ঐতিহ্য এবং বয়স বিবেচনায় ভারতের প্রায় সমসাময়িক হলেও বিশ্ব ঐতিহ্যের দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। ভারতের ৩৯টি বিশ্ব ঐতিহ্যের বিপরীতে পাকিস্তানের রয়েছে কেবল ৬টি।
পাকিস্তানের উল্লেখ করার মত সবচেয়ে বড় নিদর্শনের মাঝে আছে মাহেঞ্জোদারো, তক্ষশীলা, লাহোর দূর্গ ও শালামার বাগান।

মাহেঞ্জোদারো, সিন্ধু
১৯৮০ সালে পাকিস্তানের যে তিনটি ঐতিহাসিক তিনটি স্থান সর্বপ্রথম ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল তার একটি মাহেঞ্জোদারোর ধ্বংসাবশেষ। সিন্ধু রাজ্যের ইন্দু উপত্যকায় অবস্থিত প্রাচীন এই শহরটি মানব সভ্যতার আদি নিদর্শনের মাঝে অন্যতম। হরপ্পা সভ্যতার সাক্ষ্য বহন করা এই শহরটি প্রত্নত্বত্তের জন্য স্বর্গস্বরূপ। খ্রিস্টের জন্মের ২,৫০০ বছর আগে নির্মিত হলেও শহরের গঠন আধুনিক নগর পরিকল্পনাকেও হার মানাতে বাধ্য।
পুরো শহরটি দুই ভাগে বিভক্ত। নিচু অঞ্চলটি শহরের পরিকল্পনা নির্দেশ করে। কিন্তু অপেক্ষাকৃত উঁচু অংশটি সিন্ধু নদের উপর গড়ে উঠা বাঁধ এবং শহর রক্ষার দূর্গ হিসেবে ব্যবহার করা হত।
সভ্যাতার উষালগ্নে মানুষের সংস্কৃতি, ধর্ম এবং নগর পরিকল্পনা, এক কথায় হরপ্পান সভ্যতার আদ্যোপান্ত বোঝার জন্য মাহেঞ্জোদারো এক অসাধারণ উদাহরণ।
তক্ষশীলা
তক্ষশীলা মূলত চারটি আলাদা আলাদা নিদর্শনের সম্মিলিত রূপ। পাকিস্তানের পাঞ্জাবে অবস্থিত এই নিদর্শন শুধু পাকিস্তান নয় বরং পুরো উপমহাদেশে মানব সমাজের উৎপত্তি এবং বিকাশকে নির্দেশ করে। সরাইকালা, ভির, সিরকাপ এবং সিরকুশের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এটি। প্রতিটি শহর আলাদা আলাদা সময় এবং আলদা ঐতিহ্যের ইঙ্গিত বহন করে। সব মিলিয়ে তক্ষশীলা ভারতীয় উপমহাদেশের সভ্যতার একটি পদচিহ্ন হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত।
লাহোর দূর্গ এবং শালামার বাগান
পাকিস্তানে মাহেঞ্জোদারোর সাথে আর যে দুটি স্থান বিশ্ব ঐতিহ্যে সবার আগে স্থান করে নিয়েছিল তা হলো লাহোর দূর্গ এবং শালামার বাগান। এই দুটিই দেশটির ঐতিহ্যবাহী শহর লাহোরে অবস্থিত। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যগত বিভিন্ন কারণে লহোর শহরটি পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। আর সেটি আজকে একদিনে নয় বরং যুগ যুগ ধরে বেড়ে উঠেছে।

লাহোর দূর্গ এবং শালামার বাগানের মাঝে দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। মুঘল সম্রাট শাহজাহানই এই দুটি স্থাপনা নির্মান করেন। মার্বেল পাথরে গড়ে তোলা এক অসাধারণ মুঘল স্থাপত্য লাহোর দুর্গ। এটি মূলত প্রাদেশিক শাসনকেন্দ্র এবং বিচারালয় হিসেবে ব্যবহার করা হত। আর শালামার বাগান গড়ে উঠেছিল চিত্ত বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে। মুঘল আভিজাত্য এবং ইসলামি স্থাপত্যের বিচারে দুটিই পাকিস্তানের দর্পণ হয়ে স্থান করে নিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়।