এসব জায়গায় আগে মানুষের যাতায়াত থাকলেও শুধুমাত্র ভ্রমণের উদ্দেশ্যে মানুষের তেমন যাতায়াত ছিল না। কিন্তু কিছুদিন ধরে পর্যটকদের কাছে আগ্রহের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এসব স্থান।
এরকম কয়েকটি পর্যটক প্রিয় স্থান নিয়েই এই প্রতিবেদন:
দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের একটি কেন্দ্র হিসাবে বরাবরই মাওয়া ঘাট দিয়ে যাত্রীরা চলাফেরা করতেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অবকাঠামো পদ্মা সেতুর কারণে কিছুদিন ধরে মাওয়া ঘাট পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
সোহানা ইয়াসমিন দুই সপ্তাহ আগেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাওয়া ঘাট ঘুরে এসেছেন।
তিনি বলছিলেন,”পদ্মা ব্রিজটা দেখতে গিয়েছিলাম। সেই সঙ্গে নদীর পাড়ের হোটেলে বসে তাজা ইলিশ মাছ ভাজি, ভর্তা দিয়ে ভাত খেলাম। বাসার সবাই ঘুরে খুব মজা পেয়েছে। আর রাস্তাটাও এতো চমৎকার হয়েছে যে, যাতায়াত করে খুব আরাম।”
তিনি জানালেন, সেদিন বিকালে তার মতো কয়েকশো পর্যটককে দেখতে পেয়েছেন, যারা শুধুমাত্র বেড়ানোর জন্য পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে ওই স্পটে এসেছেন।
নিজস্ব পরিবহনের বাইরে ঢাকা থেকে বাসযোগে মাওয়ায় যাওয়া যায়।
বাংলাদেশের হাওরগুলো বরাবরই পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য অন্যতম প্রিয় স্থান। সেই তালিকায় সম্প্রতি জায়গা করে নিয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওর।
এর একটি বড় কারণ, হাওরের মাঝ দিয়ে চমৎকার একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সেই রাস্তার দুই পাশে হাওর। কিছুদূর পর পর বসার ব্যবস্থা রয়েছে।
ঢাকার একটি পত্রিকার সাংবাদিক জিয়াউর রহমান প্রায়ই পরিবার-পরিজন নিয়ে নিকলি হাওরে বেড়াতে যান।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, নিকলি হাওর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে ঢাকা থেকে একদিনে গিয়ে একদিনেই ফিরে আসা যায়। টাঙ্গুয়ার হাওরও আমি পছন্দ করি, কিন্তু সেটা তো একদিনে ভ্রমণ সম্ভব না।
”আরেকটা ব্যাপার হলো, নিকলি হাওরে সাবমার্জিবল রোড আছে। অর্থাৎ বর্ষার সময় রাস্তাটা অনেক সময় পানির নীচে থাকে। তখন রাস্তাটা ধরে অনেকদূর চলে যাওয়া যায়। কাছেই রাতারগুলের মতো একটা জলাবন আছে। ফলে সেখানে গেলে সব ধরনের আমেজ পাওয়া যায়।” তিনি বলছিলেন।
নিকলি হাওরে নৌকা নিতে ঘোরার সুযোগ আছে।
এক পলকে মনে হবে, লাল শাপলার কোনো চাদর। পুরো বিল জুড়ে বিছানো শাপলা। তাই গ্রামটির নামই হয়ে গেছে ‘শাপলা বিল’। সবাই এই নামে ডাকে উত্তর সাতলা গ্রামটিকে।
এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে বরিশাল জেলার সরকারি ওয়েবসাইটে।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামে প্রাকৃতিকভাবে শাপলার এই বিলটি তৈরি হয়েছে। সাধারণত সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফোটে।
তখন সেই সৌন্দর্য দেখতে আশেপাশের অনেক জেলা থেকে মানুষ এসে ভিড় করেন।
বরিশাল জেলার ওয়েবসাইটে বর্ণনা করা হয়েছে, ঠিক কত বছর ধরে বিলে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে সঠিকভাবে সে তথ্য কেউ দিতে না পারলেও স্থানীয় ষাটোর্ধ কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, তাদের জন্মের পর থেকেই এ বিলে এভাবে শাপলা ফুটতে দেখছেন তারা। বছরের অধিকাংশ সময় জলমগ্ন এ বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙয়ের তিন ধরনের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলার আধিক্য বেশি।
৪. মৈনট ঘাট
ঢাকার কাছেই দোহার উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরের এই জায়গাটি পরিচিত পেয়েছে ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসাবে।
কারণ নদী তীরে বালুকাবেলা আর পদ্মা নদীর ঢেউ মিলে অনেকটা সমুদ্র তীরের আদল আসে।
পর্যটকদের আনাগোনার কারণে এখানে নদী তীরে সমুদ্র সৈকতের মতোই ছাতাসহ বসার ব্যবস্থাও তৈরি হয়েছে। আশেপাশে রয়েছে অনেক খাবারের দোকান।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শাহনাজ চৌধুরী কিছুদিন আগে মৈনট ঘাট ঘুরে এসেছেন। তিনি বলছিলেন, ”ঢাকার কাছে মাত্র দুই ঘণ্টায় যাওয়া যায়। নদীর তীরে বিকালে বসে থাকলে খুব ভালো লাগে। বাচ্চারা যেন কক্সবাজারের একটা স্বাদ পেয়েছে।”
ঢাকা থেকে বাস বা সিএনজি যোগে মৈনট ঘাট যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে আরামদায়ক লঞ্চে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সুযোগ থাকায় অনেকের কাছে ভ্রমণের আরেকটি পছন্দের জায়গা হিসাবে গড়ে উঠেছে চাঁদপুর।
ইলিশ মাছের মোকাম হিসাবে বিখ্যাত চাঁদপুরে যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে তাজা মেঘনা নদীর ইলিশ খাওয়া ও কিনে আনা।
সেই সঙ্গে মেঘনা নদীর মাঝে গড়ে ওঠা একটি চর পিকনিক পার্টির কাছে আরেকটি মিনি কক্সবাজার হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকে লঞ্চ নিয়ে এই চরে পিকনিক করতে যান।