শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন

প্রাকৃতিক জলাভূমি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ‘পদ্ম’

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

ফুলের পুংকেশর ঘিরেই যত কাণ্ড! চঞ্চল মৌমাছিরা এখানেই এসে বসে। খুব ক্ষণকালের জন্য।

তারপর নিজ থেকেই ওরা রেণুমাখা হয়! নিজের গায়ে-গতরে পুরুষ ফুলের রেণু নিয়ে চলে যায় ফুলের স্ত্রীকেশর কাছে।

এভাবেই সুসম্পন্ন ফুলের প্রাকৃতিক প্রজনন। প্রকৃতিতে এই কাজটি ঘটে অতি নীরবে-নিভৃতে এবং অসংখ্যবার। কিছুদিন পর সেই পদ্মফুলে ধরে ফল। যাকে অনেকে ‘পদ্মটোনা’ বলে থাকেন।

পদ্মভরা জলাভূমির পড়ে দাঁড়িয়ে পদ্ম আর মৌমাছির এমন দৃশ্যগুলোই প্রচুর ভালোলাগার জন্ম দেয়। বিস্মিত হয়ে উঠে হৃদয়! হঠাৎ করে এমন নয়নাভিরাম পদ্মবিলের দেখা পাওয়া সত্যি ভাগ্যের। কেননা, প্রকৃতি থেকে বিল-জলাশয়গুলোতে তো ক্রমশই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আরও কিছুকাল পর হয়তো এমন প্রাকৃতিক ফুলগুলোর বিস্ময়কর শোভা দেখতে পাওয়া যাবে না।  

গোলাপি-সাদা রঙের এই পদ্মকে বলা হয় ‘গোলাপি পদ্ম’। আমাদের প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলোতে শাপলা, শালুক ফুলের বেশি দেখা মেলে। পদ্মফুলের দেখা মেলে খুব কম। তবে প্রকৃতিতে সাদা পদ্মের দেখা পাওয়া আরও কঠিন ব্যাপার। একেবারেই দুর্লভ হয়ে গেছে এ ফুলগুলো।

পদ্মপাড়ে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর দেখা গেল একদল শিশু বিলের ভেতর নেমে পদ্মফুল এবং ফুলের কলিগুলো একটা একটা ছিঁড়ছে এবং আঁটি জমাচ্ছে। এক শিশু অপর শিশুর সঙ্গে সহাস্যে জলকেলিতে মেতে উঠেছে। ছেড়াছিড়িতে এভাবেই প্রকৃতি থেকে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই পদ্ম ফুলের অস্তিত্ব।

উদ্ভিদ গবেষক জিনিয়া নাসরিন সুমন বাংলানিউজকে বলেন, পদ্ম ফুলের ইংরেজি নাম Indian Lotus এবং এর পরিবারের নাম Nelumbo naceae। ‘পদ্ম’ ফুলের অনেক নাম রয়েছে। সংস্কৃতশাস্ত্রের ওই নামগুলো হলো: কমল, পদ্ম, পঙ্কজ, পঙ্করুহ, সরসিজ, সরোজ, সরোরুহ, সরসিরুহ, জলজ, জলজত, নীরজ, ওয়ারিজ ইত্যাদি। পদ্মের মতো সুন্দর চোখ-কে ‘পদ্মলোচন’ বলে। আবার ঠাট্টা-তামাশা করেও বলা হয় ‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন’। এছাড়াও যোগশাস্ত্রে ‘পদ্মাসন’ একটি যোগাসনের নাম।

শাস্ত্র এবং সাহিত্যে এই ফুলের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘ওই পদ্মে ছিল রে যার রাঙা পা, আমি হারায়েছি তারে, পদ্মার ঢেউ রে। ‘ এখানে রাধাকৃষ্ণের জন্য বিলাপ করছে। তেমনিভাবে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর বিখ্যাত কবিতা ‘কেউ কথা রাখেনি’ এর মধ্যে বরুনার জন্য ১০১টা নীলপদ্ম যোগাড়ের কথা বলে প্রেমিকপুরুষ। পদ্মে পা, হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মে মাহাত্ম্য বহন করে। বুদ্ধের পা পদ্মে রাখা, শিবের পা পদ্মে রাখা এসব মূর্তি মন্দিরে রাখা হয়, পূজার জন্য। তেমনি কৃষ্ণকেও দেখা যায় রাধার সঙ্গে। এজন্য একে Sacred lotus বলে।

এ ফুলটির চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডে প্রচুর চাষ হয়। পদ্মের বীজ খাওয়া হয় পবিত্রতা সহকারে। পদ্মের ডাটা থেকে সুতা বের হয়। সেই সুতার কাপড় পরিধান করে বৌদ্ধ পুরোহিতরা; নামাবলীর মতো। পদ্মের চাষ হয় এসব ইন্দো-চাইনিজ দেশে কাট ফুল, হাইব্রিড ফুল বা পদ্মের শিকড় বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বিক্রয় হয়-দামী খাবার হিসেবে। অর্থ পদ্ম এসব দেশের আয়ের একটা উৎস। বাংলাদেশেও ফুলের দোকানে পদ্মের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ছাদ বাগানে হাইব্রিড পদ্ম চাষ ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বিদেশে বর্তমানে পদ্মফুলের চা বা বীজের চা ‘গ্রিন-টি’ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে বলে জানান এই উদ্ভিদ গবেষক।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com