শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫১ পূর্বাহ্ন

নিকোসিয়া বিমানবন্দর

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪

নিকোসিয়া বিমানবন্দর, যা একসময় সাইপ্রাসের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত ছিল, একটি ঐতিহাসিক স্থান। বর্তমানে এটি আর বাণিজ্যিক উড়ান পরিচালনা করে না। সাইপ্রাসের ১৯৭৪ সালের সংঘাতের সময় এটি বন্ধ হয়ে যায় এবং বর্তমানে এটি জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি স্থান।

নিকোসিয়া বিমানবন্দরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

নিকোসিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ১৯৩০-এর দশকে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ব্রিটিশ রাজত্বের অধীনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর হয়ে ওঠে। তখন থেকে এটি সাইপ্রাসের সবচেয়ে ব্যস্ত বিমানবন্দর ছিল এবং দেশটির প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী এই বিমানবন্দরটি সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিল।

১৯৬০ সালে সাইপ্রাস স্বাধীনতা লাভ করার পর, নিকোসিয়া বিমানবন্দরটি দেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নত করা হয়। এটি ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দেশের প্রধান বাণিজ্যিক ও পর্যটন হাব ছিল।

১৯৭৪ সালের সংঘাত ও বিমানবন্দরের বন্ধ হয়ে যাওয়া

১৯৭৪ সালে সাইপ্রাসে গ্রিক এবং তুর্কি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ ও সংঘাত শুরু হলে তুরস্ক উত্তর সাইপ্রাসে সামরিক অভিযান চালায়। এর ফলে সাইপ্রাস দ্বীপটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়, এবং নিকোসিয়া বিমানবন্দরও এই বিরোধের কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে এটি আর কোনো বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করেনি।

বিমানবন্দরটি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এটি বর্তমানে জাতিসংঘের একটি বাফার জোনের অংশ। বিমানবন্দরটির টার্মিনাল এবং রানওয়েগুলো আজও রয়েল থেকে গেলেও এগুলো দীর্ঘদিনের অযত্নে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় আছে।

বিমানবন্দরের বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে নিকোসিয়া বিমানবন্দরটি ব্যবহারহীন অবস্থায় পড়ে আছে। এর টার্মিনাল ভবন এবং রানওয়ে গুলো অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু স্থাপনা এখনও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত, কিন্তু সাধারণ জনগণ বা পর্যটকদের জন্য এটি আর উন্মুক্ত নয়।

নিকোসিয়া বিমানবন্দর এখন একটি পরিত্যক্ত ভবনের মতো অবস্থায় পড়ে রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী এবং বিভিন্ন গবেষণামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

নিকোসিয়া বিমানবন্দর পুনরায় খোলার বিষয়ে কিছু আলোচনা হয়েছিল, কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। সাইপ্রাসের গ্রিক এবং তুর্কি সম্প্রদায়ের মধ্যে বর্তমান বিরোধ নিরসন না হলে বিমানবন্দরটি পুনরায় খোলা সম্ভব নয়।

কিছু পরিকল্পনায় নিকোসিয়া বিমানবন্দরকে একটি ঐতিহাসিক এবং পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করার প্রস্তাব রয়েছে, যেখানে পর্যটকরা সাইপ্রাসের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে এবং এই বিমানবন্দরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন। তবে এই প্রস্তাবও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে, কারণ এটি এখনও বাফার জোনের অংশ।

সাইপ্রাসে নতুন বিমানবন্দর ও পরিবর্তন

নিকোসিয়া বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর লার্নাকা এবং পাইফোসে নতুন দুটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে লার্নাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং পাইফোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাইপ্রাসের প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং তারা পর্যটন শিল্পের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।

নিকোসিয়া বিমানবন্দরের পরিত্যক্ত অবস্থা সত্ত্বেও, এটি এখনও সাইপ্রাসের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এটি ভবিষ্যতে সাইপ্রাসের ঐক্যের প্রতীক এবং পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।

উপসংহার

নিকোসিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাইপ্রাসের একটি ঐতিহাসিক স্থান, যা দেশের রাজনৈতিক সংকট এবং ইতিহাসের সাক্ষী। বিমানবন্দরটি বন্ধ হয়ে গেলেও এটি আজও একটি স্মৃতিচিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে। এর ভবিষ্যৎ পুনর্গঠন বা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রূপান্তর সাইপ্রাসের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর নির্ভরশীল।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com