শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

পুরাণ ঢাকার ঈদুল আজহা ঐতিহ্য

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ জুলাই, ২০২১

আসছে ঈদুল আজহা। আর মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই দেশের মানুষ মেতে উঠবে মুসলমানদের অন্যতম বড় এই উৎসব নিয়ে। মজার একটি ব্যাপার হল ঈদ ঊল আজহা পালনের ক্ষেত্রে পুরাণ ঢাকাবাসীর রয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতি। যদিও দেড়-দুই শ বছর আগে হিন্দু অধ্যুষিত ঢাকায় সমাজব্যবস্থায় গরু কোরবানি দেওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। কথাসাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদের ‘আত্মকথা’ অনুযায়ী হিন্দু জমিদাররা তখন গরু কোরবানিকে অনুৎসাহিত করতেন। কোরবানি দিতে হতো ছাগল বা বকরি। যে কারণে কোরবানির ঈদ পুরাণ ঢাকায় ‘বকরি ঈদ’ নামেও পরিচিতি পায়। ১৮৩৮ সালে শহরের বণিকদের ভেতর চার-পাঁচজন মুসলমান ও সমসংখ্যক খ্রিস্টান ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন হিন্দু। এখনকার মতো তখন ঘরে ঘরে কোরবানি দেওয়ার মতো সমাজে তত বেশি বিত্তশালী ব্যক্তিও ছিল না। তবে মহল্লাপ্রধান বা সরদারের বাড়িতে প্রতি ঈদুল আজহায় একাধিক গরু-ছাগল কোরবানি দেওয়া হতো। তা ছাড়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়ও দৈন্যতা ছিল লক্ষণীয়। ১৯০৩ সালের সরকারি ছুটির তালিকা থেকে পাওয়া যায়, মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারি ছুটি ছিল মাত্র এক দিন। মূলত সাতচল্লিশ-পরবর্তী সময়ে ঢাকার মহল্লায় মহল্লায় ধুমধামের সঙ্গে ‘কোরবানির ঈদ’ পালিত হতে শুরু করে।

চাঁদ দেখা:

আহসান মঞ্জিলের নওয়াবদের আমলে কোরবানির ঈদ পালনের ব্যাপারে তারবার্তা আসত দিল্লি থেকে। তারপর তা জানিয়ে দেওয়া হতো পুরো শহরে। ঈদুল আজহার চাঁদ দেখা নিয়ে মতানৈক্যের ইতিহাস আছে। যা জানা যায়, অনুপম হায়াতের ‘নওয়াব পরিবারের ডায়েরিতে ঢাকার সমাজ ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থে উল্লিখিত ১৯২২ সালের ৩ আগস্টের দিনলিপি ও নাজির হোসেনের ‘কিংবদন্তির ঢাকা’ গ্রন্থ থেকে। যদিও এই তথ্য নিয়ে একেক জনের মধ্যে একেক রকম মতামত দেখা যায়।

ঢাকাইয়াদের পছন্দ মিরকাদিমের সাদা গরু:

একালে যেমন মাঠে-ময়দানে, রাস্তায় রাস্তায় গরুর হাট বসে, সেকালে তেমনটি ছিল না। সেকালে ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল যেমন কম, কোরবানির পশুর সংখ্যাও ছিল তেমনি সীমিত। নির্দিষ্ট কিছু জায়গা যেমন—রহমতগঞ্জ, গাবতলি, সোয়ারীঘাট, জিঞ্জিরায় গরুর হাট বসত। বিশেষত ঢাকার নওয়াব আব্দুল গনির নামে রহমতগঞ্জের হাটটি ছিল প্রসিদ্ধ, যা গনি মিয়ার হাট নামে পরিচিত। এই হাটের প্রচার কৌশলটিও ছিল বেশ চমকপ্রদ। হাটের ঢুলিরা ঢোল বাজিয়ে চিৎকার করে বলত, ‘ধার করো, কর্জ করো, গনি মিয়ার হাট করো। ’ হাটে মুন্সীগঞ্জ জেলার মিরকাদিম বাজার থেকে আসত সাদা নাদুসনুদুস গাই গরু। পরিমাণে কম হলেও আসে এখনো। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উত্কৃষ্টমানের মিরকাদিমের ওই গরু কিনতে আসেন বিত্তশালী ও ব্যবসায়ীরা। গরুগুলো বিশেষ পরিচর্যায় পালিত হয়। এ গরুর গোশত বেশ সুস্বাদু। সাধারণত খৈল, ভুসি, খুদ, কুঁড়া ইত্যাদি খাওয়ানো হত এসব গরুকে।

ঢাকাবাসীর বৈচিত্র্যপূর্ণ রান্না:

কোরবানির মাংস দিয়ে ঢাকাবাসী তৈরি করত নানা রকমের খাদ্যদ্রব্য। কিছু পদ বিলুপ্ত হলেও এরই মধ্যে নতুন করে আরো কিছু পদ যুক্ত হয়েছে ঢাকাইয়াদের ঈদুল আজহার খাদ্য তালিকায়। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে চলে অঢেল গোশত দিয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ রান্নার মহড়া। ঢাকাবাসীর রান্নার গুণকীর্তন অনেক লেখকই করেছেন। হেকিম হাবীবুর রহমান ‘ঢাকা : পঞ্চাশ বছর আগে’ শীর্ষক গ্রন্থে ঢাকাবাসীর তৈরি কাবাব, কোপ্তা, কালিয়াসহ নানা রকমের মাংস-জাত খাদ্যদ্রব্যের গুণকীর্তন করেছেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com