বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন

প্রস্তুত পদ্মা রেলসেতু, আজ চলবে পরীক্ষামূলক ট্রেন

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩

আরও এক মাইলফলকের দ্বারপ্রান্তে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সড়কপথ চালুর ১০ মাসের মাথায় এবার প্রস্তুত রেলপথ।  ছয় দশমিক ৬৮ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর রেলপথের কাজ সম্পন্ন করেছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা। আজ মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) প্রথমবার ট্রেন পাড়ি দেবে পুরো পদ্মা সেতু, পরীক্ষামূলকভাবে চলবে ভাঙা থেকে মাওয়া।

প্রকৌশলীরা জানান, গত ২৯ মার্চ (বুধবার) রেলপথের সর্বশেষ সাত মিটার অংশের ঢালাই দেওয়ার মাধ্যমে কাজ শেষ হয়। তবে, ঢালাই করা অংশ শক্ত হয়ে ট্রেন চলার জন্য উপযোগী হতে ৪৮ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন ছিল। ৩১ মার্চ শুক্রবার বিকেলে নির্ধারিত ৪৮ ঘণ্টা শেষ হয়েছে।

ওই দিন প্রকৌশলীদের পরীক্ষায় ঢালাই করা অংশ ট্রেন চলার জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে বলে নিশ্চিত করা হয়। অর্থাৎ, বর্তমানে ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত ছয় দশমিক ৬৮ কিলোমিটার পুরো পাথরবিহীন রেলপথ। এখন শুধু ট্রেন চলার অপেক্ষায় পদ্মা সেতু।

প্রকৌশলী সূত্র বলছে, বিশ্বমানে প্রস্তুত করা হয়েছে সেতুর রেলপথ, যা শত বছরের বেশি সময় টেকসই থাকবে।

পদ্মায় রেল পাড়ি নিয়ে যে সব প্রস্তুতি

সেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ায় আজ ৪ এপ্রিল পুরো সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রকৌশলীরা। এদিন ফরিদপুরের ভাঙ্গা পদ্মা স্টেশন থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৪১ দশমিক ৫ কিলোমিটার অংশে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হবে।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন উপস্থিত থেকে পরীক্ষামূলক ট্রেনে পাড়ি দেবেন পুরো পদ্মা সেতু। দুপুরে মাওয়া প্রান্তে সংবাদ সম্মেলন করবেন মন্ত্রী। এরই মধ্যে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশনে প্রস্তুত করা হয়েছে ব্রিফিং মঞ্চ।

সর্ববৃহৎ রেলসেতু মুভমেন্ট জয়েন্ট

পদ্মা রেলসেতু সাত খণ্ডে বিভক্ত। আর সেতু টেকসই রাখতে নকশা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্বে বিভাজন রাখা হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো সর্ববৃহৎ রেলব্রিজ মুভমেন্ট জয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে পদ্মার রেল সেতুতে। এতে দ্রুত গতির রেল চলাচলের সময় এ জয়েন্টে রেললাইন ৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারবে। মূল সেতুর সঙ্গে দুই প্রান্তের ভায়াডাক্টের সংযোগ এবং মাঝে জয়েন্ট আছে ছয়টি। কংক্রিটের পাথরবিহীন রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত করতে এ জয়েন্টগুলো স্টিল দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি। পুরো সেতুতে ১০ হাজার ৭৯০টি স্লিপার বসেছে।

চলতি বছরই ঢাকা-ভাঙ্গায় চলবে ট্রেন

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার অংশ তিন ভাগে ভাগ করে এগিয়ে চলছে কাজ। এর মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের অগ্রগতির ৭৪ ভাগ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯২ ভাগ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬৮ ভাগ। আর সার্বিক অগ্রগতি ৭৫ ভাগ বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন।

প্রস্তুত পদ্মা রেল সংযোগ সেতু।

প্রকল্প পরিচালক জানান, উদ্বোধনের পর কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। সব নকশা চূড়ান্ত করে গত বছরের নভেম্বরে মূল সেতুতে রেল লাইনের কাজ শুরু হয়। চার মাসের মধ্যে কাজ শেষ হলো। আমরা আশাবাদী প্রাকৃতিক যদি কোনো দুর্যোগ না হয়, তাহলে প্রকল্পের যে মেয়াদ আছে, ২০২৪ সালের জুন মাসে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

প্রকৌশলী সূত্র বলছে, ঢাকা-মাওয়া ও মাওয়া-ভাঙ্গা এই দুই অংশের মোট ৮২ কিলোমিটারের কাজ চলতি বছরই শেষ হবে। প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দুই পাশের স্টেশন নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে।

প্রকৌশলীরা জানান, ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতু ও দুই পাশের ভায়াডাক্ট সেতু মিলিয়ে পদ্মা রেল সেতুর দৈর্ঘ্য ছয় দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। মূল সেতুতে ১০ হাজার ৭৯০টি স্লিপার স্থাপিত হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের আটটি স্লিপার ছাড়া বাকি সব কংক্রিটের তৈরি। সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টের (সিএসসি) তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এই রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। নতুন রেলপথে যাতায়াতে রাজধানী ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার।

এনটিভি

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com