পাহাড়ে ঘেরা কাশ্মিরে ছোট্ট ‘বাংলাদেশ’

দেশভাগের পর বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ চলে আসেন ভারতে। বাংলাদেশ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তান। এটা ১৯৪৭-এর চিত্র। এরপর ১৯৭১ সাল। যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার চলছে বাংলাদেশের মানুষের ওপর। গ্রামের পর গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে। সেই সময় জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

সেই বছর একই চিত্র দেখা যায় ভারতের বাংলাদেশেও। ভারতের বাংলাদেশ-শুনে কপালে ভাঁজ পড়ল? হ্যাঁ, ভারতের মধ্যেও রয়েছে বাংলাদেশ। কাশ্মীরের কোলে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম এই বাংলাদেশ। যদি ১৯৭১-এর আগে এই বাংলাদেশ গ্রামেরও অস্তিত্ব ছিল না কাশ্মীরে।

dhakapost

১৯৭১ সালে যখন পাকিস্তানের সেনারা বাংলাদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় কাশ্মীরের জুরিমন গ্রামে হঠাৎ করে আগুন লেগে যায়। তারপর বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। জুরিমন গ্রাম থেকে একটু দূরে গিয়ে তারা আবার বসবাস শুরু করেন। একসঙ্গে গড়ে তোলেন ঘর। আর যেহেতু ১৯৭১ সালে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ গড়ে ওঠে, তাই নাম মিলিয়ে কাশ্মীরের এই গ্রামের নামও রাখা হয় ‘বাংলাদেশ’।

কাশ্মীরের বান্ডিপুরা জেলায় অবস্থিত এই বাংলাদেশ গ্রাম। পাকিস্তান সীমান্তের কাছে অবস্থিত এই পাহাড়ি গ্রাম। প্রথম দিকে ওই গ্রামে ৫-৬টি বসত বাড়ি ছিল। সেটাই এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০টি। প্রায় ৩০০ লোকের বাস এই বাংলাদেশে। এখানকার বেশিরভাগ মানুষের জীবাণু চাষবাস ও পশুপালন করে। ১৯৭১ সালে গ্রাম তৈরি হলেও দীর্ঘদিন সরকারি খাতে এ জায়গার কোনও অস্তিত্ব ছিল না। ২০১০ সালে বান্ডিপুরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের থেকে এ গ্রামকে মর্যাদা দেওয়া হয়।

গ্রামের ইতিহাস যেমন রোমাঞ্চকর, তেমনই এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ মনোরম। বর্তমানে এ বাংলাদেশ গ্রাম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ। গুলমার্গ, সোনমার্গ, পেহেলগাঁওয়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে বাংলাদেশও। পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে এই গ্রামে। শ্রীনগর থেকে বান্ডিপুরার দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার। বান্ডিপুরা থেকে সোপুরের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে গেলেই পৌঁছে যাবেন বাংলাদেশ নামক গ্রামে।

উলার হ্রদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গোটা গ্রাম। মূলত এই হ্রদের টানেই পর্যটকদের ভিড়ও লক্ষ্য করা যায়। কার্পেটের মতো সাজানো সবুজ বুগিয়াল, আর হ্রদের পানি যেন কাশ্মীরের বাংলাদেশের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। আর তার সঙ্গে দূরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে উঁচু উঁচু পর্বত। তার চূড়া ঢাকা সাদা বরফের চাদরে। যেখানে উপত্যকা বলা হয়, ভূস্বর্গ, সেখানকার বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনমুগ্ধকর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: