সুখী মানুষের দেশের নাম শুনলেই নিজেকেও কেমন সুখী সুখী মনে হয়। আর মনে হয় এখনই ঘুরে আসি, তাই না? আগের পর্বে ভুটান সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা এবং কিছু টিপস দিয়েছিলাম। আজকে লিখবো ট্যুর প্ল্যান এবং ভুটানের স্থানগুলো সম্পর্কে। চলুন তবে আর দেরি না করে পাহাড়ের দেশ ভুটান ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক!
প্লেনে গেলে আগে থেকে ভিসার কোন ঝামেলা নেই কারণ ভুটানে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া হয়। তবে কোথায় কোন হোটেলে থাকবেন, হোটেল বুকিং এর অনলাইন কপি রাখা ভালো। অনেকসময় দেখতে চায়। ভুটানের একটি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট যেটা পারোতে অবস্থিত। তাই আপনি ফ্লাইটে গেলে আগে পারোতে পৌঁছাবেন। চাইলে আগে পারো তারপর থিম্পু, পুনাখা ঐদিকে যেতে পারেন। অথবা যদি ফ্লাইটে ফেরেন তাহলে ফেরার পথে পারো ঘুরে যেতে পারেন।
পাহাড়ের দেশ ভুটান ভ্রমণ করতে যদি বাই রোডে যেতে চান তাহলে হানিফ, শ্যামলী কিংবা এস এ পরিবহনের বাস আছে ঢাকার আরামবাগ এবং কল্যাণপুর থেকে ছাড়ে। রওনা দিলে সকালে পৌঁছাবেন বুড়িমাড়ি বর্ডারে। বর্ডার অফিসের কাজ শুরু হয় সকাল ৯ টায়। ইমিগ্রেশন অফিসের কাছে প্রচুর দালাল থাকে কাগজপত্রের কাজ করে দেয়ার জন্য। ভুলেও কোন দালালকে দিয়ে কাজ করাবেন না। আপনি যাচ্ছেন সেই বাসের লোকদের কিছু টাকা (১০০ টাকার মতন) দিতে পারেন তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে দেয়ার জন্য। তারপর পায়ে হেঁটেই প্রবেশ করবেন ভারতের চেংড়াবান্ধা বর্ডারে। ওখানে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ওখানে থাকা মানি এক্সচেঞ্জের দোকানে গিয়ে রুপি করে নিতে পারেন। ওরা সাধারণত ভালো রেট দেয়। আর এক্সচেঞ্জের রশিদ অবশ্যই নিয়ে সাথে রাখবেন। পরে অনেক সময় দরকার হতে পারে। এবার চেংড়াবান্ধা থেকে জয়গাঁও যেতে হবে- বাস কিংবা ট্যাক্সি দুইভাবেই যেতে পারেন। বাস ভাড়া ১০০ রুপির মতো আর ট্যাক্সির সাইজ প্রায় ১০০০-২০০০ রুপি নিবে। তবে ট্যাক্সি ভাড়া খুব দরদাম করে ঠিক করতে হয়। কিন্তু ঢাকা থেকে শিলিগুড়ির টিকেট কাটা থাকলে আপনি ঐ বাসে করেই যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে নামতে হবে ময়নাগুড়ি বাইপাস। এখানে বাসে নেমে এই প্রথম আপনাকে চড়তে হবে ভারতীয় বাসে হাসিমারা নামক স্থানে যাওয়ার জন্য। ময়নাগুড়ি থেকে হাসিমারা বাস ভাড়া হবে প্রায় ৫০ রুপি। বাস থেকে নেমে যাবেন জয়গাঁও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিসে। এখান থেকে শুধুমাত্র থিম্পু ও পারো শহর ভিজিট করার অনুমতি দেয়া হয়। পুনাখা, গেলেফু, হাঁ ভ্যালী এসব জায়গা দেখার জন্য থিম্পু থেকে আলাদা করে অনুমতি নিতে হয়।
ইমিগ্রেশন অফিসের সব কাজ শেষ করে প্রবেশ করবেন ভুটানের ফুন্টশোলিং শহরে। শহরে প্রবেশ করেই মনটা হয়ে যাবে। কেননা ফুন্টশোলিং খুবই পরিষ্কার, ঝকঝকে একটি শহর এবং এই সুন্দর পরিচ্ছন্নতা আপনি পুরো ভুটান জুড়েই দেখতে পাবেন। আপনি বেশি সময় নিয়ে গেলে ফুন্ট শোলিং শহরে একটা দিন থেকে যেতে পারেন। আর আপনার যদি পৌঁছাতে বিকেল হয়ে যায় এবং আগে থেকে হোটেল বুকিং দেয়া না থাকে তাহলে এখানে থেকে যাওয়াই ভালো। কেননা ফুন্টশোলিং থেকে থিম্পু বাসে যেতে লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। আর আগের আর্টিকেলেই বলেছিলাম ভুটানে রাত ৮টার পরে হোটেল, রেস্টুরেন্ট কিংবা দোকান আর কিছুই খোলা পাবেন না। তাই সেটা মাথায় রেখে ঐভাবে প্ল্যান করবেন।
ভুটানে মোট ২০টি শহর আছে। আপনি যদি ১০-১৫ দিনের একটি প্ল্যান করেন তবে অনেক কিছু দেখা যাবে। কিন্তু আরও কম সময়ের জন্য গেলে বিশেষ দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। পুরো ভুটানের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং কালচার প্রায় একই রকমের। পাহাড়ের দেশ ভুটান ভ্রমণে আপনি যদি নিম্নোক্ত স্থানগুলো ঘুরে দেখেন তবে মানুষের জীবনযাত্রা, স্বভাব তথা পুরো ভুটান সম্পর্কেই একটা ধারণা পাবেন। স্থানগুলো হলো-
১) ফুন্টশোলিং,
২) থিম্পু,
৩) পারো,
৪) পুনাখা,
৫) গেলেফু,
৬) সমদ্রুপ ঝংকার ইত্যাদি।
পাহাড়, নির্মল পরিবেশ, পরিচ্ছন্ন দূষণমুক্ত বাতাস আর সহজ সরল সুখী মানুষের দেশ ভুটান। অল্প কয়েকদিনের ছুটিতে এমন সুন্দর একটা দেশ অনায়াসে ঘুরে আসতে পারেন মানুষকে সাথে নিয়ে অথবা পরিবারের সবাই মিলে। তবে ভিন্ন কোন দেশে গেলে দয়া করে এমন কোন কাজ কিংবা আচরণ করবেন না যাতে আপনার দেশের ও দেশের মানুষের সুনাম নষ্ট হয়। সেই দেশের নিয়ম, সামাজিক রীতি জেনে সেগুলো যথাযথভাবে মেনে চলুন। ভ্রমণ মানুষের শরীরের ক্লান্তি দূর করে, নতুন অভিজ্ঞতা দেয়, জীবন সম্পর্কে অনেক নতুন ধারণা দেয়। তাই সময় পেলেই কোথাও ঘুরতে বেরিয়ে যান। নিজে ভালো থাকুন, ভালো রাখুন প্রিয়জনদের!