শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ অপরাহ্ন

ফ্রান্সে স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের

  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩

উচ্চশিক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় বেশ উপরের দিকেই রয়েছে ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকেও অসংখ্য শিক্ষার্থী ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার জন্য যেয়ে থাকে। শিল্প সাহিত্যের আঁতুড়ঘর ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সাহিত্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রকৌশলসহ নানা বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে।

ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার মাধ্যম

ফ্রান্সেরআন্তর্জাতিক মানের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে আপনি লিটারেচার, হিস্ট্রি, ল’, স্যোশাল সাইন্স, বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন, ফিজিক্স, ম্যাথেমাটিকস, ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্যুরিজম, ডিজাইন ক্রাফট, থিয়েটার ও ফিল্ম, ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক, স্কাপচার, ড্রয়িং, পেইন্টিং, ফ্যাশন ডিজাইনিংসহ নানাবিধ বিষয়ে পড়তে পারবেন।

বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ানোর মাধ্যম ফ্রেঞ্চ। তাই, এদেশে পড়তে চাইলে আপনাকে অব্যশই জানতে হবে ফেঞ্চ ভাষা। তবে, শুধু ফেঞ্চ নয়, অল্প পরিসরে হলেও ইংরেজিতেও এদেশে কোর্স অফার করা হয়ে থাকে। তাই আবেদনের সময় খেয়াল করবেন কোন ভাষায় পাঠদান করা হয়ে থাকে।

ফ্রান্সে পড়ার যোগ্যতা

আপনি ফ্রান্সে ব্যাচেলর, মাস্টার্স অথবা পিএইচডি যেকোনো প্রোগ্রামের জন্য পাড়ি জমাতে পারবেন। ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য অবশ্যই এইচ.এস.সি আর মাস্টার্সের জন্য ব্যাচেলর এবং পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য অবশ্যই আপনার মাস্টার্স ডিগ্রী থাকতে হবে।

দেশটিতে আপনার কোর্স যদি ফ্রেঞ্চ ভাষায় হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে ফ্রেঞ্চ ভাষায় দক্ষতার প্রমাণপত্র দিতে হবে। আর এজন্য আপনার যোগাযোগ করতে হবে Alliance Francaise -এ। আর সেখান থেকে করে ফেলতে হবে ফ্রেঞ্চ ভাষার ওপর কোর্স।

ইংরেজি ভাষার কোর্সের জন্য আপনাকে আইইএলটিএস/টোয়েফল সনদ দিতে হবে। ব্যাচেলরে আবদনের জন্য আইইএলটিএস স্কোর ন্যূনতম ৫.৫ চাওয়া হলেও ৬.০ থাকলে আপনার আবেদন গৃহীত হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। আর মাস্টার্স প্রোগ্রামে আবেদন করতে ৬.০ প্রয়োজন পড়বে সেক্ষেত্রে ৬.৫ থাকলে আপনার ভিসা ও অন্যান্য সুবিধা পেতে সুবিধা হবে। আর টোয়েফল দিয়ে আবেদন করতে আপনাকে ব্যাচেলরে আবেদনের জন্য ৫৫০ আর মাস্টার্সের জন্য ৬০০ স্কোর অর্জন করতে হবে। তবে আপনার স্কোর বেশি থাকলে ভিসা আবেদনে আপনি এগিয়ে থাকবেন।

অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইংরেজি পারদর্শিতা যাচাই করার জন্য অনলাইন টেস্ট বা স্কাইপিতে ইন্টারভিউ নিয়ে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন প্রক্রিয়া

ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদনের সময়সীমা নির্ধারিত থাকে। এখানে বছরে তিনটি সেমিস্টার পড়ানো হয়ে থাকে।

ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 

আবেদন পত্র

সকল একাডেমিক পরীক্ষার মূল সনদ ও মার্কশিট এর কপি

জন্মনিবন্ধন, জাতীয়তা সনদ ও পাসপোর্ট- এর কপি

আইইএলটিএস/টোয়েফল এবং ফ্রেঞ্চ ভাষায় দক্ষতার সনদ

মোটিভেশন লেটার/ রেফারেন্স লেটার/ সিভি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

এই সকল ডকুমেন্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভরশীল। তাই, আবেদনের পূর্বে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভালোভাবে দেখে নিতে ভুলবেন না।

টিউশন ফি

২০১৯ সালের তথ্য ও উপাত্ত অনুযায়ী, ফ্রান্সের লাইসেন্সড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর কোর্সে পড়তে আনুমানিক ২৭৭০ ইউরো/ প্রতি বছর আবার, মাস্টার্স কোর্সে পড়তে প্রয়োজন পড়বে ৩৭৭০ ইউরো / প্রতি বছর। ডক্টোরাল কোর্সের জন্য লাগবে ৩৮০ ইউরো/ প্রতি বছর। তবে এই হিসাব নিকাষ বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

আপনার আবেদন গৃহীত হলে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত টিউশন ফি প্রদান করতে হবে।

স্কলারশিপ 

ফ্রান্সে সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। এসব স্কলারশিপে আংশিক বা পুরো টিউশন ফি মওকুফ হতে পারে। কিছু কিছু স্কলারশিপে মাসিক ভাতাও প্রদান করা হয়ে থাকে।

