কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের জগন্নাথপুর এলাকার আরিফ আহমেদ (২৪) দুই বছর আগে ইতালিতে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। কিন্তু ইতালি পাড়ি দিতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। লিবিয়ায় একাধিক দালাল চক্রের হাতে বন্দী হয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তিনি। এ সময় তাঁর পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় সাড়ে ১৮ লাখ আদায় করে বিভিন্ন চক্র। কিন্তু আরিফ এখনো মুক্তি পাননি।
সম্প্রতি আরিফের নির্যাতন–ক্ষতচিহ্নের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ভিডিওতে আরিফের বাঁ চোখে গুরুতর আঘাত এবং হাতে-পায়ে জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। এ সময় আরিফ কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে মুক্ত করার আকুতি জানাচ্ছিলেন।
আরিফের বড় ভাই হোসাইন আহমেদ ইতালিতে থাকেন। কয়েক দিন আগে দেশে ফেরেন। ভাইয়ের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, দালাল চক্র এখন নতুন করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করছে। না দিতে পারলে আরিফকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
আরিফের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরিফের বাবা বাবুল মিয়া রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত একজন কর্মচারী। যেকোনো মূল্যে ইতালিতে যেতে চেয়েছিলেন আরিফ। এ অবস্থায় দুই বছর আগে ফারুক মিয়া নামের স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে তাঁকে ইতালিতে পাঠানোর উদ্যোগ নেন বাবুল মিয়া। কথা ছিল, অবৈধ পথে ইতালিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন ফারুক। বিনিময়ে দিতে হবে ১২ লাখ টাকা। প্রথমে সাড়ে চার লাখ নগদ এবং পৌঁছানোর পর বাকি টাকা পরিশোধ করতে হবে। কথামতো সাড়ে চার লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।
স্বজনেরা জানান, দালাল ফারুকের সহযোগী সজীব মিয়া লিবিয়ায় থাকেন। আরিফ লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর সজীব খবর দেন, সাগর পাড়ি দিতে হলে আরও তিন লাখ টাকা লাগবে। কথামতো টাকা পাঠানো হলেও আরিফকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়নি। এরই মধ্যে আরিফ একটি দালাল চক্রের হাতে বন্দী হন। টাকার বিনিময়ে সেখান থেকে তাঁকে মুক্ত করা হয়। কয়েক দিন পর আবার অন্য একটি চক্র তাঁকে আটক করে মুক্তিপণ আদায় করে। এখন আরিফ নতুন করে একটি চক্রের হাতে বন্দী আছেন। তারা ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে আরিফকে প্রায় প্রতিদিন শারীরিক নির্যাতন করছে। কিছুদিন আগে আরিফ টাকা চেয়ে হোয়াটসঅ্যাপে পরিবারের সদস্যদের কাছে কল দেন। তখনই নির্যাতনের চিহ্নটি পরিবারের নজরে আসে। পরে তা ফেসবুকে প্রকাশিত হয়।
আরিফের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছেলের নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে মা–বাবা শয্যাশায়ী। আরিফের বাবা বাবুল মিয়া বলেন, ‘আর বিদেশে যাওয়ার দরকার নাই। আমার ছেলেরে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচান।’
বাবুল মিয়ার শঙ্কা, টাকা পাঠাতে না পারলে চক্রের সদস্যরা ছেলেকে মেরে ফেলবে। আবার তাঁর পক্ষে এত টাকা জোগাড় করাও সম্ভব নয়। ছেলের এমন অবস্থার জন্য তিনি দালাল ফারুক ও সজীবকে দায়ী করেন।
মুঠোফোন বন্ধ থাকায় অভিযুক্ত ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বিদেশে থাকায় সজীবের প্রতিক্রিয়াও জানা যায়নি। এ বিষয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, এ ঘটনায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।