দুবাই ভিজিট ভিসা কবে খুলবে? দুবাই ভিজিট ভিসা খরচ কত? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন করেন বাংলাদেশ বা ইন্ডিয়া থেকে যারা দুবাই যোতে চান তারা।
এ সকল প্রশ্নের চুলচেরা বিশ্লেষণ নিয়েই আজকের লেখা। শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি দুবাই ভ্রমণ ভিসা থেকে শুরু করে
উচ্চবিত্তদের অবকাশ যাপন বা চাকুরির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্থান এর সবচেয়ে বড় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত দুবাই।
বর্তমানে কর্মহীন ও স্বল্প আয়ের মানুষগুলো ভ্রমণ ভিসা নিয়ে দুবাই পাড়ি দিচ্ছেন মূলত অবৈধভাবে অবস্থান করে কাজের উদ্দেশ্যে।
দুবাই আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মধ্যে একটি প্রদেশ। এটি পারস্য উপসাগরের দক্ষিণ তীরে আরব উপদ্বীপে অবস্হিত একটি শহর।
মূলত দুবাইয়ের প্রধান আয় হচ্ছে পর্যটন, রিয়েল এস্টেট এবং অর্থনৈতিক সেবা।
বর্তমানে দুবাই ভিজিট ভিসা চালু রয়েছে। তবে ভিজিট ভিসা প্রাপ্তি সহজ হওয়ার সুযোগে প্রতারণায় নেমে পড়ে একশ্রেণীর দালাল চক্র।
মানুষকে উন্নত চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিনই ওয়ার্ক ভিসার পরিবর্তে ভিজিট ভিসার মাধ্যমে ইউএইতে পাঠানো হচ্ছে দুবাই।
দুবাই ভ্রমণ ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান নিউ ডিসকভারি ট্যুরস অ্যান্ড লজিস্টিকসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার
আলম ভূইয়া বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশী উচ্চবিত্তরা নিয়মিত যেসব দেশে চিকিৎসা ও অবকাশ যাপনে যেতেন তারাই এখন
বিকল্প হিসেবে দুবাইয়ে যাচ্ছেন। তবে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার তুলনায় দুবাইয়ে চিকিৎসা ব্যয়বহুল।
তবে এমন যাত্রীও ভিজিট ভিসা নিয়ে যাচ্ছেন যারা এর আগে কোনো দেশ ভ্রমণ করে নি।
স্বাভাবিক সময়ে ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশী রোগী চিকিৎসার জন্য পারি জমায়।
এক প্রতিবেদেনে জানা যায় ২০১৭ সালেই মেডিকেল ভিসায় ভারতে চিকিৎসা নিয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৭৫১ জন বাংলাদেশী রোগী।
মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) বা দুবাই কর্মী প্রেরণে এক রকম স্থবিরতা চলছে ২০১২ সাল থেকে।
গৃহকর্মী ছাড়া দেশটিতে বৈধ পথে এখন কাজের ভিসা নেই বললেই চলে। এর বদলে অনেকেই ভিজিট ভিসা নিয়ে দুবাই যাচ্ছেন। এবং সেখানে গিয়ে
বিভিন্নভাবে চাকরি যোগাড় করে নিচ্ছেন। আবার অনেকে বিপদেও পড়ছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশীদের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস মেয়াদি ভিজিট ভিসা চালু রেখেছে দুবাই। বিবেচ্য যে এ ভিসায় কাজের অনুমতি থাকে না।
মেয়াদ শেষে দেশটিতে অবস্থান করলেই আটক ও জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে গত এপ্রিলের শেষ ভাগে ভিজিট ভিসায় এসে আটকে পড়াদের জন্য ভিসার শর্তে সাময়িক ছাড় দেয় দুবাই সরকার।
এ সময় দেশটিতে অবস্থানকারীদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভিজিট ভিসায় আসা প্রবাসীরাও বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মী হিসেবে সাময়িকভাবে ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ পান। এ বিষয়টিকেই প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে কিছু অসাধু ট্রাভেল এজিন্সি।
বিদেশে জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বায়রা এর মাধ্যমে জানা যায়, দুবাই ভিজিট ভিসা খরচ হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
চাকরির আশায় ভিজিট ভিসা নিয়ে যারা দুবাই যাচ্ছে, তাদের সব মিলিয়ে খরচ করতে হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা।
জানা যায়, একশ্রেণীর অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি, দালাল চক্র ও বিমানবন্দরের কিছু কর্মচারী মিলে এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট এর নামে দুবাই টুরিস্ট ভিসা র ব্যবস্থা করছে।
এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট এর জন্য ৫০-৭০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে। বাকি অর্থ খরচ হয় ভিসা, বিমান টিকেট ও অন্যান্য খাতে।
ভিজিট ভিসায় গিয়ে কাজের জন্য থেকে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন দুবাইর বাংলাদেশ দূতাবাস। সম্প্রতি আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বর্তমানে ভিজিট ভিসায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসে কাজের ভিসায় পরিবর্তনের সুযোগ নেই। তাই চাকরি বা কাজের উদ্দেশ্যে ভিজিট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে দুবাইতে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস। দুতাবাস থেকে কোনো রিক্রুটিং এজেন্ট বা দালালের প্ররোচনায় প্রলুব্ধ না হওয়ার জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। তবে অতি লোভে পড়ে অনেই এটাকে আমলে নিচ্ছেন না।
কেবল প্রকৃত পর্যটকরা ভিজিট ভিসায় ইউএইতে ভ্রমণ করতে পারেন উল্লেখ করে দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ভিজিট ভিসায় যেতে হলে উড়োজাহাজের ফিরতি টিকিট, হোটেল রিজারভেশন অথবা যারা স্বজনের স্পন্সরে গেছে তাদের প্রকৃত তথ্য এবং ভ্রমণকালীন খরচের জন্য কমপক্ষে ২ হাজার দিরহাম সঙ্গে রাখতে হবে।
এর পরই ইউএই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত ট্যুরিস্ট নয় বলে সন্দেহ হলে তাকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। আর ভিজিট ভিসায় গিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফেরত না গেলে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রথম দিন ২০০ দিরহাম এবং পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১০০ দিরহাম হারে জরিমানা দিতে হবে।
দুবাইতে বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়া থেকে বৈধভাবে নতুন কর্মী যেমন যেতে পারছেন না, তেমনি কাজ হারিয়ে প্রতিনিয়ত ফিরে আসতে হয়েছে অনেককেই।
গত বছর এপ্রিল থেকে বিভিন্ন দেশের ফেরত আসা কর্মীদের পরিসংখ্যান বলছে, কভিড-১৯ মহামারীতে সৃষ্ট সংকটে ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীদের অর্ধেকের বেশি এসেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে।