রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন

পেট্রোনাস টাওয়ার: মালয়েশিয়ার সৌন্দর্যের প্রতীক

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৩

উচ্চতার দিক থেকে বর্তমানে ৩ নম্বরে রয়েছে মালয়েশিয়ার ‘পেট্রোনাস টাওয়ার’। ১৯৯৭ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হলে সে সময়ে সর্বোচ্চ ভবন ‘সিয়ার্স টাওয়ার’কে ছাড়িয়ে শ্রেষ্ঠত্ব নিজের দখলে নেয় সুউচ্চ এই ভবনটি। ৮৮ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন ছিল। ২০০৪ সালে এসে তাইওয়ানের ১০১ তলা বিশিষ্ট ‘তাইপে-১০১’ ভবনের কাছে শ্রেষ্ঠত্ব ছেড়ে দিতে হয় ‘পেট্রোনাস টাওয়ার’কে। উচ্চতার দিক থেকে বর্তমান বিশ্বে অষ্টম স্থানে রয়েছে পেট্রোনাস টাওয়ার। উদ্বোধনের পর থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এ টাওয়ারটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা ছিল। তবে টুইন ভবন বিবেচনায় এটির উচ্চতা এখনো পৃথিবীতে নাম্বার ওয়ান। এই পেজটিতে ‘পেট্রোনাস টাওয়ার’ খুঁটিনাটি বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও অবস্থান:

‘পেট্রোনাস টাওয়ার’ হচ্ছে মালয়েশিয়ার সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানি পেট্রোনাসের সদর দফতর। ৮৮ তলা বিশিষ্ট এই টাওয়ারটি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। কুয়ালালামপুর শহরের যে স্থানে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার অবস্থিত তার নাম কেএলসিসি বা কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার। কেএল সেন্ট্রাল থেকে মনোরেলে সরাসরি যাওয়া যায় কেএলসিসিতে। স্টেশনের নামও কেএলসিসি। এটি টুইন টাওয়ারের একদম নিচেই ভূগর্ভে অবস্থিত।১৯৯৮ সালে টাওয়ারটি উদ্বোধন করা হয়।

নির্মাণগত কিছু তথ্য:

পেট্রোনাস টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ১ মার্চ ১৯৯৩ সালে। দুই দফায় নির্মাণ কাজ শেষে এটি উন্মুক্ত করা হয় ১৯৯৯ সালের ১ আগস্ট। টাওয়ারটির উচ্চতা ১৪৮৩ ফুট (৪৫২ মি.) এবং ডিজাইন করেছেন আর্জেন্টাইন-আমেরিকান স্থপতি মিজার পেলি্ল। এ টাওয়ারটি তৈরি করতে সময় লেগেছে একটানা সাত বছর। মালয়েশিয়ার মোবাইল কোম্পানি মাক্সিস ও তেল কোম্পানি পেট্রোনাসের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে এ টাওয়ারটি। এটি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ১.৬ বিলিয়ন ডলার। বাইরে থেকে টাওয়ারটিকে দেখে অনেকে ভাবেন শুধুমাত্র স্টিল ও কাঁচ দিয়ে টাওয়ারটি তৈরী করা হয়েছে। তবে টাওয়ারটি তৈরীর মূল উপাদান হচ্ছে স্টিল ও পাথর। ৩৬ হাজার ৯১০ টন স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে টাওয়ারটি নির্মাণে। পেট্রোনাস টাওয়ার আসলে একজোড়া দালান।

