ভ্রমণে গিয়ে অনেকেই সাশ্রয়ী হোটেল খোঁজেন। এমন পর্যটকদের রাত্রিযাপন চলনসই হলেই চলে। তাঁরা বরং নতুন জায়গা ও নতুন খাবারের অনুসন্ধানেই বেশি অর্থ ব্যয় করতে চান। এ রকম পর্যটকের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। আর এ ধরনের মানুষের জন্য ক্যাপসুল হোটেল একদম সঠিক জায়গা।
জাপানের বন্দরনগরী ওসাকার উমেদা অঞ্চলে ১৯৭৯ সালের দিকে প্রথম ক্যাপসুল হোটেল নির্মিত হয়। ‘ক্যাপসুল ইন ওসাকা’ নামের এই হোটেলের নকশা করেন দেশটির বিখ্যাত স্থপতি কিশো কুরোকাওয়া। তবে এর আগে ১৯৭২ সালেই ‘নাকাগিন ক্যাপসুল টাওয়ার’ নামের একটি ভবনের স্থপতি ছিলেন কিশো। বাণিজ্যিক ও আবাসিক—দুই ধরনের ব্যবস্থাসংবলিত এ ভবনটি দিয়েই বাস্তব রূপ লাভ করে ক্যাপসুল হোটেলের ধারণা। ধীরে ধীরে জাপানের বিভিন্ন শহরে এ ধরনের হোটেল ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমা বিশ্বে ‘পড হোটেল’ হিসেবে পরিচিত এই হোটেলগুলো বর্তমানে জাপান ছাড়া চীন, ইন্দোনেশিয়া, বেলজিয়াম, ভারতসহ অনেক দেশেই চোখে পড়ে। মূলত পর্যটকদের আকৃষ্ট করতেই এর সংখ্যা বাড়ছে।
ক্যাপসুলের আভিধানিক অর্থ ছোট প্রকোষ্ঠ বা ছোট জায়গা। সেখান থেকেই এমন নামকরণ। ক্যাপসুল হোটেলের কক্ষ সাধারণ আকারের একটি বিছানার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের সমান। অর্থাৎ কক্ষে শুধু একটি বিছানার সমান জায়গা থাকবে। বসে থাকা যায় কিন্তু দাঁড়ানো যায় না, এমন উচ্চতার ছাদ এসব কক্ষের বৈশিষ্ট্য। আমাদের দেশের দূরপাল্লার স্লিপিং বাসের কেবিনের সঙ্গেও এর তুলনা করা যায়। হোটেলগুলোতে একটি কক্ষের ওপর আরেকটি কক্ষ থাকে। তাই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হয়। অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে হয় ওয়াশরুম, রান্নাঘরসহ অন্যান্য সুবিধা।
প্রথম দিকে করপোরেট অফিসের কর্মীদের জন্য এ ধরনের আবাসন তৈরি করা হয়েছিল। ওই সময়ে জাপানে দীর্ঘ কর্মঘণ্টা শেষে অনেকেই রাতের পার্টিতে বুঁদ হয়ে থাকতেন। কেউ কেউ দীর্ঘ সময় ট্রেনে ভ্রমণ করে বাড়ি ফিরতে চাইতেন না। এর থেকে বরং অল্প খরচে ছোট্ট টিভি ও শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রসমেত একটি ব্যক্তিগত কামরায় রাত কাটাতে পারলে মন্দ কী! এ ছাড়া অর্থনৈতিক নানা সূচক মাথায় রেখে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের জন্যও ক্যাপসুল হোটেলের কথা ভাবা হয়েছিল। যাঁরা একা থাকেন, আয় করেন অল্প, অনায়াসেই তাঁরা যেন এসব জায়গায় রাত কাটাতে পারেন।
বর্তমানে অবশ্য এই হোটেলগুলো অনেক উন্নত হয়েছে। আধুনিক নকশা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন এসব পড হোটেলের কক্ষে বিভিন্ন প্রযুক্তির সুবিধা নেওয়া যায়। জাপানের ‘নাইন আওয়ারস’ নামের হোটেলের কথাই ধরুন। এগুলোকে ঘুম পরীক্ষাগারও বলা যায়। আপনি ৯ ঘণ্টার জন্য এখানে নিবন্ধন করতে পারেন। প্রথম ও শেষ এক ঘণ্টা গোসল, পোশাক পরিবর্তন ও অন্যান্য টুকিটাকি কাজের জন্য নির্ধারিত। মাঝখানের সাত ঘণ্টা হারাতে হবে নিখাদ ঘুমের দুনিয়ায়। শুধু তা–ই নয়, সেন্সরের সাহায্যে আপনার শ্বাস–প্রশ্বাস থেকে শুরু করে মুখের অভিব্যক্তিও পর্যবেক্ষণ করা হবে। আপনার হৃৎস্পন্দনের মাত্রা বুঝে, ঘুমের সমস্যা চিহ্নিত করে একটি রিপোর্টও তৈরি হবে। এমনকি জানতে পারবেন আপনার ঘুমের মান।
ঝুলন্ত স্বচ্ছ কাচের তৈরি পড, মরুভূমি ও জঙ্গলের পডও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। ক্যাম্পিংয়ে আমরা যে তাঁবু ব্যবহার করি, সেটাকেও একধরনের ক্যাপসুল বলা যায়। বাংলাদেশেও দু-একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের হোটেল চালু করেছে।
সূত্র: দ্য ডোপ নিউজ, বিবিসি