করোনাভাইরাস মহামারিতে সৃষ্ট বিচ্ছিন্নতার তিন বছর পর ‘গ্লোবাল হাব’ খ্যাত হংকংয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এবং পর্যটন শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে বিনামূল্যে ৫ লাখ এয়ারলাইন টিকিট দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে হংকং এর সরকার।
বুধবার (১ মার্চ) “হ্যালো হংকং” নামে এ পরিকল্পনার উন্মোচন করা হয় যা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ চলছে। করোনা মোকাবিলায় ২০২০ সালের জুলাইয়ে মাস্ক পরার যে নিয়ম জারি করেছিল হংকং; ৯৪৫ দিন পর মঙ্গলবার তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
তিনটি এয়ারলাইন্সের মধ্যে টিকিট দেওয়া হবে – পতাকাবাহী ক্যাথে প্যাসিফিক, এইচকে এক্সপ্রেস এবং হংকং এয়ারলাইনস। ৫ লাখ টিকিটের জন্য শহরটির মোট খরচ হয়েছে ২৫৪.৮ মিলিয়ন ডলার।
হংকং ভ্রমণে আগ্রহী ভ্রমণকারীরা ফ্লাইট টিকিটের লটারিতে তাদের নাম লিখতে ১ মার্চ থেকে ওয়ার্ল্ড অফ উইনার্স স্প্ল্যাশ পেজে যেতে পারেন। টিকিট তিনটি ধাপেবরাদ্দ করা হবে: ১ মার্চ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে মানুষের জন্য, ২ এপ্রিল থেকে চীনের মূল ভূখণ্ডে বসবাসকারী ব্যক্তিদের জন্য এবং ১ মে থেকে বাকি বিশ্বের সকলের জন্য।
কারা প্রথম টিকিট পাবেন?
প্রাথমিকভাবে থাইল্যান্ডের বাসিন্দারা হংকংয়ের বিমানের ফ্রি টিকিট পাবেন। চলতি মার্চ মাসে ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজ লিমিটেড ৮০ হাজার রাউন্ড-ট্রিপ টিকিট হস্তান্তর করবে। বুধবার থেকে থাইল্যান্ডের পর্যটকদের জন্য বরাদ্দ করা ১৭ হাজার ৪০০টি টিকিটের বিতরণ শুরু হয়েছে।
এরপর চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন এবং পরবর্তীতে আশপাশের অন্যান্য এশীয় দেশগুলোর পর্যটকদের জন্য টিকিট বিতরণ শুরু হবে।
ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজ লিমিটেডের টিকিট বিতরণ:
• থাইল্যান্ডের জন্য, ১ মার্চ থেকে-১৭ হাজার ৪০০ টিকিট
• সিঙ্গাপুরের জন্য ২ থেকে ৮ মার্চ-সাড়ে ১২ হাজার টিকিট
• ফিলিপাইনের জন্য ৩ থেকে ৯ মার্চ-২০ হাজার ৪০ টিকিট
• ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৫ থেকে ২১ মার্চ-১১ হাজার ৫১০ টিকিট
• মালয়েশিয়ার জন্য ১৬ থেকে ২২ মার্চ-৭ হাজার টিকিট
• ভিয়েতনামের জন্য ১৭ থেকে ২৩ মার্চ-৮ হাজার ৮০০ টিকিট
• কম্বোডিয়ার জন্য ১৮ থেকে ২৩ মার্চ-২ হাজার ৩৯০ টিকিট
হংকং এয়ারলাইন্স বুধবার থেকে থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের বাসিন্দাদের মাঝে টিকিট বিতরণ করবে। তবে প্রত্যেকটি দেশে কতসংখ্যক টিকিট হস্তান্তর করা হবে তা প্রকাশ করেনি এই বিমান সংস্থা। গ্রেটার বে এয়ারলাইন্স মে মাসে তাইওয়ানের টিকিট দেবে, এরপর জুলাইয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এইচকে এক্সপ্রেস এপ্রিলে টিকিট বিতরণ শুরু করবে। এই বিমান সংস্থাও টিকিটের সংখ্যার বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি।
এছাড়া আগামী এপ্রিল মাসে চীনের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের জন্য বিনামূল্যের টিকিট বিতরণ শুরু হবে। জুলাই মাসে হংকংয়ের বাসিন্দাদের জন্য প্রায় ৮০ হাজার টিকিট ছাড়া হবে। যদিও এসব টিকিট কোন রুটের জন্য দেওয়া হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
• আবেদন করতে হবে কীভাবে?
ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজ লিমিটেডের ওয়েবসাইটে প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর কুইজে অংশ নিয়ে তিনটি প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। যারা সঠিক উত্তর দিতে পারবেন, তারা আগে আসলে আগে ভিত্তিতে টিকিট পাবেন। একজন আবেদনকারী কেবল একবারই এন্ট্রি জমা দিতে পারবেন। বিজয়ীদের ব্যাপারে আগামী ৩ এপ্রিল ক্যাম্পেইনের ওয়েবসাইটে ঘোষণা দেওয়া হবে। একই দিনে ই-মেইলের মাধ্যমে টিকিট প্রাপ্তির বিষয়টি বিজয়ীদের নিশ্চিত করা হবে।
হংকং এয়ারলাইন্সও আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে টিকিট দেবে। এই বিমান সংস্থা তাদের ক্যাম্পেইন পেইজে আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে।
• কে যোগ্য আর শর্ত কী?
ক্যাথে বলেছে, অংশগ্রহণকারীদের কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সী হতে হবে। প্রত্যেক বিজয়ী কেবল একটি টিকিটই পাবেন। বিজয়ীদের বিমান টিকিটের ট্যাক্স ও সারচার্জ দিতে হবে। টিকিট ফেরত-হস্তান্তরযোগ্য নয়। এছাড়া বিমানের আসনও পরিবর্তন করার কোনও সুযোগ থাকবে না।
• টিকিটের মেয়াদ কী শেষ হবে?
ক্যাথের তথ্য অনুযায়ী, টিকিটের মেয়াদ একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর শেষ হবে। টিকিট বিজয়ীরা ই-মেইলের মাধ্যমে একটি ইউনিক কোড পাবেন। তারপর টিকিট পাওয়ার জন্য এক মাসের মধ্যে এটি ব্যবহার করতে হবে।
ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারওয়েজ লিমিটেড বলছে, টিকিট বুক করার পর হংকংয়ে অবস্থানের সর্বনিম্ন সময় হবে দুই দিন এবং সর্বোচ্চ সাত দিন। বিজয়ীদের ইউনিক কোড সম্বলিত ই-মেইল পাওয়ার ৯ মাসের মধ্যে হংকং ভ্রমণ করতে হবে।
চীনের কোভিড নীতি অনুসরণ করে হংকংয়ে বিশ্বের অন্যতম কঠোর করোনা বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। তবে অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে সেখানকার সরকার পর্যটকদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ঘোষণার পাশাপাশি বিনামূল্যে বিমানের টিকিট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গত বছর হংকংয়ের অর্থনীতি সাড়ে ৩ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে; যা চার বছরে তৃতীয় সংকোচন। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪০ বিলিয়ন ডলার ঘাটতির মুখে পড়েছে এই নগরী; যা সেখানকার সরকারের ধারণার চেয়েও প্রায় তিনগুণ বেশি।