টাওয়ারটি দুটি ভবনে বিভক্ত। এই দালান জোড়ার নিচে প্রায় ১২০ মিটারের ফাউন্ডেশন গাঁথুনি আছে। এই ফাউন্ডেশন গাঁথুনি করে দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ব্যাচি সোল্টাঞ্চ (Batchy Soletanch ), যারা ভূগর্ভস্থ প্রকৌশল কাজে সিদ্ধহস্ত। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কংক্রিট পেট্রোনাস টাওয়ারের মূল উপাদান। বিল্ডিং দুটির মধ্যখানে একটি সংযোগ সেতু আছে, যা ৪১ এবং ৪২তম তলায় অবস্থিত। এই সেতুটি ৫৮ দশমিক ৪ মিটার লম্বা এবং এর ওজন প্রায় ৭৫০ টন। পেট্রোনাস টাওয়ারের ব্যবহার্য ফ্লোর স্পেস ৮০ লাখ বর্গফুট, ভবনের জানালার সংখ্যা ৩২ হাজার। স্থপতি নকশাতে মালয়েশিয়ার ইসলামি প্যাটার্ন ব্যবহার করেছেন।

টাওয়ারের ভিতরের কিছু তথ্য:

মালয়েশিয়ার প্রধান তেলভিত্তিক প্রতিষ্ঠান পেট্রোনাসের অফিস এখানে। এই পেট্রোনাস কোম্পানির নামেই টাওয়ারটির নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও এখানে একটি অত্যাধুনিক শপিং মল আছে। এখানে অবস্থিত অন্যান্য আন্তর্জাতিক দফতরের মধ্যে রয়েছে আলজাজিরা, বোয়িং, আইবিএম, ক্রওলার নেটওয়ার্ক, মাইক্রোসফট, রয়টার্স। পুরো টাওয়ারটির নানারকম সুযোগ-সুবিধা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি ঠিকঠাক রাখার জন্য পেট্রোনাস টাওয়ারের পশ্চিম দিকে একটি ‘সার্ভিস বিল্ডিং’ আছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় এই ‘সার্ভিস বিল্ডিং’ থেকে তদারক করা হয়। বিল্ডিংদ্বয়ের মধ্যবর্তী সংযোগ সেতু (যা ‘স্কাই ব্রিজ’ নামে অভিহিত) সপ্তাহের প্রতি সোমবার বন্ধ থাকে। এই স্কাই ব্রিজটিও একটি রেকর্ডের অধিকারী। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্থানে স্থাপিত দ্বিতল বিশিষ্ট সেতু এটি। টাওয়ারটির নিচের ৮ তলা শপিং মল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যার মধ্যে ৫ তলা মাটির নিচে এবং ৩ তলা মাটির উপরে অবস্থিত। ৪১ তলার উপরে সাধারণ দর্শনার্থীরা যেতে পারেন না।

পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু:

পর্যটক আকর্ষণের সকল ব্যবস্থা রয়েছে এই টাওয়ার ও টাওয়ারের বাইরের পরিবেশে। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের চারপাশ খুব সুন্দর করে সাজানো-গোছানো। টাওয়ারের পেছনের দিকটা শুধুই পর্যটকদের জন্য। এখানে রয়েছে নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা। এখানে বিকাল বেলায় আয়োজন করা হয় ওয়াটার শো’র। এখানে রয়েছে কৃত্রিম একটি সেতু। এই সেতুতে দাঁড়িয়ে পুরো টাওয়ারের ছবি তোলা যায়। পর্যটকদের জন্য স্কাই ব্রিজ হচ্ছে সেরা আকর্ষণ। সেখানে উঠতে পারাটা জীবনের এক বিশাল সংগ্রহ।

আর তাই কেউই কুয়ালালামপুরে এসে স্কাই ব্রিজ না ঘুরে যায় না। তবে পর্যটকদের জন্য শুধু ৪১তম তলায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। উপরের অংশটি পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত। স্কাই ব্রিজে যেতে হলে গুণতে হয় ৮০ রিঙ্গিত (২০০০ টাকা থেকে ২২৫০ টাকা।) টিকিট অবশ্য গেলেই করা যায় না। প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকেট বিক্রি করা হয়, আগে আসলে আগে পাওয়ার ভিত্তিতে। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটক প্রতিদিন ভিড় করেন টুইন টাওয়ারের সামনে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com