যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসীর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হলো ইংলিশ চ্যানেল। কারণ এ ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে অভিবাসীরা ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্যে পৌঁছায়। এ অভিবাসীদের চ্যানেল ক্রসিং করতে সহায়তা করে বিভিন্ন হিউম্যান ট্রাফিকিং গ্যাং। অর্থের বিনিময়ে ক্রসিং করতে সহায়তা করা এমন অনেক গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। একেকটি গ্যাং প্যাকেজ আকারে অভিবাসীদের নিয়ে চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা করে। একটি নৌকা ভাড়া করতে অভিবাসীদের গুনতে হয় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পাউন্ড। চ্যানেল ক্রসিংয়ের বিনিময়ে তারা অভিবাসীদের কাছ থেকে এ বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়।
সম্প্রতি বিবিসির এক আন্ডারকভার জার্নালিস্ট অভিবাসী সেজে গ্যাংয়ের কার্যক্রম খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। ওই রিপোর্টার ফ্রান্সের ক্যালাইস এবং জার্মানির এসেন শহরে থেকে হিউম্যান ট্রাফিকিং গ্যাংয়ের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেছেন। নিজেকে হামজা নামে পরিচয় দেওয়া এ আন্ডারকভার জার্নালিস্ট অভিবাসীদের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আবু সাহার নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ আবু সাহার হিউম্যান ট্রাফিকিং গ্যাংয়ের মাঠ পর্যায়ের কাজ করে। আবু সাহার তাকে ইংলিশ চ্যানেল ক্রসিং করার বিষয়ে বিস্তারিত বলে।
মি. হামজা তাদের কাছ থেকে একটি ডিঙি নৌকায় চ্যানেল ক্রসিং করার বিষয়ে দরদাম ঠিক করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত আবু সাহার জানায়, তারা সাড়ে ১২ হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে তাকে একটি ডিঙি নৌকা দেবে। এ ছাড়া জনপ্রতি তারা ১ হাজার ৬০০ পাউন্ডেরও বেশি অর্থ নেয়। কথা বলার এক পর্যায়ে আবু সাহার তার বসের সঙ্গে দেখা করতে যায়। ওই সময় মি. হামজাও জোরাজোরি করে তার সঙ্গে যায়। আবু সাহারের মতো তার বসও একজন অ্যারাবিক। তারা মাঝে মধ্যে আরবিতে কথা বলছিল। ফলে অনেক কথা বুঝা যাচ্ছিল না। তবে মি. হামজা এ ঘটনা গোপন ক্যামেরায় ভিডিও করতে সক্ষম হয়। এই বসের সঙ্গে পুরো সময়টা একজন বডিগার্ড ছিল। সে মি. হামজার দিকে নজর রাখছিল।
এরপর তারা চলে যায় তাদের ওয়ারহাউসে। এসেন শহরের এ ওয়ারহাউসে অনেকগুলো ছোট নৌকা, লাইফ ভেস্ট, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা আছে। তাদের এমন প্রায় দশটি ওয়ারহাউস রয়েছে। ফ্যান্সের ক্যালাইস এ জায়গা থেকে মাত্র ৪ ঘণ্টার রাস্তা। যেকোনো সময় আবহাওয়া ভালো দেখে তারা সেখানে যেতে পারে। সাধারণত রাতে কিংবা সকালে তারা চ্যানেল ক্রসিং করতে বের হয়। জানা গেছে, এ ডিঙি নৌকার জিনিসপত্র চীন থেকে জাহাজে করে তুরস্কে আসে।
এরপর তুরস্ক থেকে জার্মানি হয়ে গ্যাংয়ের হাতে চলে আসে। এদিকে জার্মানিতে এসব হিউম্যান ট্রাফিকিং গ্যাং খুব সহজেই নিজেদের কার্যক্রম চালাতে পারে। ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যগামী যেকোনো অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা থেকে বিরত থাকছে জার্মানি। ইইউর আইন অনুযায়ী অভিবাসীদের ধরতে তাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে খুব সহজেই জার্মানির এসেন শহরে শেল্টার নিয়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে ফ্রান্সের ক্যালাইস পৌঁছানো সম্ভব। আর এভাবেই ইংলিশ চ্যানেল ক্রসিং করে প্রতিদিন শতশত অভিবাসী যুক্তরাজ্যে আসছে। ভীষণ বিপজ্জনক এ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেই মারা যাচ্ছে। তবুও থামছে ইলিগ্যাল অভিবাসীদের যাত্রা। থামছে না হিউম্যান ট্রাফিকিং গ্যাংগুলোর অবৈধ কার্যক্রম।