রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ অপরাহ্ন

প্রবাসী কর্মীরা কেন ফিরে আসেন

  • আপডেট সময় রবিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪

২০২৩ সালে বিদেশে চাকরির উদ্দেশ্যে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়েছেন ১৩ লাখ ৭ হাজার ৭৪৩ জন। এসময় আউটপাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন ৮৬ হাজার ৬২১ জন।

শনিবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেবব্রত ঘোষ এসব তথ্য জানান। এসময় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের বিদেশ থেকে ফেরত আসার কারণগুলো তুলে ধরেন তিনি।

দেবব্রত ঘোষ জানান, বিদেশ ফেরত অধিকাংশ কর্মী সৌদি আরব থেকে ফেরত এসেছেন। বিশেষ করে নারী কর্মীদের বড় অংশ সৌদি আরব থেকে ফিরে এসেছেন। এ ছাড়া ওমান, কাতার, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়া থেকেও কিছু কর্মী ফেরত এসেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে ফেরত আসার যেসব কারণ জানা যায়–

১. পেশার পরিবর্তন : বিদেশ যাওয়ার আগে দালাল বড় বড় কোম্পানির কাজের কথা বললেও সে দেশে গিয়ে আশানুরূপ কাজ না পাওয়ায় ফিরে আসেন।

২. আশানুরূপ বেতন না পাওয়া : বেশি বেতনের আশায় বিদেশ গিয়ে আশানুরূপ বেতন না পাওয়ায় ফিরে আসেন।

৩. বিলম্বে বেতন পাওয়া : অনেক সময় ২-৩ মাস পরও বেতন পায় না। বেতন চাইলে নির্যাতনের শিকার হন তারা।

৪. অতিরিক্ত পরিশ্রম : অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে শরীর অসুস্থ হয়ে যায়। ফলে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।

৫. খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে না পারা : বাংলাদেশি খাবার খেয়ে অভ্যস্ত মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের খাবারের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে অসুস্থ হয়ে যায়। অসুস্থ কর্মীকে নিয়োগকারী দেশে পাঠিয়ে দেয়।

৬. অনেক নারী গৃহকর্মী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। এগুলো মুখে বলতেও তারা লজ্জাবোধ করেন। এমনকি গর্ভবতী হয়েও দেশে ফিরে আসেন।

৭. নিয়োগকারী গৃহের মধ্যে আটকে রাখে, যোগাযোগ করতে দেয় না, মোবাইল নিয়ে নেয়। ফলে সুযোগ পেলে তারা পালিয়ে আসেন।

৮. বাংলাদেশের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় উচ্চতাপে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন।

৯. বিদেশগামী কর্মীরা ভাষা শিখে না যাওয়ায় ভাষা বুঝতে পারে না। নিয়োগকারী আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় দেশে পাঠিয়ে দেয়।

১০. মানসিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, পরিবর্তিত পরিবেশে খাপ খাওয়াতে না পারা, ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণেও দেশে ফিরে আসেন।

১১. ওভার স্টে বা ভিসার মেয়াদ পার হয়ে গেলেও বিদেশে অবৈধ অবস্থান করেন। ফলে অনেক সময় জেলে আটকা থাকার পর দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিরসনে দেবব্রত ঘোষ বিদেশগামী কর্মীদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন–

১. যে কাজে যেতে ইচ্ছুক তার ওপর প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

২. গন্তব্য দেশের ভাষা, আবহাওয়া, খাদ্যাভ্যাস, আইনকানুন, সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

৩. নির্দিষ্ট কাজের ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। সরাসরি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ফ্রি ভিসায় বিদেশ যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

৪. যাওয়ার আগে চুক্তিপত্র ভালোভাবে পড়তে হবে এবং যাওয়ার পর তা যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।

৫. ভিসা পাওয়ার পর বিএমইটির ডাটাবেজে নাম নিবন্ধন করতে হবে। প্রি-ডিপার্চার ওরিয়েন্টেশনে অংশগ্রহণ করে বিএমইটি থেকে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে।

৬. বিদেশে জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বাসিতে যোগাযোগ করতে হবে।

৭. এ ছাড়া যেকোনো প্রয়োজনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ শাখা, পুলিশ সুপার কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ সেল, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় এবং বিমানবন্দরে অবস্থিত প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com