পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশেরই নিজস্ব কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলি হতে পারে দেশটির স্থানীয় খাবার, সংস্কৃতি, স্থলভাগের স্থাপত্যকলা, প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী, দুর্দান্ত পার্ক, সুন্দর শহর কিংবা কালজয়ী সব গ্রাম। এই বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্ববাসীর সামনে দেশটির এমন একটি ভাবমূর্তি তৈরি করে যা দেশটিতে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। আজকে আমরা এমনই সুন্দর ১০টি দেশ সম্পর্কে জানবো।
কোন দেশ ভ্রমণ করতে পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন সেটার উপর নির্ভর করে এই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। একইসাথে পর্যটন ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সভ্যতা, আবহাওয়া, ঐতিহাসিক গুরুত্বসহ আরও বেশকিছু বিষয়ের উপর লক্ষ রেখে প্রকাশ করা হয়েছে এই তালিকা।
১০। সুইজারল্যান্ড
পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ বলা হয় যে দেশটিকে তার নাম সুইজারল্যান্ড। দেশটি বিশ্বজুড়ে ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে অন্যতম কাঙ্খিত গন্তব্য। তবে শুধু বেড়ানোর জন্যই নয়, সব বিচারেই দেশ হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা পেয়েছে ইউরোপের ছোট্ট এই দেশটি। আয়তনে ছোট হলেও দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে স্বয়ং-সম্পূর্ণ। ইউরোপের পাহাড়ী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সুইজারল্যান্ড। এর আয়তনের ৭০ শতাংশ ঘিরে রয়েছে আল্পস পর্বতমালা। সুইজারল্যান্ডের সবচেয়ে উঁচু পর্বতের নাম মন্টি রোজা।
পর্যটকরা সুইজারল্যান্ডের প্রকৃতি আর প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্যের জন্য আকৃষ্ট হয়। এছাড়া স্কিইং আর পর্বত ভ্রমণের জন্য এখানে অনেক পর্যটক আসে। বিশ্বের অন্যতম অর্থসংস্থান হওয়ায় এখানে বহু ভ্রমণকারী ব্যবসার জন্যও আসে। সুইজারল্যান্ডে বার্নের পুরাতন শহর, সাধু গলের মঠ এবং মন্টি স্যান জিওরজিও সহ ১১টি ইউনেস্কো ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। যাইহোক সবচেয়ে সুন্দর দেশের তালিকায় সুইজারল্যান্ড আছে ১০ নম্বরে।
৯। নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ড ওশেনিয়া মহাদেশের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র, যা অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। সমগ্র বিশ্বের কাছেই নিউজিল্যান্ড একটি শান্তিপ্রিয় দেশ বা স্বর্গীয় রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। মূলত নিউজিল্যান্ড অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। এদেশের পরিবেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রাণীকুল বৈচিত্র্যময় ও প্রাচুর্যপূর্ণ।
মাওরি ভিলেজ, কাঠের শিল্পকলার তৈরি নানা জিনিসপত্র দেখতে পাওয়া যাবে এখানে। এখানে আপনি কাঠের তৈরি হরেক রকমের তৈজসপত্রের ভাণ্ডার পাবেন, যা দেখতে অনেকটা আদিকালের ব্যবহৃত জিনিসের মতো। সব মিলিয়ে যেকোনো ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছেই নিউজিল্যান্ড একটি স্বপ্নের নাম। আর সবচেয়ে সুন্দর দেশের তালিকায় নিউজিল্যান্ড আছে ৯ নম্বরে।
৮। দক্ষিণ আফ্রিকা
দক্ষিণ আফ্রিকা গোটা আফ্রিকা মহাদেশের সেরা সাফারি গন্তব্যস্থলের মধ্যে একটি। ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কসহ দেশটির বেশিরভাগ জাতীয় উদ্যানে “বিগ ৫” এর দেখা মেলে। পুরো আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে একমাত্র বোল্ডারস বিচেই পেঙ্গুইনের দেখা মেলে। যা এই দক্ষিণ আফ্রিকাতেই অবস্থিত।
