শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

নেপালের এভারেস্টঘেরা অনিন্দ্যসুন্দর গ্রাম থেকে ঘুরে আসুন

  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১
দা বাকেট লিস্ট মুভিটা দেখেছিলেন? মৃত্যুপথযাত্রী দুই বন্ধুর যখন শেষ ইচ্ছাগুলোর একটি ছিল এভারেস্টের চূড়ায় যাবার। নানা জটিলতায় যদিও সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি। তবে আপনার যদি ইচ্ছে থাকে তবে এভারেস্ট ঘুরে আসাটা কিছুটা কষ্ট হলেও অসম্ভব না। পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল থেকে বেশ সহজেই এভারেস্ট ভ্রমণের সুযোগ আছে। এবং আপনি প্রশিক্ষিত পর্বতারোহী না হয়ে কেবল যদি শখের পর্যটক হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রেও ঘুরে আসা সম্ভব।
কিছুক্ষেত্রে নেপালে সরকারীভাবেই পর্যটকদের এভারেস্ট ঘুরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়। মাউন্ট এভারেস্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার নতুন কিছুই নেই। ৮৮৪৮ মিটারের এই পর্বতের উপর দাঁড়িয়ে সত্যিকার অর্থেই আপনি বলতে পারবেন ‘পায়ের নিচে পুরো পৃথিবী’। তবে এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার জন্য আপনাকে বেশ অনেকটা দিনের প্রশিক্ষণ দরকার। তবে পর্যটক হিসেবে আপনি এভারেস্টের আশেপাশের অনেক অঞ্চলই ঘুরতে পারেন।

কেন যাবেন এভারেস্টে?

মাউন্ট এভারেস্টের নৈসর্গিক সৌন্দর্য। ছবি : ব্রিটানিকা
এভারেস্টের নেপাল অংশের দিকে আরোহণ কেবলই পর্বতে আরোহণ কিংবা ট্রেকিং ভাবলে ভুল করবেন। এই ভ্রমণ আপনাকে চেনাবে পৃথিবীর মাঝেও লুকিয়ে থাকা অজানা এক সৌন্দর্যকে। নেপালের পূর্বাঞ্চলের প্রদেশে অবস্থিত এই অঞ্চলে গ্লেসিয়ার, বরফ পড়া, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এবং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা জনপদ। সবকিছু মিলে একেবারেই অন্য এক অনুভূতি সঞ্চার হবে। সময় আর শারীরিক সামর্থ্য থাকলে ঘুরে আসতে পারেন এভারেস্টের বেইসক্যাম্পে।
চাইলে কাঠমুন্ডু থেকেই বিমানে চড়া যায়, তবে ঝিরি থেকে ট্রেকিং শুরু করলে আপনি হয়তো ঠিক সেই পথেই হাঁটবেন, যে পথে একদিন হেটেছিলেন শেরপা তেনজিং নোরগে আর এডমন্ড হিলারি। এভারেস্টের বেসক্যাম্পকে বলা হয় ‘দ্য রুফ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’। এছাড়া ঘুরে আসতে পারেন ১৯৭৯ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পাওয়া সাগরমাতা ন্যাশনাল পার্কে। এই অঞ্চলে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিকূলে টিকে থাকা জীববৈচিত্র্যের দেখা আপনি পাবেন। যেখানে শুধু ঠান্ডার সাথেই না, বরং টিকে থাকার জন্য লড়তে হয় উচ্চতার সাথেও। এই সাগরমাতা ন্যাশনাল পার্কেই আছে পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতম তিন পর্বত, এভারেস্ট, লোথস এবং চো অয়ো।

কি দেখবেন? নামচে বাজার : প্রায় ৩,৫০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই বাজারে ট্রেকিং-এর যাবতীয় জিনিস আপনি কিনতে পারবেন। একে বলা যেতে পারে হিমালয় আরোহণের প্রথম বিন্দু। শেরপা সমাজের জীবনধারা নিয়ে জানতে চাইলে এই বাজারটাই অনেকখানি ধারণা দিবে আপনাকে।

নামচে বাজার, নেপাল। ছবি : স্টিভ রবসন
ঘরে বানানো ইয়ক পনির আর মাখনের জন্য বিখ্যাত এই নামচে বাজার একটি ধনুকের আকারের ঢালের মাঝে অবস্থিত। এখান থেকে সহজেই এভারেস্টের চূড়া দেখতে পারবেন আপনি। যারাই এভারেস্টে উঠতে চান তাদেরকে একবার এই মঠে এসে থামতে হয়। এখানেই তাদের যাত্রার সফলতা কামনা করে আশীর্বাদ করা হয়। খুম্বু অঞ্চলের প্রধান বৌদ্ধ মঠ এটিই। প্রতি অক্টোবরে টেংবচ মঠ তজেকে মানি রিমদু উৎসবের আয়োজন করা হয়।

