প্রায় সব বড় সেতুর মধ্যে কার্ভ থাকে, বড় বড় সেতুগুলো সোজা না বানানোর পরিবর্তে বাঁকা করে বানানো হয় কেন? এমন প্রশ্ন মাথায় আসতেই পারে।
.
অনেকেই ভাবতে পারেন কেবলমাত্র সৌন্দর্য রক্ষার্থে সেতুগুলো বাঁকা করে বানানো হয়। সোজা হলে তো অনেক খরচই হয়তো কমে যেতো।
.
কিন্তু বিষয়টা এমন নয়।আসলে এই কার্ভের পিছনে অনেক গুলো কারন আছে তার মধ্যে স্ট্রাকচারাল,সার্বিক সুবিধা, নদী-পথ, স্রোত সহ আরো কিছু মাইনর কারন ও আছে। এখানে সৌন্দর্য বড় কথা না, এবং সেতুকে বেশিদিন টিকে থাকতে হলে সেতু তে কার্ভ প্রয়োজন হতে পারে,লং স্প্যানের বেশীরভাগ ব্রিজেই কার্ভ থাকে, আর সেই জন্য রড সিমেন্ট বেশি লাগলেও কিছু করার নেই।
.
সেতু বাঁকা করে বানানোর কারণসমূহ তুলে ধরা হলো-
.
স্ট্রাকচারাল কারনঃ
.
ব্রিজ স্ট্রাকচারে সাধারনত ৩ ধরনের লোড কাজ করে,
.
1.কাঠামোর নিজস্বলোড (Self Weight)
2.যানবাহনের সেলফ ওয়েট ও ইমপ্যাক্ট লোড
3.এনভায়রমেন্টাল বা পারিপার্শ্বিক লোড
.
সেতুতে গাড়ি ওঠার সময় কম্পনজনিত চাপ সৃষ্টি হয়। বাঁকা করে তৈরি করা হলে এটি পুরো সেতুতে ছড়িয়ে পড়ে ফলে কম চাপ পড়ে। সোজা হলে পুরো সেতুতে ছড়ায় না ফলে একই জায়গায় বেশি লোড পড়ে সেতু ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
.
যানবাহনের ইমপ্যাক্ট লোডঃ
ব্রিজে যানবাহন পার হওয়ার সময় ব্রিজের উপর বেগের গতি জনিত এক প্রকার কম্পন উৎপন্ন হয়।দীর্ঘ স্প্যানের ব্রিজের ক্ষেত্রে এই কম্পনের মান ও বেশী। যেহেতু সেতু দীর্ঘ স্প্যানের তাই এই কম্পন জনিত প্রভাব কমানোর জন্য সেতু তে কার্ভ রাখা হয়েছে , সব লং ব্রিজেই এধরনের কার্ভ রাখা হয়। ( শর্ট স্প্যান এর জন্য এই কম্পন বেশী না হবার কারনে স্ট্রেইট রাখা যায়)
.
সেতুর টর্ক ও মোমেন্ট ঠিক রাখার জন্য, ও বন্যার সময় পানির অধিক চাপেও পায়ার গুলো সেতুর কাঠামোকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
সেতুর মোমেন্টাম ঠিক রাখার জন্য মাঝখানে ধনুকের ন্যায় বাকানো হয়। যার ফলে বন্যার সময় পানির অধিক চাপেও পিলারগুলো সেতুর কাঠামোকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
.
পানির নিচে মাটির চাপ সব জায়গাতে সমান থাকেনা, সেই দিকটা বিবেচনা করা হয়। স্ট্রেইট করতে গেলে সব জায়গায় সয়েল কন্ডিশন ভালো হতে হবে, বাস্তবে যার সম্ভাবনা কম।
.
যদি কখনো সেতুর কোন অংশ ভেঙ্গে যায় তাহলে সেটা দূর থেকে দেখা যাবে. এর ফলে অনেক বড় দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
.
সেতুকে স্রোতের বিপরীতে অধিক চাপ (স্রোতের) সহনশীল এবং বড় মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল করে গড়ে তোলার জন্য।
এছাড়াও সাধারণ সেন্সে আরও কিছু কারণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন জোর সম্ভাবনা রয়েছে যে….
.
দু’পাড়ের একই স্থানে সেতুটির সাথে মূল সড়কের সংযোগ-রাস্তা তৈরির জন্য উপযুক্ত গঠনবিশিষ্ট মাটি না পাওয়া ।
.
উভয়পাড়ে মূলসড়ক (যে সড়কের সাথে সেতু সংযুক্ত হবে) একই সরলরেখায় না থাকা।
.
ড্রাইভার দের মনযোগ ঠিক রাখার জন্য যেমনঃ ঘুম সহ অন্যদিকে মনযোগ চলে যাওয়া থেকে বিরত রাখা
বড় বড় সেতুগুলো বাঁকা হওয়ার অন্যতম আরেকটা কারন দূর্ঘটনা প্রতিরোধ। একটানা সোজা গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়ই চালকগন ক্লান্তি অনুভব করেন এবং মাঝেমধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। যা দূর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। তাই বড় সেতুগুলো আঁকাবাঁকা হয়।
.
উপরোক্ত কিছু কারন সব লং স্প্যানের ব্রিজ এর জন্যেই একই, আর এখানে সেভাবেই তুলে ধরার চেস্টা করা হয়েছে। ব্রিজ এক্সপার্ট দের মতে হয়তো আরো অনেক টেকনিক্যাল কারন থাকতে পারে।