ব্যাংক সলভেন্সি

ফ্রান্সে ভিসার ক্ষেত্রে ব্যাংকে আপনাকে ১০ থেকে ১৫ হাজার ইউরো দেখাতে হবে। যে ব্যক্তি আপনাকে ব্যাংক স্পন্সরশিপ বহন করবেন, সে যদি প্রথম রক্তের সম্পর্কের অভিভাবক হন, তাহলে ভিসার ক্ষেত্রে আপনি সুবিধা পাবেন। এছাড়া অন্য যেকোনো অভিভাবক আপনাকে স্পন্সর করতে পারবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক কাগজপত্র ও প্রমাণাদি এম্বাসিতে জমা করতে হবে। আপনি চাইলে নিজের নামেও ব্যাংকে টাকা দেখাতে পারেন। ভিসা পাবার পর আপনি চাইলে এই টাকা যেকোনো সময় তুলে নিতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, ফ্রান্সে প্রবেশকালে ইমিগ্রেশনে আপনাকে ব্যাংক সলভেন্সি পেপার দেখানোর জন্য অনুরোধ করতে পারে। সুতরাং, যাত্রার সময় সলভেন্সি পেপার আপনার সঙ্গেই রাখবেন।

ভিসা আবেদন

ভিসার জন্য প্রথমে এম্বাসিতে ই-মেইল করে এপোয়েনমেন্ট নিতে হবে। সকল কাগজপত্র সহকারে এম্বাসিতেতে উপস্থিত হলে ওই দিনই দ্বিতীয়বারের জন্য আরেকটি এপন্টমেন্ট দেওয়া হবে। ভিসার সকল কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর আপনাকে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে ভিসা পাবার জন্য।

ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

সাধারণত যে সকল কাগজপত্র ভিসার জন্য জমা করতে হবে তা নিচে দেওয়া হল। তবে এম্বেসিতে যোগাযোগ করে আপনাকে অবশ্যই চেকলিস্টটা আরেক বার দেখে নিতে হবে, কারণ এম্বেসি অনেক সময় তাদের চেকলিস্ট পরিবর্তন করে থাকে।

পাসপোর্ট (অবশ্যই ৬ মাসের অধিক মেয়াদ থাকতে হবে)

অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম ও পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি

ফ্লাইট বুকিং টিকেট (এটা করতে কোনো টাকা লাগে না, শুধু বুকিং দিবেন)

ভিসা অ্যাপ্লিকেশান ফি বা স্কলারশিপ লেটার (যদি পেয়ে থাকেন। স্কলারশিপ প্রাপ্তদের ফি লাগে না)

হেলথ ইস্যুরেন্স (যতদিন এর কোর্স ততদিনের করতে হবে)

জন্ম নিবন্ধন

সিভি

সকল একাডেমিক ডকুমেন্টস

ইউনিভার্সিটির অফার লেটার

ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সল্ভেন্সি (যিনি আপনার সকল খরচ বহন করবেন তার অর্থাৎ স্পন্সরের)

হাউজিং সার্টিফিকেট/ ডকুমেন্ট (যদি ফ্রান্সে কোন আত্মীয়ের বাসাকে হাউজিং এর জন্য দেন তাহলে ঐ শহরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত উনার/উনাদের বাসার সকল কন্ট্রাক্ট পেপার দেখাতে হবে)

স্পন্সরের জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট কপি, যা দ্বারা আপনার সঙ্গে তার সম্পর্ক কি টিউশন ফি পরিশোধের কপি/প্রমাণপত্র

আইইএলটিএস/টোয়েফল এবং ফ্রেঞ্চ ভাষায় দক্ষতার সনদ

ট্রেনিং সার্টিফিকেট (যদি লাগে)

কাজের অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট (যদি লাগে)

আবাসন ও জীবনযাত্রার ব্যয়

ফ্রান্সে থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব হোস্টেল রয়েছে। আপনি চাইলে পেইং গেস্ট অথবা শেয়ারিং এপার্টমেন্ট থাকতে পারবেন। এদেশে থাকা খাওয়ার জন্য আপনাকে মাসে খরচ করতে হবে ৪০০-৬০০ ইউরো। তবে এই খরচ পুরোটাই আপনার ওপর নির্ভর করে। মেডিকেল ইনস্যুরেন্স বাবদ আপনার খরচ করতে হবে ৪২ ইউরো/ প্রতি জন/ প্রতি মাস।

পার্ট টাইম জব

ফ্রান্সে বিদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে আপনি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাবেন। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ফ্রেঞ্চ সরকার বিদেশি নাগরিকদের বছরে ৯৬৪ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি প্রদান করে।

ফ্রান্সে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ

পড়াশুনা শেষ করার পর আপনি ফান্সে ১ বছর চাকরি খোঁজার জন্য সময় পাবেন। আর আপনি যদি হয়ে থাকেন তরুণ গবেষক, কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বা ইনোভেটিভ ইকোনমিক প্রোজেক্টের ডিজাইনার, ফ্রেঞ্চ টেক প্রোগ্রামের অংশ গ্রহণকারী, আর্টিস্ট, উচ্চ পর্যায়ের অ্যাথলেট তাহলে আপনার জন্য ইস্যু করা হবে Plurennial Residence Card (“Passeport Talent”) – এই কার্ডটির আওতায় আপনি ও আপনার পরিবারকে ৪ বছরের ভিসা দেওয়া হবে, আর এই সময়ে আপনি চাকরি করতে পারবেন।

ফান্সে একটানা ৫ বছর বৈধভাবে থাকার পর শর্ত সাপেক্ষে স্থায়ী বসবাসের (পিআর) জন্যে আবেদন করতে পারবেন। সব শর্ত রক্ষিত হলে পেয়ে যাবেন ফ্রান্সের নাগরিকত্ব।

ট্রিবিউন

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com