দুর্নীতির মাধ্যমে পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদের উৎস গোপন করতে পরিবারের সদস্যদের নামেও সম্পদ রেখেছেন। অর্থ পাচার করে বিদেশেও প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের গোপন অনুসন্ধানে নাফিজ সরাফাতের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদক তাঁর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। একটি হলো পদ্মা ব্যাংকে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকটি থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। অন্যটি হলো অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন।
নাফিজ সরাফাতের বাড়ি গোপালগঞ্জে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় তাঁর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, অনুসন্ধানকালে দুদক তাঁর নামে-বেনামে অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্য পেয়েছে। ওই সব সম্পদের বৈধ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। গোপালগঞ্জ পৌরসভার মিয়াপাড়ায় ২০১ নম্বর গ্রেভিয়ার্ড রোডে নাফিজ সরাফাতের মায়ের নামে পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটি নির্মাণে অর্থ খরচ করেছেন নাফিজ। ভবনটিতে পদ্মা ব্যাংকের শাখা অফিস রয়েছে। ঢাকার ২২, বীরউত্তম মীর শওকত সড়কের ক্রিস্টাল প্যালেসের তৃতীয় তলায় ৪ হাজার ৩৪৫ বর্গফুট অংশের মালিক তিনি। ঢাকায় কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে যে ভবনটিতে পদ্মা ব্যাংকের শাখা অফিস আছে, সেটির মালিক নাফিজ সরাফাত। তাঁর আছে ঢাকার বসুন্ধরায় ই ব্লকের ই/১২ নম্বর ফ্ল্যাট, গ্রিন রোডের পান্থ গ্রিন বাসায় ফ্ল্যাট, ঢাকার বারিধারায় পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজের অফিসের ফ্ল্যাট।
নাফিজ সরাফাতের স্ত্রী আঞ্জুমান আরার নামে আছে গুলশান-২ নম্বরে রোড-১০২ ও ১০৩-এ বাড়ি। নিকুঞ্জ-১-এর ২/এ নম্বর রোডে ৩ নম্বর বাড়ি, নিকুঞ্জ-১-এর ৩ নম্বর রোডে ৪৩ নম্বর প্লট, বারিধারায় মরিয়ম টাওয়ারে শাশুড়ি ও শ্যালকের নামে ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন নাফিজ সরাফাত। এ ছাড়া নিকুঞ্জ-২-এ ভাইয়ের নামে ক্রয় করেছেন একটি ফ্ল্যাট। তাঁর ভাই হাবিবুল্লাহ সরাফত ও বোন ডালিয়া চৌধুরী নাফিজ সরাফাত কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির পর্ষদ সদস্য। এসবের জন্যও অর্থায়ন করেছেন তিনি। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি পর্ষদ সদস্য ১৯ বছর বয়স থেকে ছেলে চৌধুরী রাহিব সরাফাত ও ১২ বছর বয়স থেকে মেয়ে চৌধুরী জাহরা সরাফাত।
স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মালিক আঞ্জুমান আরা। ঢাকার মগবাজারের সেনটিয়েল ট্রাস্টি অ্যান্ড কাস্টডিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের মালিক তিনি। অল্টারনেট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের ইনডিপেনডেন্ট পরিচালক নাফিজ সরাফাত। আরগাস ক্রেডিটরেটিং সার্ভিস বিডিবিএল বিল্ডিংয়ের মালিক তিনি। তাঁর রয়েছে পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম, রেস পোর্টফোলিও ইস্যু ম্যানেজমেন্ট, রেস ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট কোম্পানি, স্ট্র্যাটেজিক ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট, ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ারের মালিক তিনি।
নাফিজ সরাফাত রিলায়েন্স গ্রুপের আটটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও আমানত শাহ গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হযরত আমানত শাহ স্পিনিং মিলস, হযরত আমানত শাহ সিকিউরিটিজ, আমানত শাহ ওয়েভিং প্রসেসিং, আমানত শাহ লুঙ্গি এবং আমানত শাহ ফেব্রিকসের নামে চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার/আইন কর্মকর্তা নূরুল ইসলামের নামে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন, যা গোপন রাখা হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, নাফিজ সরাফাতের নামে কানাডার টরন্টোতে তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।