শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:১৪ পূর্বাহ্ন
Uncategorized

নিঝুম দ্বীপের চিত্রা হরিণ

  • আপডেট সময় বুধবার, ৩০ জুন, ২০২১

নিঝুম দ্বীপের প্রায় প্রত্যেক মানুষেরই ধারণা, এ দ্বীপে হাজার হাজার হরিণের বসবাস। দ্বীপবাসীর গর্ব এই চিত্রা হরিণ। সাধারণ পর্যটকেরাও এই হরিণে বেশ আনন্দ পায়। ১৯৯৬ সালে এক গবেষণায় হরিণের সংখ্যার ওপর একটা ধারণা পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, এ দ্বীপে প্রায় ২২ হাজার হরিণের বসবাস। এরপর বেশ কয়েকটি প্রকাশনায়ও এ রকম তথ্য ব্যবহার করা হয়। বন অধিদপ্তর ১৯৭৩-১৯৭৮ সাল পর্যন্ত নিঝুম দ্বীপে মাত্র ১৪টি হরিণ ছাড়ে। ২০০১ সালে এ দ্বীপকে সরকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। নিঝুম দ্বীপের আয়তন কাগজে-কলমে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর বলা হলেও বন টিকে আছে প্রায় ৪ হাজার হেক্টরে। এর বনায়নও করে বন অধিদপ্তর। মূলত চার জাতের গাছ এখানে লাগানো হয়। এগুলো হলো কেওড়া, গেওয়া, বাইন আর কাকড়া। কেওড়া, গেওয়া আর দুর্বা ঘাস হরিণের প্রধান খাবার।

নিঝুম দ্বীপের হরিণের সংখ্যা আসলে কত, এটি আমার গবেষণার একটি অংশ ছিল। পুরো বনকে ১১টি ভাগে ভাগ করে আমি গণনাকাজ শুরু করি। বনের প্রায় সব জায়গায় হরিণের উপস্থিতি পাই। সবচেয়ে বেশি হরিণের দেখা পাই ডুবুরি খাল এলাকায়। একসঙ্গে প্রায় ১৪১৬ হরিণের একটি দল। এ বনের ভেতর ছোট-বড় প্রায় ১৪টি খাল আছে। হরিণের দল মূলত সকাল আর শেষ বিকেলেই খাবার খায়। দুপুরের সময় এরা বনের ভেতর বিশ্রাম নেয়।

গবেষণায় প্রায় পাঁচ হাজার হরিণের তথ্য পাওয়া গেল। সাধারণ মানুষের কাছে এ সংখ্যা খুবই কম! আসলে এটিই ছিল হরিণের সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর বেশি সংখ্যায় হরিণ হলে এ বন কখনোই হরিণের জন্য অনুকূল নয়। আমাদের সুন্দরবনে প্রায় ৮০ হাজার চিত্রা হরিণ আছে, যা গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৭৭টি। আর নিঝুম দ্বীপের হরিণের এই সংখ্যা বিবেচনা করলে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৪৪টি হরিণের বসবাস। যেকোনো একটি বনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে চিত্রা হরিণ ৪০-৬০টি থাকলে ওই বনে ভালো সংখ্যায় হরিণ টিকে আছে বলে ধরা হয়।

সাধারণ মানুষের ধারণা, হরিণের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। কুকুর বনের হরিণ ধরে ধরে খাচ্ছে। কী পরিমাণ হরিণ মারা পড়ছে এবং কেন মারা যাচ্ছে, তাও কিছুটা গবেষণায় উঠে আসে। বর্ষায় কিছু হরিণের খুরারোগ হয়। সে সময় হরিণগুলোর হাঁটতে কষ্ট হয়। এ রকম খুবই সামান্য কিছু হরিণ কুকুরের হাতে মারা পড়ে। প্রায় ২৬৮টি মরা হরিণের হাড় ও মাথা নিয়ে বিশ্লেষণে দেখেছি, স্ত্রী হরিণ বেশি মারা পড়ে। এ ছাড়া দ্বীপে হরিণের জন্য সুপেয় মিঠাপানির অভাব রয়েছে। বড় জোয়ার হলেও কিছু হরিণ মারা পড়ে।

নিঝুম দ্বীপে হরিণ আছে, বন আছে, মানুষ আছে। এ বনের ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনাও আছে। সুষ্ঠু বাস্তবায়ন আর সব শ্রেণির মানুষের সদিচ্ছা হরিণ রক্ষায় বড় অবদান রাখতে পারে। নিঝুম দ্বীপের মতো সুন্দর দ্বীপে প্রিয় চিত্রা হরিণগুলো খুব ভালোভাবে টিকে থাক—এ কামনা সব সময়ের।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com