সমৃদ্ধির সহায়ক শিক্ষাব্যবস্থা, সুষ্ঠু পরিবেশ এবং উন্নত জীবনধারণের মতো সম্ভাবনাগুলোর দ্বার উন্মোচন করে উচ্চশিক্ষা। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার সর্বোচ্চ আদর্শ মান বজায় রাখা উন্নত বিশ্বের দেশগুলো আকৃষ্ট করে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের। কয়েক দশকজুড়ে পৃথিবীর প্রথম সারির বিদ্যাপীঠগুলোর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ৯৯ শতাংশ শিক্ষার হার নিয়ে সগর্বে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছে শৈল্পিক দেশ ফ্রান্স। বিশ্বের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীদের মতো বাংলাদেশের মেধাবীদেরও প্রতিবছর স্বাগত জানাচ্ছে দেশটি। চলুন, ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দেশটিতে আবেদন, খরচসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার যোগ্যতা
ফ্রান্সের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্সগুলো
এগুলোসহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয়গুলো হচ্ছে পরিবেশ, ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায় প্রশাসন, অর্থায়ন, কৃষিবিদ্যা, জীববিদ্যা, কলা, সংস্কৃতি, নকশা ও ফ্যাশন।
পড়াশোনার খরচ কেমন
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা ফরাসি শিক্ষার্থীদের মতো একই খরচে অধ্যয়ন করতে পারবেন, তবে সেক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে:
উপরোক্ত শর্তানুসারে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফরাসি শিক্ষার্থীদের মতো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন খরচ—
বেশির ভাগ ফরাসি প্রতিষ্ঠানে অগ্রিম শুধু প্রথম বছরের ফি দিতে হয়। টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফার (টিটি) বা ডাইরেক্ট ডেবিটের (ডিডি) মাধ্যমে এই ফি দেওয়া যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরামর্শকৃত মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত।
টিউশন ফি প্রাপ্তির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্তি রসিদ দেওয়া হবে। এ রসিদটি সংযুক্ত করতে হবে শিক্ষা ভিসার আবেদন জমা দেওয়ার সময়।
আবেদন পদ্ধতি—
স্নাতকে ভর্তির জন্য ইউরোপীয় দেশটিতে রয়েছে ভিন্ন ধারার আবেদন পদ্ধতি। যেমন একটি হচ্ছে পারকোর্সআপ। এটি মূলত একটি ফরাসি প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে স্নাতকের প্রথম বছরে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করা হয়। এখানে শিক্ষার্থীদের বাছাই করা হয় ‘ফিলিয়ার সিলেক্টিভ’ পদ্ধতিতে, যেখানে মূলত নির্দিষ্ট কোর্সে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের বাছাই করা হয়। এর আবেদনের সময়কাল ডিসেম্বরের দিকে শুরু হয়ে পরের বছরের জুলাই পর্যন্ত থাকে।
‘ডিমান্ড ডি’অ্যাডমিশন প্রিল্যাবল’ বা ডিএপি পদ্ধতিটি শুধু বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। স্নাতকের প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য প্রত্যেককে অবশ্যই এই ডিএপি পাস করতে হয়। আবেদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কোনো কোনো প্রোগ্রামের জন্য শিক্ষার্থীদের এখানে মান যাছাইয়ের পরীক্ষা দিতে হয়। এতে অংশগ্রহণের জন্য ফরাসি দূতাবাসের সাংস্কৃতিক কর্ম বিভাগের কাছে একটি অনুরোধ ফাইল করতে হয়। এ ছাড়া ক্যাম্পাস ফ্রান্সের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করা যায়।
ডিএপির নিবন্ধনের সময় শুরু হবে ২০২৪-এর পয়লা অক্টোবর থেকে। নিবন্ধন চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর ফলাফল দেওয়া হবে ২০২৫-এর ৩০ এপ্রিল। ডিএপিতে অংশগ্রহণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে হবে ২০২৫-এর ৩১ মের আগে।
শিল্প, নকশা, ফ্যাশন, সঙ্গীত ও স্থাপত্যের মতো বিষয়গুলোতে অধ্যয়নের জন্য আবেদন করতে হয় ক্যাম্পাস আর্ট প্ল্যাটফর্মে। এখানে আবেদনের সময় ২০২৪-এর পয়লা অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে পরের বছর ২৮ ফেব্রুয়ারিতে।
সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হলে এ সময় আবেদনকারীকে একটি অফার লেটার দেওয়া হয়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় নথি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের ফলাফলের কথা জানিয়ে দেয়। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ‘রোলিং ভর্তি’। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ কয়েক মাস অপেক্ষা করে সব প্রার্থীর ফলাফল একসঙ্গে জানায়।
আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপের সুবিধা
প্রতিবছর ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য বিপুলসংখ্যক বৃত্তি দিয়ে থাকে। তা ছাড়া ফরাসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় সব কোর্সে টিউশন ফির জন্য বৃত্তি বা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ ছাড় দিয়ে থাকে।
অবশ্য সব বৃত্তি প্রধানত মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া সবচেয়ে সাধারণ বৃত্তিগুলো হলো ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপ, আইফেল এক্সিলেন্স স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি ডি লিয়ন মাস্টার্স স্কলারশিপ এবং ইউনিভার্সিটি প্যারিস-স্যাক্লে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স স্কলারশিপ।
স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিবাচক ফলাফল লাভের পর সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন। এ সময় যে কাগজপত্র দরকার, তা হলো—
জীবনযাত্রার জন্য আর্থিক ব্যবস্থাপনা
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রান্সে প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা চাকরি করার অনুমতি আছে।
দেশটির চাকরির বাজারে খণ্ডকালীন কর্মীদের অধিক চাহিদার কারণে চাকরি খুঁজতে তেমন বেগ পেতে হয় না। সপ্তাহে কাজের সময় বেশ সীমিত হলেও তা থেকে মাসে যে আয় আসে তা থাকা-খাওয়া ও চলাফেরার জন্য যথেষ্ট। এ ছাড়া সপ্তাহান্তে বা ছুটির দিনগুলোতে কর্মঘণ্টার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এ সময়গুলোতে কাজ করা হলে ফ্রান্সের জীবনযাত্রা সহজ হয়ে ওঠে। এই কাজগুলো শুধু আর্থিকভাবে উপকৃত করবে না বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন এবং নেটওয়ার্ক তৈরিতেও সাহায্য করবে।
পড়াশোনা শেষে চাকরি ও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ
ডিগ্রি অর্জনের পর অল্প সময়ের মধ্যে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পাওয়া যায়। এর জন্য স্নাতক সম্পন্নকারীদের অবশ্যই ফ্রান্সে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানিতে চাকরি নিতে হবে। তারপর সেই চাকরিতে বহাল থাকতে হবে প্রায় সাড়ে তিন বছর। স্থায়ী বসবাসের সুবিধা অর্জনের জন্য অবশ্যই প্রতি মাসে আয়কর দিতে হবে। কেননা সেই সাড়ে তিন বছর সময় গণনা করা হয় এই আয়কর দেওয়ার ভিত্তিতে।
ফ্রান্সে স্থায়ী হওয়ার যোগ্যতার অর্জনের মাধ্যমে ইইউয়ের ২৬টি দেশে অবাধে চলাফেরা করা যায়।
ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সমপর্যায়ের দেশগুলোর তুলনায় বেশ আকর্ষণীয় এবং বাজেটবান্ধব। বিশেষত সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের মেধাবীদের জন্য ক্যারিয়ার গড়ার চমৎকার উপায়। তথ্যসূত্র: ইউএনবি