টেংবচ মঠ :

এটি বৌদ্ধ ধর্মের একটি উৎসব যেখানে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা একত্রে জড়ো হন, গান এবং ধর্মীয় নৃত্য দ্বারা কিংবদন্তীদের জীবনকে স্মরণ করে থাকেন। হিমালয়ের শুভ্রতায় রঙ্গিন এই উৎসব সত্যিই দেখার মত। পাহাড় পর্বতের দেশ নেপাল। উপত্যকার অভাব এখানে নেই। তবে নেপালের সবচেয়ে সুন্দরতম উপত্যকার নাম করতে গেলে আপনাকে অবশ্যই গোকয়ো উপত্যকার নাম আনতেই হবে। ছবির মত সুন্দর এই উপত্যকায় যেতে হলে অবশ্য হিমালয় বেইস ক্যাম্প থেকে আরো পাঁচ দিনের ট্রেকিং যুক্ত করতে হবে। গোকয়ো উপত্যকা :

নেপালের অন্যতম সুন্দর উপত্যকা, গোকয়ো উপত্যকা। ছবি : লাক্সারী হলিডেজ নেপাল
গোকয়ো উপত্যকায় যাবার পথেই আপনাকে পার হতে হবে দুধ কোষী নদী। এখানে বরফে ঢাকা বন্য রডোডেনড্রন আর ওক বন দেখে আপনাকে মুগ্ধ হতেই হবে। গোকয়ো উপত্যকার কাছে গেলে আপনি এক অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পাবেন। আট হাজার মিটারের অধিক উচ্চতার পৃথিবীর তিনটি পর্বতের সবকটিই আপনার চোখে আসবে একসাথে।
পাশাপাশি এভারেস্ট আর চো অয়ো আর মাকালু পর্যন্ত বিস্তৃত লোথস। দুটো রুট বা পাস নিয়ে আপনি গোকয়ো পর্যন্ত যেতে পারেন। চো লা পাসটাই সাধারণত বেশি ব্যবহার করেন পর্যটকেরা। এটি খুম্বু উপত্যকা হয়ে যেতে হয়। অন্য পথটি রেনজো লা পাস, এক্ষেত্রে থাম আর নাঙ্গা লা পাস হয়ে যেতে হয়।

সাগরমাতা ন্যাশনাল পার্ক :

পৃথিবীর দূর্গম পরিবেশে অবস্থিত সাগরমাতা ন্যাশনাল পার্ক। ছবি : ট্রিপেএডভাইজর নেপাল
মাউন্ট এভারেস্টের ঘরবাড়ি যাকে বলা যায়, এটাই সেই সাগরমাতা ন্যাশনাল পার্ক। মজার কথা হলো, নেপালের ভাষায় মাউন্ট এভারেস্টের নামই কিন্তু সাগরমাতা। ১৯৭৬ সালে এভারেস্ট এবং ৬,০০০ মিটারের উঁচু আরোও কিছু পর্বত নিয়ে এই এলাকার নকশা করা হয়। এই পার্কটি পৃথিবীর সবচেয়ে দূর্গম এক পরিবেশে গড়ে উঠেছে। ৩,০০০ মিটার উঁচুতে স্থাপিত এই পার্কের বেশিরভাগই গ্লেসিয়ার কিংবা পাথরে গড়া। ঘোরাল, নেকড়ে, হিমালয়ান বাল্ক ভাল্লুক, মাস্ক হরিণ ছাড়াও এই পার্কে আছে প্রায় ১১৮ প্রজাতির পাখির আবাস।
সাগরমাতা ন্যাশনাল পার্ক যাবার সবচেয়ে উত্তম সময় অক্টোবর বা নভেম্বরের হেমন্তে। অথবা মার্চ থেকে মে মাসের বসন্ত আর গ্রীষ্মে। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ৪,০০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এক ভূমিতে পাইন, ওক আর রঙ বেরঙ এর রডোড্রেন্ড্রন দেখার অনুভূতি সত্যিই স্বর্গীয়। এভারেস্ট কিংবা হিমালয় বলতেই আমাদের অনেকেরই ধারণা কেবল শুভ্রতার চাদরে ঢাকা পর্বত পর্যন্ত। কিন্তু বিধাতার এই অপূর্ব সৃষ্টির মাঝেও আমাদের না দেখা এক অনিন্দ্য সুন্দর জগত লুকানো আছে। সেই রূপ সুধা উপভোগ করতে প্রতিবছর হাজারও মানুষ ছুটে আসছেন এভারেস্টের কাছে। সেপথে আপনিও হাঁটতে পারেন। দেখতে পারেন পৃথিবীর এক বিরল সৌন্দর্য।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com