দেশটির তিনটি রাজধানীর একটি কেপ টাউনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা না বললে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্রমন স্থানগুলির কথা অধরাই থেকে যায়। এখানে কেপ পয়েন্ট, টেবিল পর্বত সহ আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এছাড়াও দেশটির অনেক প্রধান বন্দর এখানে অবস্থান করছে। ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের দিক থেকে এটিকে বিশ্বের সুন্দরতম শহরগুলির মধ্যে ধরা হয়ে থাকে, একইসাথে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হল এটি। সুন্দর দেশের তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার স্থান ৮ নম্বরে।
৭। চীন
চীন এশিয়া মহদেশের পূর্ব অঞ্চলে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। চীন একটি পর্বতময় দেশ। এর মোট আয়তনের দুই-তৃতীয়াংশ পর্বত, ছোট পাহাড় এবং মালভূমি নিয়ে গঠিত। দেশটি বিলিঙ্গুয়ান প্রাকৃতিক অঞ্চল থেকে হলুদ এবং ইয়াংজি নদী পর্যন্ত বিচিত্র প্রাকৃতিক পরিবেশে সমৃদ্ধ। একইসাথে দেশটির সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত অগ্রগতি অপূর্ব স্থাপত্য নকশার জন্ম দিয়েছে। লম্বা লম্বা শৈল্পিক বিল্ডিং চিনের শহরগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চিনে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য পর্বতমালার মধ্যে আছে মাউন্ট হুয়াংশান, মাউন্ট তাইশান, মাউন্টেন হেনশান এবং মাউন্ট এভারেস্ট।
আর চীনে ভ্রমণের কথা উঠলেই আমাদের চোখের সামনে সবার আগে ভেসে উঠে চীনের মহাপ্রাচীর ‘দ্যা গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর এবং চীনের প্রতীক। প্রাচীরটি চীনের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার। যাইহোক সুন্দর দেশের তালিকায় চিনের অবস্থান ৭ নম্বরে।
৬। ব্রাজিল
ব্রাজিল বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম দেশ এবং দক্ষিণ আমেরিকার সর্ববৃহৎ দেশ। ব্রাজিল শব্দটি শুনলে প্রথমেই মনে আসে ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে স্বীকৃত পেলের কথা। সেই সাথে ভেসে ওঠে চোখ ধাঁধানো নান্দনিক ফুটবল ম্যাচ। এরপর সামনে আসে সবুজ আর হলুদের মিশ্রণে অপূর্ব সুন্দর এক পতাকার রঙ। ব্রাজিলীয় গান ও নাচের একটি ধরণ সাম্বার নামটিও উঠে আসে। এই জানার বাইরেও রয়েছে ব্রাজিলের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির দীর্ঘ ইতিহাস।
ব্রাজিল জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের দিকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত। একইসাথে ব্রাজিলের ভূপ্রকৃতি যথেষ্ট বৈচিত্র্যময়। দেশটিতে পাহাড়, পর্বত, সমভূমি, উচ্চভূমি, চারণভূমি প্রভৃতি বৈচিত্র্যময় ভূভাগ বিদ্যমান। এ দেশে ঘন ও বেশ জটিল নদী ব্যবস্থা বিদ্যমান, যা বিশ্বের অন্যতম জটিল নদী ব্যবস্থা। ব্রাজিলের উল্লেখযোগ্য নদীর মধ্যে রয়েছে আমাজন, যা বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী ও নিষ্কাশিত পানির পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী। এসবই ব্রাজিলকে বিশ্বের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করেছে। তালিকায় ব্রাজিলের অবস্থান ৬ নম্বরে।
৫। ইতালি
ইতালি দক্ষিণ ইউরোপের একটি দেশ। পৃথিবীর খুব কম দেশই সৌন্দর্যের বিচারে ইতালির সাথে পেরে উঠবে। পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সভ্যতার সূতিকাগার বলে পরিচিত গ্রিস এবং ইতালি। নানা ভাস্কর্য আর শৈল্পিক নিদর্শন ছড়িয়ে আছে পুরো ইতালি জুড়ে। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আছে এই ইতালিতেই। এদেশেই রয়েছে ভেনিস, ফ্লোরেন্স এবং রোমের মতো বিখ্যাত সব শহর।
বিশ্বের সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি এই ইতালির মধ্যেই অবস্থিত। ইউরোপের সর্বোচ্চ শিখর হোয়াইট মাউনটেন এদেশেই অবস্থিত। প্রায় ৫ কোটি মানুষ প্রতিবছর ইতালিতে ঘুরতে আসেন। পর্যটন খাত ইতালির অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যাইহোক তালিকায় ইতালির অবস্থান ৫ নম্বরে।
৪। আয়ারল্যান্ড
উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দেশ আয়ারল্যান্ড। আয়ারল্যান্ড একটি ছোট্ট দেশ যার আয়তন মাত্র ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার। দেশটির চার পাশে পানি উথাল-পাথাল করে। রয়েছে অসংখ্য পাহড়-পর্বত, বেশ কয়েকটি নদী এবং অনেক হ্রদ। দক্ষিণে ও পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর; আড়াই হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করলেই আমেরিকা। জ্ঞান বা বিদ্যা, নব্য ধ্রুপদী এবং নব্য গোথিক শৈলীতে ১৭, ১৮ এবং ১৯ শতকে নির্মিত মহিমান্বিত বাসগৃহ যেমন- কাসল ওয়ার্ড, কাসলটাউন হাউস, বেনট্রি হাউস পর্যটকদের আগ্রহের কারন। এছাড়াও দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ।
আইরিশ মানুষ কথোপকথন ভালবাসে এবং অন্যান্য মানুষের প্রতি তাদের প্রকৃত আগ্রহ আছে। এরা খুবই ভদ্র, নম্র ও অতিথিপরায়ণ। সবচেয়ে সুন্দর দেশের তালিকায় আয়ারল্যান্ডের অবস্থান ৪ নম্বরে।
৩। ভারত
ভারতের মূল ভূখণ্ড হিমালয়ের চূড়া থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগরের সৈকত পর্যন্ত বিসৃত। দেশটির জাতীয় উদ্যানগুলি বিপন্ন রয়েল বেঙ্গল টাইগার, এশিয়ান সিংহ এবং এশিয়ান হাতি সহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী এবং পাখির আবাসস্থল।
এদেশে রয়েছে মরুভূমি, মালভূমি, দীর্ঘ নদী এবং এক বিচিত্র সংস্কৃতি। এগুলিই অনেক দূর-দূরান্ত থেকে ভারতে পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তালিকায় ভারতের অবস্থান ৩ নম্বরে।
২। যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সহ একটি বিশাল দেশ। বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণের হিসাবে এটি বিশ্বের ২য় বৃহত্তম দেশ। আকর্ষণীয় অবকাঠামো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলির এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন এবং ইয়োসেমাইট জাতীয় উদ্যান দেশটির দুইটি একমাত্র জাতীয় উদ্যান যেগুলো বন্যপ্রাণীর আশ্রয়কেন্দ্র।
বেশিরভাগ বিদেশি পর্যটক আমেরিকার শহরগুলি দ্বারা আকৃষ্ট হন, সেজন্যই তারা লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউ ইয়র্ক এবং শিকাগো সহ বড় শহরগুলিতে ভ্রমণ করেন। যাইহোক তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের উবস্থান ২ নম্বরে।
১। কানাডা
কানাডা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র, যা উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগর থেকে উত্তর দিকে আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত৷ এটি এমন একটি দেশ যেখানে একইসাথে বন্য, শহুরে এবং রোমান্টিক স্থানের দেখা মেলে।
বিশ্বখ্যাত নায়াগ্রা জলপ্রপাত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। আমেরিকাতে জলপ্রপাতটি পিছন থেকে দেখতে হয়। কানাডাতে সরাসরি সামনে থেকে দেখা যায় ফলে সম্পূর্ণ জলপ্রপাত ভালমতো দেখা যায়। এখানে প্রতি বছর প্রায় ৩০ মিলিয়ন মানুষের সমাগম হয়ে থাকে। এদেশেই বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেক অবস্থিত।
দেশটির কিছু প্রধান শহর যেমন- অটোয়া, মন্ট্রিওল, ভ্যানকুভার এবং টরন্টো সহ বড় বড় শহরগুলিতে বিশ্বের কিছু সেরা স্থাপত্য রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দেশের তালিকায় কানাডা আছে ১ নম্বরে।