সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে এশিয়ার দেশগুলোর একটা বিশেষ কদর আছে। একঘেয়েমি শীত প্রধান অথবা শুষ্ক আবহাওয়ায় অভ্যস্ত পশ্চিমা নাগরিকরা ।
তাই এশিয়ার উষ্ণ এবং আদ্র আবহাওয়ার ছোঁয়া পেতে দূর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসতে মোটেও দ্বিধা করে না। এখানকার আবহাওয়া, মানুষ এবং সংস্কৃতি সবই যেন তাদের কাছে নতুনত্ব বয়ে নিয়ে আসে।
সম্প্রতি পর্যটকদের পছন্দের ওপর ভিত্তি করে মার্কিন বার্তা সংস্থা ইউএস নিউজ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে।
সেই তালিকা থেকে ট্রাভেল বাংলাদেশের পাঠকদের জন্যে আজ থাকছে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে এশিয়ার সেরা ৩টি গন্তব্যের গল্প।
দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্রত্তম দেশ মালদ্বীপ একটি দ্বীপ রাষ্ট্র, ভারত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত চমৎকার এই দেশটি আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগ্রহের শীর্ষের একটি হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
প্রায় ১ হাজার ২০০ দ্বিপের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই চমৎকার দেশটি। এখানকার প্রায় প্রতিটি দ্বিপেই আছে শুভ্র বালুকাময় সৈকত, কোরাল রিফ এবং সচ্ছ নীলাভ পানির এক অপূর্ব সমন্বয়।
একজন নির্বাসিত রাজা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত আজকের মালদ্বীপ। কলিঙ্গের রাজা তার ছেলে আদিত্যর ওপর রেগে গিয়ে মালদ্বীপে নির্বাসন দেন। এরপর রাজা আদিত্য সেখানে তাঁর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
এশিয়ার দ্বিতীয় চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র মালদ্বীপে রয়েছে আরামদায়ক সৈকত সমৃদ্ধ এলাকা। যুগলদের কাছে মালদ্বীপ হচ্ছে হানিমুন গন্তব্য!
এখানকার সৈকতগুলোতে স্কুবা ডাইভিং এবং স্নরকেলিং করার জন্যে আদর্শ, যা আপনার মনকে বর্ণিল অভিজ্ঞতায় ভরে দিবে। মালদ্বীপে প্রায় ১,১৯০ টি কোরাল রয়েছে। পৃথিবীর মধ্যে মালদ্বীপের অবস্থান সবচাইতে নিচু ভুমি। এছাড়া এটি পৃথিবীর সবচাইতে সমতল ভুমি।
শুধুমাত্র রিসোর্ট ও হোটেল ব্যাতিত অন্য কোথাও অ্যালকোহল পাওয়া যায় না। মালদ্বীপ পৃথিবীর সবচাইতে ক্ষুদ্র মুসলিম দেশ। ছুটি কাটানোর জন্যে মালদ্বীপ খুব নিরাপদ একটি জায়গা। দেশটিতে শিক্ষিতের হার শতকরা ৯৮ শতাংশ যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। মালদ্বীপেই বিশ্বের প্রথম আন্ডার ওয়াটার ক্যাবিনেট মিটিং অনুষ্ঠিত হয়।
ব্রিটিশদের কাছ থেকে চিনের আওতায় চলে যাওয়া ক্ষুদ্র অথচ অত্যন্ত উন্নত এই দেশটি এশিয়াকে পৃথিবীর বুকে সুপরিচিত করতে অন্যতম একটি রাষ্ট হিসেবে পরিচিত।
দীর্ঘদিন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধিনে থাকার কারণে তাদের চলাফেরা, খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে প্রায় জীবনের সব ক্ষেত্রেই পশ্চিমা একটা প্রভাব খেয়াল করা যায়।
এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় হংকং শহর অনেক উন্নত এবং পরিকল্পিত উপায়ে তৈরি করা। ছোট এই এলাকার জনবসতি অনেক বেশি হলেও পর্যাপ্ত পরিকল্পনার কারণে এখানে নেই কোন ট্রাফিক জ্যাম বা অন্য কোনো অব্যাবস্থা। নেই দুর্নীতি, নোংরা পরিবেশ অথবা নিরাপত্তাহিনতা।
হংকং এর আরও প্রাকৃতিক পরিবেশ গুলো উপভোগ করতে চাইলে এর আশে পাশে ছড়ানো দ্বিপগুলোতে বেড়াতে যেতে হবে। এখানে পাবেন অনেক সুন্দর সব সৈকত এবং সব ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা।
হংকং দ্বিপ, লান্তাউ দ্বিপ, কউলুন পেইনিনসুলা সহ মত ২৬২টি দ্বিপ মিলে হংকং গঠিত। এটা পৃথিবীর চতুর্থ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। তালিকার প্রথমে আছে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা।
ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হলেও নগরায়নের জন্যে ২৫ শতাংশ জায়গা এবং পার্ক ও বিনোদনের জন্যে ৪০ শতাংশ স্থান বরাদ্দ আছে।
বাকি এলাকা পুরোটাই বনাঞ্চল। হংকং এর বাসিন্দাদের হংকঙ্গিজ বা হংকঙ্গার বলা হয়। এখানে চীনা (ক্যান্টোনিজ) এবং ইংরেজি এই দুই ধরনের ভাষা প্রচলিত আছে। হংকং কে বলা হয় স্কাইস্ক্র্যাপারের শহর।
কোন বিল্ডিং ১৪ তলার বেশী হলে তাঁকে স্কাইস্ক্র্যাপার বলা হয়। সেই হিসেবে হংকং এ সবচাইতে বেশী স্কাইস্ক্র্যাপার আছে। ঢাকা থেকে হংকং বিমান ভাড়া জনপ্রতি ২২,২০০ – ২২,৩০০ টাকা থেকে শুরু হয় ( সময় অনুযায়ী তারতম্য ঘটে)।
জাপানের রাজধানী টোকিওকে বলা হয়ে থাকে এশিয়ার চমৎকার শহর। শুধু এশিয়া না বরং পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এবং আধুনিক শহর বলা হয়ে থাকে এই টোকিওকে।
একই সাথে দেশের রাজধানী এবং প্রধান শহর হবার কারণে এখানে জনবসতি ও ব্যাস্ততা অনেক বেশি। যে কারনে মেগাসিটি হিসেবে টোকিও স্থান পায় সবার শীর্ষে।
আরও জানতে : ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট : এশিয়া মহাদেশ (জাপান পর্ব)
টোকিও শহরের পুরোটাই আসলে অনেক মনমুগ্ধকর। এর পাশাপাশি জুকিজি মার্কেট, টোকিও ন্যাশনাল মিউজিয়াম ও মেইজি স্রাইনের মত অনেক দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের দুর্লভ অভিজ্ঞতা পাবেন।
শুধু এশিয়াতে নয়, পশ্চিমা বিশ্বের কাছেও অত্যন্ত জনপ্রিয় শহর টোকিও, যার অন্যতম একটি কারণ হলো এখানকার ঐতিহ্যবাহী প্রাসাদগুলো।
মেগাসিটি হওয়াতে টোকিওর রাস্তায় সর্বদা লোকে লোকারণ্য থাকে, তবে তা ঢাকার মতো নয় নিশ্চই। জাপানিদের বলা হয় দুনিয়ার সবচে শৃঙ্খলিত জাতি। তাই এখানে চলতে হলে আপনাকে অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। যেমন : বাসস্ট্যান্ড, লিফট, কিংবা খাবরের জন্য অবশ্যই লাইন ধরতে হবে, অন্যদের সহযোগিতা করতে হবে, কাউকে বিরক্ত করা যাবে না ইত্যাদি। এগুলা মোটামুটি আইন হিসেবে বিবেচিত হয়।
জাপানের মানুষের ভদ্রতা আর বিনয় জগৎ বিখ্যাত। টোকিও রাস্তায় চলতে গেলে অনেক মজার মজার স্ট্রিট সাইন দেখতে পাবেন। এখানকার খাবার দাবার অনেক সস্তা এবং স্বাস্থ্যসম্মত। এবং খুব সহজেই হাতের কাছেই তা পাওয়া যায়।
চুলের ব্যাপারে জাপানি ছেলে এবং মেয়েরা অনেক সৌখিন। রাস্তায় বেরলে বিভিন রকমের ও রঙের হেয়ার স্টাইল আপনাকে সেই কথাই বলবে। ঢাকা-টোকিওর বিমান ভাড়া সাধারণত ৪৫,০০০ টাকা বা তাঁর কাছাকাছি থেকে শুরু হয়, তবে সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী তা ওঠানামা করে।
নাবিলা বুশরা