বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:২১ অপরাহ্ন

পরীক্ষামূলক ট্রেন চালু হতে পারে এ মাসে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ২০২৪

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নতুন একটি ট্রানজিট রুটে চলতি মাসেই পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। নতুন রুটে ভারতের থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পাবনার ঈশ্বরদী, নাটোরের আব্দুলপুর, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, নীলফামারীর চিলাহাটী হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে যাবে। নতুন এই রুটের ম্যাপ আজ সোমবার ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরকালে দুই দেশের মধ্যে এই নতুন রেল ট্রানজিট চালুর সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই স্মারকের বাস্তবায়নের তৎপরতা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

ঢাকা থেকে দর্শনা-গেদে ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট দিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন কলকাতা পর্যন্ত চলাচল করে। খুলনা থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল ইন্টারচেঞ্জ দিয়ে কলকাতা চলাচল করে বন্ধন এক্সপ্রেস। আর ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে চিলাহাটী-হলদিবাড়ী ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট দিয়ে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত চলাচল করে। এই তিন যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়া বিভিন্ন ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট দিয়ে নিয়মিত মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। তবে এবার নতুন যে রেল ট্রানজিট চালু হচ্ছে সেটা একটি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে অন্য একটি ইন্টারচেঞ্জের মাধ্যমে আবার ভারতে যাবে। এই ধরনের ট্রানজিট নতুন হলেও ঢাকায় রেল কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন ট্রানজিটের কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।

এ প্রসঙ্গে শনিবার বিকালে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর যুগান্তরকে বলেন, দুদেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বিষয়ক যে সমঝোতা স্মারক দুদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে হয়েছে-এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ রেলেও আমূল পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশ রেল অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হবে। আমার সঙ্গে ভারতীয় রেলওয়ে উপদেষ্টা সাক্ষাৎ করেছেন। আজ সোমবার (১ জুলাই) তারা একটি রুট ম্যাপস আমাদের কাছে প্রদান করবেন। সেই অনুযায়ী আমাদের রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে বিশেষ বৈঠক হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হবে। এরপর আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অর্থাৎ জুলাই মাসের মধ্যে ভারতকে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। ড. হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, বর্তমানেও দুদেশের মধ্যে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করছে। এসব ট্রেন থেকে বাংলাদেশ রেল সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের রেল ব্যবহার করে ভারত সরাসরি ট্রেন চালালে আয় যেমন বাড়বে-রেলের উন্নয়নেও ভারত আরও বেশি সহযোগিতা করবে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী ট্রেন হলদিবাড়ী থেকে যাবে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও স্টেশন পর্যন্ত। এর ফলে গেদে-দর্শনা সীমান্ত থেকে হলদিবাড়ী-চিলাহাটী রুটকে সংযুক্ত করা হবে। এদিকে রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা রুটে ট্রেন চালু করতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে-যোগ করেন ড. হুমায়ুন কবীর।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সঙ্গে দেশটির অপর অংশের সংযোগের জন্য বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই অংশের মধ্যে শিলিগুড়ি করিডর নামে প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি করিডর ছাড়া সরাসরি কোনো সংযোগ পথ নেই। এই পথে ভারতের দুই অংশের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ আছে। করিডরটি অনেকটা মুরগির গলার মতো দেখতে হওয়ায় এটি ‘চিকেনস নেক’ নামে অধিক পরিচিত। এই করিডরের পাশে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের অবস্থান। চীনের সীমান্তও বেশি দূরে নয়। ফলে চীনের সঙ্গে ভারতের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সংযোগ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধাজনক। মিয়ানমারের কালাদান নদীর মধ্য দিয়েও দুই অংশের সংযোগ সৃষ্টির ট্রানজিট চালুর চেষ্টা করছে ভারত। মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পটির কাজ সাময়িক বন্ধ আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন ট্রানজিট প্যাকেজ বাংলাদেশের জন্যও লাভজনক হবে। কারণ বাংলাদেশের পণ্য নেপাল ও ভারতে নেওয়ার জন্য রেলপথে ট্রানজিট সুবিধা দেবে ভারত। এছাড়া সমঝোতা স্মারক মোতাবেক, ভারতের হলদিবাড়ী থেকে রেললাইনটি ভুটানের সীমান্তসংলগ্ন স্টেশন ডালগাঁও পর্যন্ত যাবে।

সমঝোতা স্মারকটি বাংলাদেশ ও ভারত কোনো পক্ষই প্রকাশ করেনি। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন ট্রানজিটের ট্যারিফ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং নিরাপত্তার দিক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দেখবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ভারতের প্রস্তাবে সম্প্রতি রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উঠে আসে ভারতের প্রস্তাবগুলোও। সভায় প্রাথমিকভাবে উঠে আসে-ভারতীয় ট্রেনের রুট হবে বাংলাদেশের দর্শনা-চিলাহাটী হয়ে ভারতের হলদিবাড়ী-জলপাইগুড়ি-ধুপগুড়ি-ফালাকাটা-ডানগাঁও-জয়পুর হয়ে ভুটান সীমান্ত লাগোয়া হাসিমারা স্টেশন পর্যন্ত। ভারত যে ডালগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চালাতে চাচ্ছে, সেখান থেকে ভুটান সীমান্ত ১০৮ কিলোমিটার দূরে। ডালগাঁওয়ের পর জয়পুর এবং হাসিমারা স্টেশন। হাসিমারা থেকে ভারত-ভুটানের স্থলবন্দর ফুয়েন্ট শিলংয়ের দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। ঢাকার রেল ভবনের মতে, হাসিমারা পর্যন্ত ট্রেন গেলে বাংলাদেশ ভারতের ওপর দিয়ে ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে পারবে।

রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী যুগান্তরকে বলেন, ‘দুদেশের মধ্যে দুটি মালবাহী ট্রেন চলাচল করছে। ট্রেন দুটি ভারতের। ওই ট্রেন দিয়েই বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোহনপুর হয়ে ভারতীয় ভূখণ্ড হয়ে বাংলাদেশি পণ্য নেপালে যাচ্ছে। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী নেপালে যেতে আরেকটি পথ পাচ্ছে বাংলাদেশ রেল। এখন দুটি পণ্যবাহী ট্রেন থেকে প্রতি অর্থবছরে প্রায় ২শ কোটি আয় করছি। বাংলাদেশ রেলপথ ব্যবহার করে আরও বেশি ট্রেন চললে-এ আয় আরও ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি বাড়বে। প্রস্তাব অনুযায়ী, গেদে-দর্শনা-ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর-পার্বতীপুর-চিলাহাটি-হলদিবাড়ী-ডালগাঁও পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে একটি ট্রেন চালানোর জন্য ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সরদার সাহাদাত আলী আরও বলেন, বর্তমানে দুদেশের মধ্যে যে কটি যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলছে-সেসব ট্রেন থেকে বাংলাদেশ রেল সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করছে। নতুন করে বাংলাদেশ হয়ে সরাসরি ভারতীয় ট্রেন চললে কিংবা আগের নিয়মে আরও ট্রেন বাড়লে বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন আসবে। ব্রিটিশ আমলে বর্তমানের ভারত-বাংলাদেশের ৮টি ইন্টারচেঞ্জ চালু ছিল। ইন্টারচেঞ্জগুলো ছিল দর্শনা-গেদে, বেনাপোল-পেট্রাপোল, রোহনপুর-সিংহাবাদ, বিরল-রাধিকাপুর, শাহবাজপুর-মহিষাসন, চিলাহাটী-হলদিবাড়ী, বুড়িমারী-চ্যাংড়াবান্ধা ও মোগলহাট-গিতালদহ। ইন্টারচেঞ্জগুলো দিয়ে অন্তত ১৫টি ট্রেন চলাচল করত। বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত পাঁচটি রুটে ট্রেন চলে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com