বিবিসি বলছে, চলতি মাসের শুরুতে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের (এসভিবি) বিপর্যয়ের পর দেউলিয়া হয়ে যায় সিগনেচার ব্যাংক নামে যুক্তরাষ্ট্রের আরও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আর তাই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বা ভীতি এখনও রয়ে গেছে এবং এর জেরে গত শুক্রবার ব্যাংক শেয়ার ব্যাপকভাবে কমে গেছে।
২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর থেকে এই দুই ব্যাংকের বিপর্যয় যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকখাতে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক কিনে নেওয়ার এই চুক্তিটি ঘোষণা করে ইউএস ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন (এফডিআইসি)। ঘোষিত এই টেকওভার চুক্তির অধীনে, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের ১৭ টি সাবেক শাখার সবগুলোই সোমবার ফার্স্ট সিটিজেনস ব্র্যান্ডের অধীনে খুলবে।
এছাড়া এসভিবি গ্রাহকদের তাদের বর্তমান শাখা ব্যবহার করে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। মূলত ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংক থেকে তাদের অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণভাবে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছে বলে নোটিশ না পাওয়া পর্যন্ত তারা বর্তমান শাখা ব্যবহার করবেন।
বিবিসি বলছে, নর্থ ক্যারোলিনার রেলে-ভিত্তিক ফার্স্ট সিটিজেনস ব্যাংক নিজেদেরকে আমেরিকার সবচেয়ে বড় পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক বলে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমস্যাগ্রস্থ ব্যাংকগুলোর বৃহত্তম ক্রেতাদের মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে এই ব্যাংকটি।
উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে যাত্রা শুরু করে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক, শুরুতে এটির নাম ছিল ক্যালিফোর্নিয়া ব্যাংক। যাত্রা শুরুর পর গত দশকে ব্যাংকটির বিস্তার ঘটে সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও বাইরের বিভিন্ন দেশে ৮ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি কর্মী ছিল এসভিবির। এই কর্মীদের অধিকাংশই অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শাখার।
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক মন্দা শুরু হয়েছিল। সে সময় দেশটির ছোট-বড় অনেক ব্যাংক একের পর এক দেউলিয়া হয়ে যায়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এসভিবির এভাবে ধসে পড়া মার্কিন অর্থনীতির জন্য অশুভ সংকেত বলেই মনে করা হয়।