পযর্টন কেন্দ্র হবে সোনাদিয়া দ্বীপ

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপকে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য এই দ্বীপের ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) বরাদ্দ দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

বেজা সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের জন্য পর্যটনকেন্দ্র, আবাসিক এলাকা, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যালয়, হাসপাতাল ইত্যাদি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করে সরকারের কাছ থেকে এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সেখানে পর্যটন শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে সংস্থাটির। সোনাদিয়া দ্বীপকে ঘিরে বিশাল একটি সমুদ্রসৈকত আছে, ফলে কক্সবাজারের চেয়েও সেটি পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী গত বুধবার জমি বরাদ্দ পেয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে যাতে ভ্রমণের জন্য বিদেশে যেতে না হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা করব। পাশাপাশি বাংলাদেশে যাতে বিপুল বিদেশি পর্যটক আসেন, তাও নিশ্চিত করবে সোনাদিয়া, সাবরাং ও নাফ ট্যুরিজম পার্কের মতো পরিকল্পিত পর্যটনকেন্দ্রগুলো।’

কক্সবাজার জেলা তথ্য বাতায়ন অনুযায়ী, সোনাদিয়া দ্বীপটি কক্সবাজার শহর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাগরগর্ভে অবস্থিত। তিন দিকে সমুদ্রসৈকতঘেরা দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার। সোনাদিয়া মূলত সাগরলতায় ঢাকা বালিয়াড়ি, কেয়া-নিসিন্দার ঝোপ, ছোট-বড় খালবিশিষ্ট প্যারাবন। এটি কক্সবাজারের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। এই দ্বীপে ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে। সেখানকার সাগরের পানি কক্সবাজারের মতো ঘোলা নয়, গভীর এবং নীল। এই দ্বীপে প্রচুর লাল কাঁকড়া ও সামুদ্রিক পাখি রয়েছে।

সোনাদিয়া দ্বীপে এখনো বাণিজ্যিক পর্যটন শুরু হয়নি। সেখানে যাওয়ার পথ দুর্গম। তবে দ্বীপটি বিখ্যাত শুঁটকিপল্লির কারণে। সেখানে কিছু পরিবারও বসবাস করে। সামান্য কিছু জমি বাদে পুরো দ্বীপটি সরকারের খাসজমি।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাসজমি অধিশাখার বরাদ্দপত্রে বলা হয়েছে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় ২৬ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা দামের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার একর জমি মাত্র ১ হাজার ১ টাকা সালামিতে বেজাকে দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এই জমি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না—এই শর্ত না মানলে বন্দোবস্ত বাতিল হবে।

বেজা এই বিশাল জমি বরাদ্দ পেলেও পুরোটায় অবকাঠামো গড়ে তুলবে না। তারা মাত্র ২৫ শতাংশ জমিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো করে বাকি জমি সবুজ ও সংরক্ষিত রাখবে। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, দ্বীপটির পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য যাতে কোনোভাবেই নষ্ট না হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রেখে পর্যটনের পরিকল্পনা করা হবে।

সোনাদিয়ার আগে কক্সবাজারে নাফ নদীর মোহনায় নাফ ট্যুরিজম পার্ক ও সাবরাংয়ে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক নামের দুটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছে বেজা। এর মধ্যে নাফ ট্যুরিজম পার্কের জমি উন্নয়নে দরপত্র হয়েছে। সেখানে আগামী বছরের শেষ নাগাদ পর্যটক যেতে পারবেন এবং সাবরাংয়ে বিনিয়োগের জন্য আগামী বছর জমি প্রস্তুত হবে বলে আশা করছে বেজা।

উল্লেখ্য, সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। তবে সেই পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত বেশি দূর এগোয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: