বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন

দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের মালিক সাবেক এমপি বাবু

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু। ক্ষমতার অপব্যবহার, টেন্ডারবাজি, অবৈধ দখল, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। তার পরিবারের সদস্যরা এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তাদের বিপুল সম্পদ। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরেও ডুপ্লেক্স বাড়ি, বাণিজ্যিক প্লট ও কোম্পানি রয়েছে বাবুর। লন্ডনেও এক আত্মীয়ের নামে ফ্ল্যাট কিনেছেন। দেশে-বিদেশে তার যে সম্পদ রয়েছে, সেগুলো বৈধ আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এ তথ্য।

এর আগে নজরুল ইসলাম বাবুকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে দুই দফা অব্যাহতি দেওয়া হলেও ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে দুদক।

বাবু এক সময় জাতীয় পার্টির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার পতনের পর যোগ দেন ছাত্রলীগে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর পেয়ে যান কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদ। এরপর ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। এরপরই তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাড়তে থাকে।

সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় তার বাড়ি-প্লট এবং স্ত্রী সায়মা ইসলাম ইভার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকার তথ্য পেয়েছে দুদক। চারবারের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে ২০১৯ সাল থেকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে আসছিল দুদক। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়ে দুইবার। নানাভাবে তদবির করে তিনি সেই অভিযোগের অনুসন্ধান থামিয়ে দেন। একই বছর দুদক ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে। এতে নজরুল ইসলাম বাবু ও তার স্ত্রী সায়মা ইসলামের নাম আসে। দুদক এই অভিযোগ অনুসন্ধান করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। অনুসন্ধানে দুদক বাবু ও তার পরিবারের বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পেয়েছে, যা তার বৈধ আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

রাজধানীতে চার ফ্ল্যাট ॥ দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নজরুল ইসলাম বাবুর রাজধানীর গুলশান-১ এর ১৫ নম্বর রোডের ১ নম্বর প্লটের র‌্যাংগস ওয়াটার ফ্রন্ট ভবনে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তিন হাজার ২৩৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটির দাম আট কোটি টাকা। তবে বাবু তার হিসাব বিবরণীতে এটির দাম দেখিয়েছেন ৮১ লাখ টাকা। এ ছাড়া সিদ্ধেশ্বরীর মনোয়ারা হাসপাতালের পাশে হাফিজ টাওয়ারে তার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যেখানে থাকেন তার বোন শিরিনা আক্তার। দুই হাজার ১৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটির দাম দুই কোটি ৭২ লাখ টাকা। শান্তিনগরের ৮৮ ইস্টার্ন পেয়ার ভবনেও তার একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যার দাম অন্তত এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। আর শেরেবাংলা নগরের ১৬৩, পূর্ব রাজাবাজারে বাবুর আছে আরও একটি ফ্ল্যাট। বাবুর ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত এক ব্যক্তির নামে কেনা হয়েছে ফ্ল্যাটটি। এ ছাড়া ঢাকার পূর্বাচলে রাজউকের ১০ কাঠার প্লটের মালিক নজরুল ইসলাম বাবু, যার দাম ৪ কোটি টাকা।

শেয়ার ও একাধিক দোকান ॥ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তার কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানা যায়। গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সে স্টার ট্রেডিং করপোরেশনে তার বিনিয়োগ রয়েছে ৯৫ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স-২ এ বাবুর আছে চারটি দোকান (৮/১২, ৮/৪, ৮/৩৪ ও ৮/৩৯)। এ ছাড়া এই শপিং কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ডে অবস্থিত চারটি গোডাউনের মালিকও তিনি। গুলশান সিটি করপোরেশন মার্কেটে সাতটি দোকান আছে বাবুর।

সোনারগাঁ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি ॥ নজরুল ইসলাম বাবু ও তার স্ত্রী ঢাকার গ্রিনরোডে অবস্থিত সোনারগাঁ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি। এই ইউনিভার্সিটিতে তাদের শেয়ার ২৫ শতাংশ।

নারায়ণগঞ্জে দুই ডুপ্লেক্স বাড়ি ॥ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার সদরে কৃষ্ণপুরা মৌজায় নজরুল ইসলাম বাবুর একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে। যার দাম দুই কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া বাজবী মৌজায় তার আরেকটি ডুপ্লেক্স বাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে। এটি তার পৈতৃক বাড়ি। আগের টিনশেড বাড়ি ভেঙে তিনি এটি বানিয়েছেন। আট শতাংশ জমির ওপর নির্মিত এই বাড়ির দাম এক কোটি ৭৩ লাখ টাকা। দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ অনুযায়ী, আড়াইহাজারের দুপতারা এলাকায় সূচনা সাইজিং মিলসের মালিক নজরুল ইসলাম বাবু। এই প্রতিষ্ঠানে তার বিনিয়োগ তিন কোটি টাকা।

দুদক বলছে, নরসিংদীর তিনগাঁও মৌজায় বাবুর ১৪১.৩৭ শতাংশ জমি রয়েছে যার দাম দুই কোটি ৮১ লাখ টাকা। তবে, দুদকে দেওয়া হিসাবে তিনি এই জমির দাম দেখান ৯৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা। একই মৌজায় তার ২১৭.৩০ শতাংশ জমির দাম চার কোটি ১৫ লাখ টাকা। অথচ দুদকে দেওয়া হিসাবে এটির দাম ৭১ লাখ ৮০ হাজার টাকা উল্লেখ করেন বাবু। এখানে তার আরেকটি ৩৩.১৩ শতাংশ জমি রয়েছে, যার দাম এক কোটি ৫১ লাখ টাকা। বাবুর হিসাবে এটির দাম ২২ লাখ এক হাজার টাকা।

বিদেশে একাধিক প্লট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ॥ দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী কুয়ালালামপুরের ৯৭ পার্সিয়ারাও দোতা, দোতা নুসানতারা শ্রী হাউতোমাস এলাকায় একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে নজরুল ইসলাম বাবুর। পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার ৩১৩ য়েশিয়ান রিঙ্গিত (অন্তত এক কোটি ১১ লাখ টাকা) দিয়ে বাড়িটি কেনা হয়েছে। কুয়ালালামপুরের পেরিনডাসট্রেইন, নিলাই-২, সেরেমবানে নজরুল ইসলাম বাবু ও তার স্ত্রী সায়মা আফরোজ ইভার নামে আছে একটি বাণিজ্যিক প্লট। চার লাখ ৩৫ হাজার ১৫৬ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (এক কোটি দুই লাখ ৬৫ হাজার ৩৩০ টাকা) দিয়ে প্লটটি কেনা হয়। এ ছাড়া কুয়ালালামপুরের জালান ডি আইএমবিআই ঠিকানায় মাজু মুহিব্বাহ নামে নজরুল ইসলাম বাবুর একটি কোম্পানি আছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

ভ্রমন সম্পর্কিত সকল নিউজ এবং সব ধরনের তথ্য সবার আগে পেতে, আমাদের সাথে থাকুন এবং আমাদেরকে ফলো করে রাখুন।

© All rights reserved © 2020 cholojaai.net
Theme Customized By ThemesBazar.Com