জন্মহার কমে যাওয়ার প্রবণতায় বিপর্যস্ত চীন। গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার দেশটিতে নিম্ন জন্মহার ও সেই জেরে শিশুদের সংখ্যা কমতে থাকায় একের পর এক কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চীনে।
এ তথ্য চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ২০২২ সালে চীনজুড়ে যেখানে ২ লাখ ৮৯ হাজার ২০০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল, পরের বছর ২০২৩ সালে তা হ্রাস পেয়ে নেমে এসেছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০টিতে। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে দেশটিতে ১৪ হাজার ৮০০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়া শিশুদের সংখ্যাও টানা তৃতীয় বছরের জন্য কমেছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, গত বছর এই সংখ্যা ৫৩ লাখ ৫০ হাজার কমে ৪ কোটি ৯০ লাখে নেমে এসেছে, যা প্রায় ১১.৫৫ শতাংশের পতন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাও ৫,৬৪৫টি কমে মোট ১,৪৩,৫০০-তে নেমে এসেছে, যা ৩.৮ শতাংশ কমার ইঙ্গিত দেয়। এই পতন চীনের বৃহত্তর জনমিতিক পরিবর্তনকে তুলে ধরে – যেখানে জন্মহার এবং মোট জনসংখ্যা ক্রমাগত কমছে। এতে দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা ইতোমধ্যেই শ্লথ হয়ে আসছে।
গত বছর চীনের জনসংখ্যা টানা দ্বিতীয়বারের মতো কমে ১.৪ বিলিয়নে নেমে এসেছে, যা দুই মিলিয়নেরও বেশি হ্রাস। ২০২৩ সালে চীনে জন্মের সংখ্যা ছিল মাত্র ৯ মিলিয়ন, যা ১৯৪৯ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন রেকর্ড। এদিকে বয়স্ক শিক্ষার্থীরা ফাঁকা কিন্ডারগার্টেনের স্থান পূরণ করছে।
চায়না পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে চীনের উর্বরতার হার কমে ১.০৯-এ নেমে আসে। জনমিতিবিদদের ধারণা, এই হার গত বছর ১.০ এর নিচে চলে গিয়েছে, যদিও এ বিষয়ে কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। উর্বরতার হার বলতে প্রতিটি নারীর গড়ে কতটি সন্তান রয়েছে, তা বোঝায়। একটি দেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখার জন্য ২.১ শতাংশ হার প্রয়োজন। চীনের অন্যতম সমৃদ্ধ শহর সাংহাইয়ে ২০২৩ সালে এই হার নেমে দাঁড়িয়েছে ০.৬-এ।
গুয়াংডং প্রদেশের স্বাধীন জনমিতিবিদ হে ইয়াফু বলেছেন, এদিকে প্রবীণদের সেবার বোঝাও বাড়ছে এবং অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই তা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।” তিনি উল্লেখ করেন যে কিন্ডারগার্টেন পরিচালকদের এখন নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য কৌশলগত পরিবর্তন আনা দরকার। যেমন তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য প্রারম্ভিক শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং সেবা-শিক্ষা সমন্বিত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, চীনের ৩০ শতাংশেরও বেশি পরিবারে শিশুদের জন্য যত্নের প্রয়োজন হলেও মাত্র ৫.৫ শতাংশ শিশু নার্সারি বা প্রাক-কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক কিন্ডারগার্টেন এখন প্রবীণদের সেবাকেন্দ্রে রূপান্তরিত হচ্ছে এবং অনেক স্টাফ সদস্য প্রবীণদের সেবায় চলে গেছেন।
চীনা পরিবারগুলো এখন সন্তান জন্মদানে ক্রমশই নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এতে প্রভাব ফেলেছে উচ্চ বাসস্থান ও সন্তান পালনের খরচ, ভালো স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের কঠিন প্রতিযোগিতা এবং কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অনিশ্চিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
সম্প্রতি নিংবো শহরের সন্তান জন্মদানে সক্ষম নারীদের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক অবিবাহিত নারীরা মাত্র এক সন্তানের জন্য আগ্রহী। তিন ভাগের এক ভাগ কোনো সন্তান চায় না, ১৫ শতাংশ দুই সন্তান এবং ১ শতাংশেরও কম বেশি সন্তানের কথা চিন্তা করছে। জরিপে আরও দেখা গেছে, বিবাহকে ৫৬ শতাংশ নারী ঐচ্ছিক বলে মনে করেন এবং ৬ শতাংশের কম নারী বিবাহকে একেবারেই প্রয়োজনীয় মনে করেন না।