দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে

আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে শ্লথ গতির কারণে প্রতিনিয়ত কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গতকাল বুধবার (১০ মে) রিজার্ভ ২.২৪ বিলিয়ন ডলার কমে ৪১.৯৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

মঙ্গলবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) প্রায় ২.২৪ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর এমন হয়েছে। এর আগের দিন (৯ মে) রিজার্ভ ছিল ৪৪ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানের এ রিজার্ভ দিয়ে ছয় মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। যদিও গত আগস্টে আট মাসের আমদানি দায় মেটানোর মতো রিজার্ভ ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে এসেছে। যদিও এর আগে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এভাবে কমার মূল কারণ আমদানি ব্যয়ে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্স কমা। গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে আমদানি ব্যয় ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলার হয়েছে। রপ্তানি ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৬৬২ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে এক হাজার ৫৩০ কোটি ডলারে নেমেছে। এতে করে চলতি হিসাবে রেকর্ড এক হাজার ৪০৭ কোটি ডলারের ঘাটতি হয়েছে।

বুধবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের সম্পর্ক রয়েছে এবং প্রকল্পটি এখনই বাস্তবায়ন জরুরি নয়, সেসব প্রকল্প ছয় মাস বা আরও পরে বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

এছাড়াও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের অনুমোদন না দিতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত কয়েক বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার; ২০১৯ সালে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬ বিলিয়ন ডলারে।

মহামারিকালে উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের ফলে, ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। এরপর থেকে রিজার্ভ হ্রাস পাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে, কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ওই দেশের ৩-৬ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান হলে তা গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবে। বাংলাদেশ সব সময়ই ৬ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ সংরক্ষণের নীতি বাস্তবায়ন করছে।

এদিকে ডলার খরচে সতর্কতার পাশাপাশি আমদানি পরিশোধে কিংবা ঋণ পরিশোধে কেউ যেন ব্যর্থ না হয় সে দিকে নজর রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে ৪.৯৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।

এছাড়া রেমিট্যান্সে প্রবাহ বাড়াতে প্রণোদনার হার বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে নানা উদ্যোগও চলমান।

ট্রেডার বাংলাদেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d bloggers like this: