Namibia, Walvis Bay, Namib-Naukluft National Park, Sandwich Harbour, happy woman in dune landscape
রিপাবলিক অফ নামিবিয়া আফ্রিকার দক্ষিণভাগে অবস্থিত 21 শে মার্চ 1990 সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্বাধীনতা পাওয়া একটি দেশ। শুনলে অবাক হবেন নামিবিয়া জিম্বাবুয়ের সাথে কোন সীমানা ভাগ করেনি। অথচ দুটি দেশের মধ্যে অন্তত মাত্র 200 মিটার। দুই দেশের মধ্যে সরু একটি নদী জাম্বেজি রিভার বয়ে গেছে। যা দেশ দুটোকে আলাদা করেছে। এই যে আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চল রয়েছে সেখানকার শুষ্কতম অঞ্চল নামিবিয়া । অর্থাৎ সেখানে জল নেই বললেই চলে। তাই 8 লক্ষ 25 হাজার 615 বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটিতে কি কি রয়েছে আর কেমন কেমন মজাদার তথ্য রয়েছে তা জেনে নেওয়া যাক।
খোয়ে খোয়ে বাসায় নামিক কথার অর্থ ভাস্ট প্লেস মানে বিশাল জায়গা। নামিক শব্দটা জড়িত আফ্রিকার দক্ষিণ ভাগের 81 হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তন জুড়ে থাকা উপকূলীয় মরুভূমির নামে। নামিক মরুভূমি অ্যাঙ্গেলো এবং নামিবিয়া হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে । তাই নামিব মরুভূমির প্রভাব নামিবিয়াতে থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই তার ফলস্বরূপ দেশের নাম হয়েছে নামিবিয়া। নামিব মরুভূমি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মরুভূমির মধ্যে একটা। স্বাধীনতার আগে দেশটির নাম ছিল জার্মান সাউথ ওয়েস্ট আফ্রিকা। এখানে এক সময় জার্মান দের শাসন ছিল। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকার সেনারা সেখানে জয় লাভ করে। তখন নাম হয়ে যায় সাউথ ওয়েস্ট আফ্রিকা। পরে 1990 সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে স্বাধীনতা পেয়ে এই দেশটির আধিকারিক ভাবে নাম হয় রিপাবলিক অফ নামিবিয়া। 2017 সাল অনুযায়ী জনসংখ্যা 26 লক্ষ 6 হাজার 971 জন। প্রতি বর্গ কিলোমিটার অনুযায়ী কম জনঘনত্ব বিশিষ্ট একটি দেশ নামিবিয়া।
আবাম্বো বা ওবাম্বোর আদিবাসী মানুষেরা চৌদ্দশ দশকের দিকে জাম্বেজি নদীর ওপরের দিকে উপত্যকা অঞ্চলগুলিতে এসে বসবাস করতে শুরু করে পরে আফ্রিকা দক্ষিণভাগে বসতি গড়ে ওঠে। বর্তমানে আদিবাসী গোষ্ঠীর নামিবিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগত গোষ্ঠী। যাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার 49 শতাংশ। নামিবিয়া র আধিকারিক ভাষা ইংলিশ। দেশটাতে বেশ কয়েকটি ভাষা জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে যেমন জার্মান, ওজি হেরেও, আফ্রিকান এবং অসিবাম্বো। তবে অসিবাম্বো ভাষাতে দেশটির প্রায় 48 শতাংশ মানুষ কথা বলতে পারে অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ এই ভাষাতেই কথা বলতে পারে।
বর্তমানে নামিবিয়ার রাজধানী উইন্ডহক্ ।ভৌগলিক দিক দিয়ে নামিবিয়া একেবারে মধ্যস্থলে অবস্থিত উইন্ডহক্ । এটি হলো দেশের সবচেয়ে বড় এবং ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এর গুরুত্ব জার্মান সাম্রাজ্যের সময় থেকেই ছিল। এখন উইন্ডহক্ রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক তথা দেশের শাসন কেন্দ্র।
নামিবিয়াতে প্রচলিত মুদ্রা নামিবিয়ান ডলার। তবে দেশের স্বাধীনতার আগে সাউথ আফ্রিকা রেন্ডের যেমন প্রভাব ছিল তেমনি স্বাধীনতার পরেও এর হয়ে গেছে। পৃথিবীতে খুব কম দেশ আছে যারা প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্থে পদক্ষেপ নিয়েছে সেই অনুযায়ী এই দেশের সংবিধানের ধারা অনুসারে নামিবিয়াতে বনজ সম্পদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্থে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। বনজঙ্গলের নানা রকমের জন্তু-জানোয়ার যেমন আফ্রিকার বনের বড়ো বড়ো আয়তনের হাতি নামিবিয়ার জেব্রা এই দেশের পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
নামিবিয়াকে চিতাদের দেশও বলা যেতে পারে। দেশে প্রায় আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার পর্যন্ত চিতাবাঘের প্রমাণ পাওয়া গেছে। নামিবিয়ার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে ফিস রিভার ক্যানিয়ন দেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক পর্যটক আকর্ষণ করে। এই ক্যানিয়ন আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ক্যানিয়ন। ফিস রিভার এর তৈরি এই ক্যানিয়ন 160 কিলোমিটার দীর্ঘ 27 কিলোমিটার চওড়া এবং 550 মিটার গভীর। এই নদী নামিবিয়ার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া দীর্ঘতম নদী। এই দেশের সবচেয়ে উঁচু পর্বত ব্র্যান্ডবর্গ মাউন্টেন। 2573 মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এই পর্বত পর্বতারোহীদের কাছে বিশেষ পরিচিত। দীর্ঘ মরুভূমির কারণে নামিবিয়াতে একটি ভয়ঙ্কর জায়গাও রয়েছে। সেখানে মানুষের দেহাংশ, বড় বড় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এই জায়গাতে তিমি মাছের সাথে সাথে ঘন কুয়াশার সাথে আটকে যাওয়া জাহাজের ভগ্নাবশেষ প্রায়ই দেখা গেছে। তাই সেখানকার নাবিকদের কাছে এবং স্থানীয় আদিবাসীদের কাছে এই জায়গাটি ভয়ঙ্কর জায়গা হিসেবে পরিচিত। সাব সাহারা অঞ্চলের অন্যান্য জায়গাগুলি তুলনায় কম বৃষ্টিপাত হওয়া এই দেশের উত্তরে অ্যাঙ্গোলা, পূর্বে বতসোআনা, দক্ষিণের সাউথ আফ্রিকা এবং পশ্চিমে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর। ইউরেনিয়াম খনি এবং নামিদামি খনি গুলোর জন্য বিখ্যাত এই দেশ নামিবিয়া।
Like this:
Like Loading...