আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার দূতাবাসগুলোতে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অথরাইজেশন অনুরোধের মাত্রা সম্প্রতি বেড়েছে। এ ধরনের পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে এসব দেশের প্রবাসীরা দেশের সম্পদ বিক্রি করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে নগদ ও সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। পাচার হওয়া এসব অর্থ দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ৫ আগষ্টের পর থেকে বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার দূতাবাসগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অথরাইজেশনের অনুরোধ বেড়েছে। মূলত এর মাধ্যমে দেশে থাকা সম্পত্তি বিক্রি করে হুন্ডির মাধ্যমে স্থানান্তরের জন্য করা হয়ে থাকে। যেহেতু বাংলাদেশের অ্যাকাউন্টগুলো নন-কনভার্টিবল বিধায় বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এই ধরনের অনুরোধ বেড়েছে বলে বৈঠকে জানিয়েছিলেন সদ্য চুক্তি বাতিল হওয়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এর বাইরেও পাচারের অর্থ উদ্ধারে ১০টি দেশের সঙ্গে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স (এমএলএ) খসড়া চুক্তিপত্র পাঠানো হয়েছে বলেও বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টাকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমএলএ খসড়া চুক্তি পাঠানো দেশগুলো হলো কানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, হংকং-চায়না। একই সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়গুলো মনিটরিং করতে একটি লিগ্যাল উইং গঠন করা হয়েছে বলেও বৈঠকে জানানো হয়েছে।
বৈঠকে অর্থ পাচার রোধের পাশাপাশি এরই মধ্যে পাচার হয়ে যাওয়া বড় অন্তত ১২টি কেসের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের মাধ্যমে অর্থ উদ্ধার করতে পারলে অর্থ পাচার ও দুর্নীতি কমে আসবে বলে মত প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বিদেশের বিভিন্ন অর্থ পাচারের কেসের উদাহরণ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশেও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) বা দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বয়ক সংস্থা হিসেবে কাজ করতে পারেও বলে মতামত দেন গভর্নর।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে হওয়া এই বৈঠকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নগদ লেনদেন রিপোর্ট (সিটিআর) ও সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) বিশ্লেষণে জোরদারপূর্বক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বিএফআইইউ। এ ছাড়া পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমএলএ চুক্তির কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি অর্থ পাচার সংক্রান্ত মামলা সফলভাবে শেষ করবে দুদক। এ ছাড়া দুদক ও বাংলাদেশ পুলিশের সিআইডি চলমান অর্থ পাচারের মামলা ছাড়াও আগের মামলাগুলো যৌথভাবে তদন্ত করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই বৈঠকে। গত ১৪ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উদ্যোগে হওয়া বৈঠকে অর্থ পাচার ও জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই বৈঠকে।
সম্পত্তি বিক্রির টাকা বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে বিএফআইউর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে দেশে সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা না থাকায় পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে আইনের পরিবর্তন আনতে হবে বলেও মনে করেন বিএফআইইউর এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।