মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিবিএসকে সাক্ষাত্কার দিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী সাবেক ফেসবুক কর্মী ফ্রান্সিস হাউগেন। তিনি দাবি করেেন, ফেসবুক বারবার গ্রাহকদের নিরাপত্তার বদলে ব্যবসায়িক স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়েছে। তার মতে, ফাঁস হওয়া নথিপত্র তারই প্রমাণ।
তারকা, রাজনীতিবিদ ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যে ফেসবুকের কাছ থেকে আলাদা খাতির পেতেন, সে বিষয়টি উঠে এসেছে হাউগেনের ফাঁস করা নথি থেকে। সাধারণ ব্যবহারকারীদের ওপর প্রযোজ্য নীতিমালা খাটত না ওই ‘হাই প্রোফাইল’ ব্যক্তিদের বেলায়। ‘ক্রস চেক’ নামের সম্পূর্ণ আলাদা একটি ব্যবস্থা ছিল তাদের জন্য, যার অধীনে ক্ষেত্রবিশেষে ‘যা ইচ্ছা তাই’ পোস্ট করার সুযোগ পেতেন ওই হাই প্রোফাইল ব্যক্তিরা।
ফেসবুকের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড আর মেনে নিতে না পেরে চলতি বছরই প্রতিষ্ঠানটির চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন বলে সাক্ষাত্কারে জানান তিনি। তবে চাকরি ছাড়ার আগে কপি করে নিয়েছিলেন ফেসবুকের বেশকিছু অভ্যন্তরীণ নথিপত্র।
এদিকে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুক দাবি করেছে, তাদের গবেষণার ফলাফল ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, গুরুত্ব পায়নি ইনস্টাগ্রামের ইতিবাচক প্রভাবের বিষয়টি। সম্প্রতি সিনেটে সাক্ষ্য দেয়ার সময়েও একই বক্তব্য দিয়েছেন ফেসবুকের নিরাপত্তাবিষয়ক বৈশ্বিক প্রধান অ্যান্টিগন ডেভিস।
সাক্ষাত্কারে জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় ফেসবুকের ভূমিকা নিয়েও বলেছেন হাউগেন। ওই ঘটনায় ফেসবুকের ভূমিকা সহিংসতার আগুনে ঘি ঢেলেছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন চলাকালীন ভুয়া তথ্যের প্রচার ঠেকাতে ফেসবুক নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাময়িকভাবে চালু রেখেছিল বলে জানান হাউগেন। নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল অথবা সেটিংস পাল্টে আগের অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল, যা সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা মনে হয়েছে।
হাউগেনের হাত দিয়ে ফাঁস হওয়া নথি থেকে সবচেয়ে চমকপ্রদ যে তথ্যগুলো উঠে এসেছে, তার মধ্যে একটি হলো, নিজস্ব শেয়ার মালিকদের মামলার ঝুঁকিতে আছে ফেসবুক। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিতে ফেসবুককে ৫০০ কোটি ডলার জরিমানা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। ওই শেয়ার মালিকরা বলছেন, ফেসবুকপ্রধান মার্ক জাকারবার্গকে একক দায় নেয়া থেকে রক্ষা করতে গিয়েই এত বড় অংকের জরিমানা গুনতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানকে।