বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৮ অপরাহ্ন

নতুন ‘হটস্পট’ মেঘালয়

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ স্থলসীমান্ত থাকলেও তার বেশিরভাগ অংশেই কিন্তু বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় নেই বললেই চলে। যেটুকু আছে, তার প্রায় সবটাই পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে—আর সামান্য কিছুটা আসাম ও ত্রিপুরা সীমান্তে।

কিন্তু এই ‘ঘাটতি’ পোষানোর জন্য এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছোট একটি রাজ্য—মেঘালয়।

এ সপ্তাহে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী প্রেস্টোন টিনসংয়ের সঙ্গে দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানের বৈঠকেই এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হয়েছে। মেঘালয় যে তার আন্তর্জাতিক সীমান্তকে অর্থনৈতিক দিক থেকে ‘চাঙা’ করে তুলতে চায়, সে ব্যাপারে রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক আগ্রহের কথা জানিয়েছেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী টিনসং।

কিন্তু সীমান্তে ঠিক কী ধরনের কর্মকাণ্ড দেখতে চায় মেঘালয়?

প্রথমত, মেঘালয় সরকার চায় তাদের রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্তে অনেক ‘বর্ডার হাট’ গড়ে উঠুক—যেখানে সীমান্তের দুপাড়ের মানুষই তাদের নিজ নিজ মুদ্রায় নানা ধরনের জিনিসপত্র বেচাকেনা করতে পারবে। মেঘালয় ও বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় মূলত গারো, খাসিয়া প্রভৃতি জনজাতির বাস। তাদের মধ্যে এ ধরনের বর্ডার হাট খুবই জনপ্রিয় হবে বলে উভয় সরকারই মনে করছে।

দ্বিতীয়ত, সীমান্তে আরও ‘ল্যান্ড ট্যারিফ স্টেশন’ বসানোর ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে মেঘালয়। তারা মনে করছে, এতে স্থলপথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য উৎসাহ পাবে এবং বাণিজ্যের পরিমাণও বাড়বে। মেঘালয়ের ডাউকি ও বাংলাদেশের তামাবিলের মধ্যে যে সীমান্ত, সেখানে অবশ্য ইতোমধ্যে একটি ল্যান্ড ট্যারিফ স্টেশন আছে—এবং হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান তার মেঘালয় সফরের সময় সেটির কাজকর্ম সরেজমিন দেখেও গেছেন।

তৃতীয়ত, মেঘালয় চায় তাদের সীমান্ত দিয়ে আরও বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশি পর্যটক ভারতে বেড়াতে আসুক। ডাউকি পোস্ট অবশ্য এরমধ্যেই বাংলাদেশি পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়, কিন্তু এই পথ দিয়ে এখনকার তুলনায় অন্তত দ্বিগুণ পর্যটক আসতে পারেন বলে মেঘালয় মনে করছে।

সম্প্রতি যেমন পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের বাংলাবান্ধা বাংলাদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে (মূলত সিকিম-দার্জিলিং বা ভুটানমুখী ট্যুরিস্টদের জন্য), কোভিডকালীন বিধিনিষেধ উঠে গেলে ডাউকিকেও সে জায়গায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে মেঘালয়। মেঘালয়েও মৌসিনরাম, চেরাপুঞ্জি, শিলং কিংবা ‘ভারতের পরিচ্ছন্নতম নদী’ উমগট ও ‘পরিচ্ছন্নতম গ্রামে’র স্বীকৃতি পাওয়া মওলিননংয়ের মতো অসংখ্য পর্যটনস্থল আছে—যেগুলো প্রতিবেশী দেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারে।

আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের খুব কাছেই ডাউকি ব্রিজ

আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের খুব কাছেই ডাউকি ব্রিজ

উপ-মুখ্যমন্ত্রী টিনসং এদিন টেলিফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার লম্বা ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার আছে। কিন্তু এই সীমান্তের বেশিরভাগ অংশই একেবারে ‘স্লিপি’ বা ঘুমন্ত বলা চলে—আমাদের সরকার চায় সেটাকে একটা ভাইব্র্যান্ট হটস্পট করে তুলতে।’

দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে জারি করা এক প্রেস বিবৃতিতেও জানানো হয়, রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানও উপ-মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও প্রসারিত করার ওপর জোর দিয়েছেন। হাইকমিশনার বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন আন্তর্জাতিক বিশ্বেরও প্রশংসা কুড়াচ্ছে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দুই দেশের সরকারের যৌথ উদ্যোগে যেসব স্থাপনা গড়ে উঠছে, সেগুলো পরিদর্শন করতেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত চার দিনের সরকারি সফরে এ সপ্তাহে আসাম ও মেঘালয়ে গিয়েছিলেন।

মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) উপ-মুখ্যমন্ত্রী প্রেস্টোন টিনসংয়ের কার্যালয়ে রাষ্ট্রদূত তার সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন।

গুয়াহাটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এই সফরে আসামের রাজ্যপাল জগদীশ মুখী ও মেঘালয়ের রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com