পেদা টিং টিং গ্যালারী ক্যাফে, ঢাকা

পেদা টিং টিং শুনলেই মনে হয় রাঙামাটির কথা। না, এটি রাঙামাটির পেদা টিং টিং নয়। রাজধানী ঢাকাতেই রাঙামাটির পাহাড়ি খাবারের স্বাদ দিতে গুলশানে গড়ে তোলা হয়েছে পেদা টিং টিং। সবুজে ঘেরা নান্দনিক পরিবেশে অনন্য সব পাহাড়ি খাবারের আয়োজন নিয়ে এই রেস্টুরেন্ট আপনার ভোজন রসে আনবে ভিন্ন মাত্রা । পরিবার-পরিজন অথবা বন্ধুদের নিয়ে দারুন পরিবেশে অপূর্ব চাকমা খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে চলে আসুন পেদাটিংটিং। গুলশান- ১ এ বেশ পুরনো দোতলা বাড়িকে প্রকৃতির মায়ায় নান্দনিকভাবে সাজিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই রেস্তোরাঁ।

এই রেস্তোরাঁটির পুরো নাম “পেদা টিং টিং গ্যালারী ক্যাফে”। এখানকার মেনুর পাহাড়ি সব খাবারগুলোই চাকমা খাবার। রেস্তোরাঁটিতে ঢুকতেই চোখে পড়বে আধা গরুর গাড়ির চাকা। সবুজে ছাওয়া বিশাল আঙিনা ঘিরে রয়েছে মাটির দেয়াল। বিভিন্ন ধরনের গাছে ছেয়ে রয়েছে পুরো আঙিনা। গাছগাছালির ছায়াঘেরা আঙিনায় প্রশান্তময় বাতাবরণ সর্বত্র। এখানে প্রবেশ করতেই এর অপূর্ব স্থাপত্য শৈলী আপনাকে মুগ্ধ করবে। পুরনো ভবনটিকে সবুজের মায়ায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে নান্দনিকভাবে। কংক্রিটের ছিটেফোটাও দেখা যায় না এতে। লতাগুল্ম তার আপন খেয়ালে ঘিরে রেখেছে পুরো ভবনটিকে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে চায়ের কাপে চুমুক দিতে নিচে ভবনের সামনে ফেলে রাখা হয়েছে কাঠের টুকরো। এখানে বসে উপভোগ করতে পারবেন ছায়াঘেরা নিস্তব্ধতা।

পেদা টিং টিং ক্যাফে

দোতলায় বসার ব্যবস্থাও দারুন শৈল্পিক। লোহার সিঁড়ি ভেঙে উপরে যেতেই দেখতে পাবেন খোলা ছাদের কিছু অংশ। আর বাকি অংশে ব্যবহার করা হয়েছে টিনের ছাউনি। খোলা অংশে বসার জন্য রাখা হয়েছে পুরনো কাঠের টেবিল ও চেয়ার। প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়েই এই পুরো রেস্তোরাঁকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সাজসজ্জায় সবকিছুতেই রয়েছে প্রকৃতির ছোঁয়া। এখানকার বেশিরভাগ আসবাবপত্রই তৈরী বাঁশ ও পুরনো কাঠ দিয়ে। ছাদের একপাশে কাঁঠাল গাছের পাতার নিচে খাবার ব্যবস্থা। খোলা ছাদে নুয়ে পড়া গাছের ডালগুলোতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ঘন্টি। সন্ধ্যা নামলে জ্বালানো হয় কুপিবাতি ও ধূপধুনো। কুপির আলো, ধূপের গন্ধ ও ধোঁয়া সবমিলিয়ে আদিম প্রকৃতির ছোঁয়ায় ভোজনে আনবে অনাবিল স্বাদ। এখানকার সব খাবারেই রয়েছে চাকমা খাবারের স্বাদের প্রাধান্য। এখানে পাবেন মুরগির কুড়া গুতাইয়া যা আসলে একটি ভর্তা। আদার ঝাঁঝ আর কম তেলের এই পদটি বেশ মুখোরোচক। এর দাম ৭৬০ টাকা।  ব্যাম্বু চিকেন বা চুমাত কুড়াহেরা রান্না হয় রাঙামাটির কিছু গাছ-গাছড়ার মিশ্রনে। ভাতসহ এর দাম পড়বে ৯৯০ টাকা। মাছের আইটেম ফিশ কেবাং পাবেন এখানে। চার জনের জন্য দাম পড়বে ১ হাজার ৮৭০ টাকা। সঙ্গে থাকবে ভাত।
এখানকার পরিবেশন কৌশলটাও বেশ নান্দনিক। এই সব আইটেমগুলো পরিবেশন করা হয়  বাঁশ কেটে তার মাঝে এবং কলাপাতায়। আবার ডাবের আস্তরনের ভিতরেই পরিবেশন করা হয়  কোকোনাট মকটেল নামে কয়েক ধরনের ফলের রস ডাবের পানির মিশ্রণে। এছাড়া দোতলায় রয়েছে একটি আর্ট গ্যালারি ও চাকমা সংস্কৃতির কাপড় বুননের প্রদর্শণী। এখানকার আর্টগ্যালারিতে স্থান পাওয়া ‍চিত্রকর্মগুলো এঁকেছেন রাঙামাটির  শিল্পিরা। চিত্রকর্মের পাশাপাশি রয়েছে স্থিরচিত্র প্রদর্শনী। চাকমা বুননশিল্পের বেশ কিছু পণ্য এখানে বিক্রিরও ব্যবস্থা রয়েছে। রাঙামাটির স্থানীয় কিছু ফ্যাশন ডিজাইনারের সহযোগিতায় এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

        ঠিকানা – গুলশান ১-, রোড-২৭, বাড়ি নম্বর-৬৯, ঢাকা- ১২১২।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: