এই পৃথিবীতে মহাদেশের সংখ্যা কতগুলি? সবাই সহজেই এর উত্তরে ৭ বললেও, একটু সমস্যা থেকেই যায়। কারণ আমাদের জানা এই ৭টি মহাদেশ ছাড়াও আরও একটির হদিশ রয়েছে এই পৃথিবীতেই। আর ৪ বছর হয়ে গেল সেই মহাদেশ আবিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তবুও কোনো মানচিত্রে বা কোথাও সেই নতুন মহাদেশের নাম নেই কেন? সে কাহিনিতেও আসা যাবে, তবে তার আগে থাকল এই মহাদেশ আবিষ্কারের কাহিনি। যার জন্য অভিযাত্রীদের লেগে গিয়েছে ৩৭৫ বছর।
আসলে ইউরোপের অনেক অভিযাত্রীই মনে করতেন, ল্যাটিন আমেরিকা ছাড়িয়ে আরও দক্ষিণ-পশ্চিমে গেলে একটা নতুন মহাদেশের সন্ধান পাওয়া যাবে। সাধারণ মানুষ অবশ্য সেই ভাবনাকে পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিতেন। তেমনই এক ‘পাগল’ অভিযাত্রী আবেল তাসমান। ডাচ তাসমান একদিন জাহাজ নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন সেই নতুন মহাদেশের সন্ধানে। সেটা ১৬৪২ সাল। পুরু গোঁফে তা দিয়ে তাসমান জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি জয়ী হয়েই ফিরবেন।
নতুন মহাদেশের সন্ধান অবশ্য পেয়েছিলেন তাসমান। ল্যাটিন আমেরিকা পেরিয়ে আরও বেশ খানিকটা এগিয়ে যেতেই সমুদ্রের বুকে দেখা মিলল স্থলভাগের। তবে সেই আদিম জনজাতি অধ্যুষিত স্থলভাগে ইউরোপীয়দের পক্ষে পা রাখা সহজ ছিল না। বেশ কয়েক দফায় যুদ্ধ জিতে অবশেষে শুরু হল ‘সভ্যতার জয়যাত্রা’। তবে না, তাসমানের আবিষ্কার করা সেই মহাদেশ আমাদের অজানা নয়। এটি ওসেয়ানিয়া মহাদেশ। মানে অস্ট্রেলিয়া নামেই যাকে বেশিরভাগ মানুষ চেনেন। অবশ্য এছাড়াও সেখানে আছে নিউজিল্যান্ডের মতো দেশও।
তবে অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কারেই কিন্তু অভিযান থেমে থাকল না। কারণ অনেকে তখনও বিশ্বাস করেন, যে মহাদেশের সন্ধান করতে গিয়েছিলেন তাসমান তা তিনি পাননি। অবশেষে ২০১৭ সালে পাওয়া গেল সেই অজানা মহাদেশের হদিশ। নিউজিল্যান্ডের একদল অভিযাত্রী সেই মহাদেশের সন্ধান দিলেন। এমনকি সেই আবিষ্কারের প্রমাণও হাজির করলেন তাঁরা। এখানে একটু অবাক হওয়ার বিষয় আছে। কারণ পৃথিবীর মানচিত্র আঁকতে এখন আর জাহাজ নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিতে হয় না। স্যাটেলাইটের ছবিতেই সব ধরা পড়ে। তাহলে সেখানে একটা আস্ত মহাদেশের অস্তিত্ব ধরা পড়ল না?
আসলে এটিকে মহাদেশ বলা হলেও তার অবস্থান কিন্তু সমুদ্রের নিচে। উপরে রয়েছে প্রায় ২ কিলোমিটার উঁচু জলস্তর। আর অভিযাত্রীরা তার নাম দিয়েছেন জিল্যান্ডিয়া। আর এর আয়তন ৪.৯ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। এখানে প্রশ্ন জাগে, সমুদ্রের নিচে থাকা কোনো ভূখণ্ডকে কি মহাদেশ বলা চলে? এর সপক্ষে অবশ্য বেশ কিছু সংজ্ঞা ও নথি হাজির করে নিউজিল্যান্ডের ভূতাত্ত্বিকরা প্রমাণ করেছেন, যেহেতু সমুদ্রগর্ভ থেকে ভূখণ্ড অনেকটাই উঁচুতে তাই তাকে মহাদেশ বলে মেনে নিতেই হয়। তবে ৩৭৫ বছর ধরে অনুসন্ধানের পর যে মহাদেশের হদিশ পাওয়া গেল, তাকে এখনও স্বীকৃতি দিতে রাজি নন অনেকেই।
এর পিছনে অবশ্য রাজনৈতিক কারণকেই দায়ী করছেন নিউজিল্যান্ডের গবেষকরা। আসলে এই মহাদেশকে স্বীকৃতি দিলেই নিউজিল্যান্ডকে আর ওসেয়ানিয়ার অংশ বলা চলে না। কারণ একই ভূখণ্ডের কিছুটা উঠে এসেছে সমুদ্রের উপরে। আর তারই নাম নিউজিল্যান্ড। ফলে নিউজিল্যান্ডের সীমানা যেমন অনেকটাই বেড়ে যাবে, তেমনই বাড়বে রাজনৈতিক ক্ষমতাও। আর এইসব কারণেই নাকি চেপে রাখা হয়েছে আস্ত একটি মহাদেশের খবর। রাজনৈতিক চাপানউতোর চলতেই থাকবে। কিন্তু এই আবিষ্কারের কাহিনি সত্যিই রোমাঞ্চকর।